দুই সেশনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি দুই উইকেট

‘প্রথম ঘণ্টা বোলারদের দাও, বাকি দিনটা নিজেদের করে নাও’, টেস্ট ক্রিকেটে বহু পুরনো এক কথা এটি। নিউ জিল্যান্ড হাঁটল যেন সেই পথেই। টম ল্যাথামকে শুরুতে হারানোর পর উইল ইয়াং ও ডেভন কনওয়ে মাথা গুঁজে পড়ে রইলেন প্রথম ঘণ্টা। দিনটা নিজেদের করে নেওয়ার আয়োজনও হয়ে গেল তাতে। ইয়াং পরে আউট হলেও সেই কনওয়ে এখন সেঞ্চুরির দুয়ারে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2022, 00:30 AM
Updated : 1 Jan 2022, 03:08 AM

দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে শুরুটা দারুণ করেও তা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ইয়াং ও কনওয়ের ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে নিউ জিল্যান্ড গড়ে নিয়েছে শক্ত ভিত। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে চা বিরতিতে নিউ জিল্যান্ডের রান ২ উইকেটে ১৪৭।

৮৮ রান নিয়ে অপরাজিত কনওয়ে। ইয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে তার জুটি ১৩৮ রানের। দৃঢ়চেতা ব্যাটিংয়ে ৫২ রান করে ইয়াং বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দিয়েছেন রান আউটে।

প্রথম সেশনে ল্যাথাম আর দ্বিতীয় সেশনে ইয়াং, টস জিতে বোলিং নিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তি দুই সেশনে স্রেফ দুটি উইকেটই।

উইকেটে অনুমিতভাবেই সবুজের ছোঁয়া। তবে টিভিতে ম্যাচপূর্ব আলোচনায় ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, গ্রান্ট এলিয়ট, মার্ক রিচার্ডসনরা বারবারই বললেন, ‘নিউ জিল্যান্ডে যতটা সবুজ উইকেট থাকে, ততটা নয় এই উইকেট।’ সেই ২২ গজে নতুন বলে দারুণ বোলিং উপহার দেন তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।

কিন্তু ইবাদত বোলিংয়ে আসার পর আলগা হয়ে যায় চাপ। পরে তাসকিন-শরিফুলও আর ততটা ভালো করতে পারেননি। প্রভাব রাখতে পারেননি একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও।

বে ওভালে শনিবার টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেন, উইকেটের আর্দ্রতা কাজে লাগাতে চান তারা। নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক ল্যাথাম জানান, টস জিতলে বোলিং করতেন তারাও।

তাসকিন ও শরিফুলের সঙ্গে ইবাদত হোসেন চৌধুরিকে নিয়ে পেস আক্রমণ সাজায় বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ বোলিং করেও বিস্ময়করভাবে সুযোগ পাননি আবু জায়েদ চৌধুরি।

তাসকিন প্রথম ওভার থেকেই আদায় করে নেন সুইং। শরিফুলও ছন্দ পেতে সময় নেননি একটুও। চোট কাটিয়ে টেস্ট দলে ফেরা তরুণ বাঁহাতি পেসারই পান প্রথম সাফল্য। সেই উইকেটে বড় অবদান অবশ্য লিটন কুমার দাসেরও।

শরিফুলের ভেতরে ঢোকা বল ল্যাথামের ব্যাটের ভেতরের কানা ছুঁয়ে প্যাডে লেগে যায় উইকেটের পেছনে। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন। কেন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব পাওয়া ল্যাথাম ফেরেন ১ রানে।

প্রথম ৮ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ছিল স্রেফ ২। দুই পাশ থেকে ৪ ওভার করে বোলিংয়ে শরিফুল ও তাসকিন দেন কেবল ১ রান করে।

প্রথম ঘণ্টায় দাঁতে দাঁত চেপে উইকেট আঁকড়ে রেখে দ্বিতীয় ঘণ্টায় সুফল পান ইয়াং ও কনওয়ে। প্রথম ঘণ্টায় ১৩ ওভারে রান ছিল কেবল ১৫। দ্বিতীয় ঘণ্টায় ১৪ ওভারে আসে ৫১ রান।

শরিফুলকে চার মেরে ইয়াং প্রথম রানের দেখা পান ২২ বল খেলে। অস্বস্তিতে শুরু করা কনওয়ের রান ছিল ২২ বলে ২। পরে দুই ব্যাটসম্যানই খেলেন দারুণ কয়েকটি শট। বিশেষ করে কনওয়ে খেলেন দারুণ কয়েকটি ড্রাইভ।

প্রথম ঘণ্টায় আঁটসাঁট বোলিং করা বাংলাদেশের পেসাররা পরে আলগা বল করেন কিছু। বিশেষ করে ইবাদত ধারাবাহিক হতে না পারায় সরে যায় চাপ। লাঞ্চ পর্যন্ত আর কোনো উইকেট পড়েনি।

লাঞ্চের পর কনওয়ে ও ইয়াং এগিয়ে যেতে থাকেন আরও সাবলিল ব্যাটিংয়ে। বিস্ময়করভাবে, লাঞ্চের পর এক প্রান্ত থেকে অফ স্পিনার মিরাজকে টানা ১১ ওভার বোলিং করান অধিনায়ক মুমিনুল। এই অফ স্পিনার লাইন-লেংথ রাখেন ভালোই, কিন্তু ব্যাটসম্যানদের বেগ দিতে পারেননি খুব একটা। বরং ব্যাটিং সহজ হয়ে ওঠে তাদের জন্য।

মিরাজের শর্ট বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে ১৩১ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন চোট কাটিয়ে দলে ফেরা কনওয়ে। ওই ওভারে মারেন আরও দুটি বাউন্ডারি। ইয়াংয়ের ফিফটি আসে ১৩১ বলে।

জুটি ভাঙার কোনো পথই যখন পাচ্ছে না বাংলাদেশ, তখনই উইকেট ধরা দেয় ইয়াংয়ের ভুলে। দ্রুত একটি সিঙ্গেল নিতে গিয়ে তিনি সাড়া পাননি কনওয়েল, ফেরার চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান সামান্য ব্যবধানে। নাজমুল হোসেন শান্তর থ্রোয়ে বেলস ভাঙেন কিপার লিটন।

তুমুল করতালির মধ্যে এরপর ক্রিজে যান শেষ টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা রস টেইলর। চা বিরতির পর তিনি আবার শুরু করবেন অভিযান। কনওয়ে ছুটবেন শতরানের আশায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: (চা বিরতি পর্যন্ত)

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস:  ৫৪ ওভারে ১৪৭/২ (ল্যাথাম ১, ইয়াং ৫২, কনওয়ে ৮৮*, টেইলর ৪*; তাসকিন ১৪-৪-৪০-০, শরিফুল ১৪-৫-৩৫-১, ইবাদত ১২-৩-৩৫-০, মিরাজ ১৪-৫-৩৭-০)।