চতুর্থ দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ৭৬। তিন চারে ২৩ রানে খেলছেন সাকিব আল হাসান। ১০ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি তাইজুল ইসলাম।
ফলোঅন এড়াতে এখনও ২৫ রান চাই স্বাগতিকদের। সাকিব টিকে থাকায় পাকিস্তানকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠানোর আশা হয়ত করা যেতে পারে। তবে ম্যাচ বাঁচাতে সেটা কতটা ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে সংশয় বাড়িয়েছে মঙ্গলবারের শেষ বেলার ব্যাটিং।
বাংলাদেশের সাত উইকেটের ছয়টিই নিয়েছেন অফ স্পিনার সাজিদ, ৩৫ রানে। অন্যটি রান আউট। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের হয়ে কোনো ইনিংসে এর চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল দানিশ কানেরিয়ার। ২০০২ সালে ৭৭ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন এই লেগ স্পিনার, ঢাকায়।
বাবর আজম, আজহার আলি, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ফাওয়াদ আলমের ফিফটিতে ৪ উইকেটে ৩০০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। এরপর স্রেফ ২৬ ওভার ব্যাট করেই অলআউট হতে বসেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের উল্টো পথে যাওয়ার শুরু মাহমুদুল হাসান জয়ের বিদায়ে। যার বদলে মিরপুরে অভিষক হলো, সেই সাইফ হাসানের সঙ্গে পরিসংখ্যানের একটা পাতায় জায়গা পেলেন মাহমুদুল। টেস্টে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অভিষেকে শূন্য কেবল এই দুই জনের।
নড়বড়ে শুরু করা বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেয় মুমিনুলের আত্মঘাতী রান আউট। ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেলের চেষ্টায় সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি জায়গায়। হাসান আলির সরাসরি থ্রো ফেলে দেয় বেলস। টেস্টে তিনবার রান আউট হলেন মুমিনুল। তিনবারই মিরপুরে।
চা-বিরতির আগে সেটাই ছিল শেষ ওভার। দ্বিতীয় সেশনে ১০.১ ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশের অবস্থা আরও সঙ্গীন হয় তৃতীয় সেশনে।
এক দিকে নিয়মিত পড়ছিল উইকেট, আরেক দিকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত খেলছিলেন শট। শুধু যে শট খেলছিলেন তা নয়, কী শট খেলবেন সেটাও যেন আগে থেকে ঠিকই করে রেখেছিলেন তারা। অথচ তখন পরিস্থিতির দাবি ছিল, ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিং, টিকে থাকার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দেখানোর।
পাকিস্তানের একটা রিভিউ থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া মুশফিকুর রহিম স্লগ করতে গিয়ে বিলিয়ে আসেন উইকেট। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় খুবই দৃষ্টিকটু এক শট। বিস্ময়করভাবে সেই ওভারেই ওই একই শটে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলেন লিটন দাস।
নুমান আলির বলে কট বিহাইন্ড হয়ে অনেকটা মরিয়া চেষ্টা হিসেবে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ভাগ্য ভালো, সেটি ছিল ‘নো’ বল। তাই বেঁচে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। নয়তো ফিরে যেতে হতো। বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়েছিল।
মুশফিকের আউট থেকেও কিছু শেখেননি লিটন। বেরিয়ে এসে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে শট খেলার চেষ্টায় এই কিপার-ব্যাটসম্যান দেন ফিরতি ক্যাচ।
বারবার কোনোমতে বেঁচে যাওয়া শান্ত শেষ পর্যন্ত থামেন এলবিডব্লিউ হয়ে। তাকে বিদায় করে ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান সাজিদ। ৫০ বলে তিন চারে ৩০ রান করে আউট হন শান্ত।
আটে নেমে সাকিবকে সঙ্গ দিতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। সাজিদের অফ স্টাম্পের বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া বলে স্লগ সুইপের মতো করার চেষ্টা করেন তিনি। ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। বল টার্ন করে ছোবল দেয় স্টাম্পে।
ওই আউটে কতটা ক্ষেপে গিয়েছিলেন সাকিব, সেটা বলে দিচ্ছিল তার প্রতিক্রিয়া। তবে ঠাণ্ডা মাথাতেই তাইজুলকে নিয়ে দিনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
মিরপুর টেস্টে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনা বাংলাদেশের সামনে এখন ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই। চার দিনের সম্ভাব্য ৩৬০ ওভারের মধ্যে স্রেফ ১২৬.৩ ওভার খেলা হওয়ার পরও দ্বিতীয় টেস্টে তারা হারের শঙ্কায়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩০০/৪ (ডি.)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৬ ওভারে ৭৬/৭ (সাদমান ৩, মাহমুদুল ০, শান্ত ৩০, মুমিনুল ১, মুশফিক ৫, লিটন ৬, সাকিব ২৩*, মিরাজ ০, তাইজুল ০*; আফ্রিদি ১-০-১-০, নুমান ১২-২-৩৩-০, সাজিদ ১২-৩-৩৫-৬, বাবর ১-০-১-০)।