তাইজুলের মোহনীয় ফ্লাইটে রাঙা সকাল বাংলাদেশের

উইকেটে সহায়তা খুব বেশি নেই। তবে লাইন-লেংথ, ফ্লাইট আর গতি বৈচিত্র তো নিজের হাতে। অভিজ্ঞতা আর স্কিলের ঝুলি থেকে যেন সবই বের করলেন তাইজুল ইসলাম। এই বাঁহাতি স্পিনারের অসাধারণ বোলিংয়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2021, 06:34 AM
Updated : 28 Nov 2021, 06:34 AM

চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন সকালের সেশন দুর্দান্ত কাটল বাংলাদেশের। লাঞ্চ বিরতিতে পাকিস্তানের রান ৪ উইকেটে ২০৩।

সেশনে ৩১ ওভার খেলে পাকিস্তান তুলতে পারে কেবল ৫৮ রান। হারায় তারা ৪টি উইকেট।

৪ উইকেটের ৩টি নেন তাইজুল। ক্রিজের কার্যকর ব্যবহার ও জাদুকরি ফ্লাইট মিলিয়ে ধ্রুপদি বাঁহাতি স্পিনের দারুণ প্রদর্শনী মেলে ধরেন তিনি। সেশনের শুরু থেকে শেষ ওভার পর্যন্ত এক প্রান্তে টানা বোলিং করে তার স্পেল ১৬-৩-৩১-৩।

সেশনের আরেকটি উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

সকালটি বাংলাদেশের জন্য আরও উজ্জ্বল হতে পারত। কিন্তু হাতছাড়া হয় সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলিকে ফেরানো সুবর্ণ সুযোগ। তাইজুলের বলেই ১১৩ রানে তার ক্যাচ নিতে পারেননি স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্ত। খুব কঠিন সুযোগ তা ছিল না।

পাকিস্তানের ভরসা হয়ে টিকে আছেন আবিদ ১২৭ রান নিয়ে।

পাকিস্তান দিন শুরু করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৪৫ রান নিয়ে। বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল দ্রুত উইকেট। তাইজুল প্রথম ওভারেই এনে দেন দুটি!

প্রথম উইকেট অবশ্য ফ্লাইটের সৌজন্যে নয়, ধরা দেয় কিছুটা ব্যাটসম্যানের ভুলে। স্টাম্প সোজা বল জায়গা বানিয়ে কাট করার চেষ্টা করেন আব্দুল্লাহ শফিক। বল খানিকটা খাটো লেংথে পড়লেও স্কিড করে সোজা গিয়ে লাগে প্যাডে। অভিষিক্ত ওপেনারের ইনিংস থামে আগের দিনের ৫২ রানেই।

পরের ডেলিভারিটি দুর্দান্ত। ফ্লাইটেই আজহার আলিকে বিভ্রান্ত করেন তাইজুল। ফুল লেংথ বল লেগ-মিডলে পিচ করে সামান্য টার্ন করে ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে লাগে প্যাডে। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে উল্লাসে ভাসে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৮ বারের মতো শূন্য রানে ফেরেন আজহার।

আরেক প্রান্তে মুমিনুল বোলিংয়ে আনেন ইবাদত হোসেনকে। কোনো মুভমেন্ট তিনি আদায় করতে পারেননি উইকেট থেকে। তবে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে চেষ্টা করেন চাপ ধরে রাখার। সকালে তার স্পেল ছিল ৫-৩-৩-০।

প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তান তুলতে পারে কেবল ১০ রান।

রান আটকানোর আটকানোর কাজটি ইবাদত করতে পারলেও ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারেননি খুব একটা। সকালে কিছুটা আর্দ্রতা থাকা উইকেটে সুইং বোলার আবু জায়েদ চৌধুরি আরও ভালো বিকল্প হতে পারতেন কিনা, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে।

৯৩ রানে দিন শুরু করা আবিদকে সেঞ্চুরি ছুঁতে অপেক্ষা করতে হয় দশম ওভার পর্যন্ত। ২০৯ বলে তিনি পা রাখেন শতরানে। ১৫ টেস্টে ৩৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। প্রথম দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টেই।

আবিদকে ফেরানো না গেলেও আরেক প্রান্তে কাউকে থিতু হতে দেয়নি বাংলাদেশ। ইবাদতের প্রান্ত থেকে বোলিংয়ে এসে বাংলাদেশকে আরেকটি উইকেট এনে দেন মিরাজ। তার ফুল লেংথ বল সামনের পায়ে খেলার বদলে পেছনের পায়ে শরীরের থেকে দূরে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন বাবর আজম।

৪৬ বল খেলে ছন্দ না পাওয়া পাকিস্তান অধিনায়ক ফেরেন ১০ রানে।

অপ্রথাগত ব্যাটিং স্টান্সের ফাওয়াদ আলম টিকে গেলে হতে পারতেন বোলারদের মাথাব্যথার কারণ। সেটিও হতে দেননি তাইজুল। তার দারুণ ফ্লাইট ও লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বিদায় নেন ৮ রানে। ব্যাট-প্যাড ক্যাচের রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ।

একটু পরই আসে আবিদকে থামানোর সুযোগ। শান্ত তা নিতে না পারায় রয়ে যায় বাংলাদেশের বড় বাধা।

ম্যাচের আগের দুই দিনে প্রথম সেশনে উইকেট পড়েছে ১০টি। পরের চার সেশনে আসেনি কোনো উইকেট। বাংলাদেশের বোলারদের সামনে এবার সেই ধারা বদলানোর চ্যালেঞ্জ। ভরসা এখানে নতুন বল। সেশন শেষের এক ওভার আগে দ্বিতীয় নতুন বল নেন অধিনায়ক মুমিনুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: (তৃতীয় দিন লাঞ্চ পর্যন্ত)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৩০

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৪৫/০) ৮৮ ওভারে ২০৩/৪ (আবিদ ১২৭*, শফিক ৫২, আজহার ০, বাবর ১০, ফাওয়াদ ৮, রিজওয়ান ৫*; আবু জায়েদ ১০-০-৩০-০, ইবাদত ১৭-৬-৩৪-০, তাইজুল ৩৫-৮-৭০-৩, মিরাজ ২৩-৫-৫৬-১, মুমিনুল ৩-০-১২-০)।