এনামুলের ৫০০ উইকেট, মিরাজের স্পিনে খুলনার জয়

অপেক্ষা ছিল একটি উইকেটের। এনামুল হক জুনিয়র নিজের দ্বিতীয় ওভারেই পৌঁছে গেলেন কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে স্পর্শ করলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2021, 02:07 PM
Updated : 3 Nov 2021, 03:06 PM

জাতীয় ক্রিকেট লিগের তৃতীয় রাউন্ডের শেষ দিন বুধবার এই অর্জন ধরা দিয়েছে অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার এনামুলের ঝুলিতে। তার দল সিলেট বিভাগ অবশ্য প্রথম স্তরের ম্যাচটি ৬ উইকেটে হেরে গেছে রংপুর বিভাগের কাছে। 

প্রথম স্তরের আরেক ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ বোলিংয়ে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জিতেছে খুলনা বিভাগ। প্রথম ইনিংসে ২ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে মিরাজ নিয়েছেন ৬টি।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ২৮৫ রান নিয়ে শেষ দিনে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৯২ রানে অলআউট হয় স্বাগতিক দল। ১৪৭ রান নিয়ে দিন শুরু করে ক্যারিয়ার সেরা ১৭০ রানে অপরাজিত থাকেন অমিত হাসান। তার ৩৮৫ বলের ইনিংসটি গড়া ১৮টি চারে।

প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া সিলেট অমিতের ব্যাটেই মূলত রংপুরকে ১৪০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে। ম্যাচ সেরাও হন তিনিই। নাঈম ইসলামের অপরাজিত ফিফটিতে দিনের ঘণ্টা দেড়েক বাকি থাকতেই জিতে যায় রংপুর।

এনামুল ম্যাচটি খেলতে নেমেছিলেন ৪৯৬ উইকেট নিয়ে। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়ে এগিয়ে যান মাইলফলকের দিকে।

দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে জাহিদ জাবেদকে কট বিহাইন্ড করে ৫০০ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি। পরে উইকেট নেন আরেকটি, বোল্ড করে দেন আকবর আলীকে।

১১১ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর রংপুরের জয় নিয়ে ফেরেন নাঈম ও সোহরাওয়ার্দী শুভ। ৮০ বলে ৫ চারে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন নাঈম। ১৪ বলে ৩ ছক্কায় ২০ রান করেন সোহরাওয়ার্দী।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড আব্দুর রাজ্জাকের। বাঁহাতি এই স্পিনার ক্যারিয়ার শেষ করেন ১৩৭ ম্যাচে ৬৩৪ উইকেট নিয়ে।

রাজ্জাক ৫০০ ছুঁয়েছিলেন ১১৯ ম্যাচে। এনামুলের লাগল ১৩৬ ম্যাচ। বাংলাদেশের হয়ে ১৫টি টেস্ট খেলা ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের উইকেট সংখ্যা এখন ৫০১টি।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এনামুল ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ৩৪ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ৬ বার, দুটিই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এখানেও চূড়ায় সেই রাজ্জাক। ইনিংসে ৫ উইকেট তার ৪১ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ১১ বার।

তিন ম্যাচে রংপুরের এটি প্রথম জয়। সমান ম্যাচে সিলেটের দ্বিতীয় হার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট বিভাগ ১ম ইনিংস: ১১৩

রংপুর বিভাগ ১ম ইনিংস: ২৬৬

সিলেট বিভাগ ২য় ইনিংস: ১১৯.২ ওভারে ২৯২ (আগের দিন ২৫৮/৭) (অমিত ১৭০*, রেজাউর ১৩, তানজিম ০, খালেদ ০; মুকিদুল ২৫-৬-৮৪-৪, রবিউল ২৩-৭-৫৮-৩, সোহরাওয়ার্দী ৩৮-১৭-৫৪-০, আরিফুল ৩-১-১০-০, মাহমুদুল ১১-২-২৩-০, নাঈম ৬-০-১৫-০, জাহিদ ৯-০-২৮-১, তানবীর ৪.২-১-৪-২)

রংপুর বিভাগ ২ম ইনিংস: (লক্ষ্য ১৪০) ৪২.৫ ওভারে ১৪০/৪ (মাইশুকুর ৩১, জাহিদ ১০, মাহমুদুল ৪, নাঈম ৫০*, আকবর ২০, সোহরাওয়ার্দী ২০*; খালেদ ১১-৩-২৬-১, রেজাউর ৬-০-৩০-০, এনামুল জুনিয়র ১২-১-৩২-২, শাহানুর ১০.৫-১-৪৯-১, গালিব ৩-১-২-০)

ফল: রংপুর ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: অমিত হাসান

খুলনার ইনিংস ব্যবধানে জয়

প্রথম ইনিংসে ১৮৮ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো অনে পড়া ঢাকার ইনিংস হার এড়াতে শেষ দিনে ৯ উইকেট হাতে রেখে আরও দরকার ছিল ১৪২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ৪৬ রান নিয়ে দিন শুরু করে ১৬১ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। খুলনার জয় ইনিংস ও ২৭ রানে।

ঢাকার হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করা সাইফ হাসানকে কট বিহাইন্ড করে খুলনাকে দিনের প্রথম সাফল্য এনে দেন অভিষিক্ত পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটাই তার প্রথম উইকেট।

মেহেদি হাসান মিরাজ। ফাইল ছবি

বাকি ৮ উইকেট ভাগ করে নেন অফ স্পিনার মিরাজ ও লেগ স্পিনার রায়হানউদ্দিন। আব্দুল মজিদ (৩৬), তাইবুর রহমান, শুভাগত হোম, রকিবুল হাসান (৩৭) ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে ফিরিয়ে মিরাজ পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। শেষে এনামুল হককে ফিরতি ক্যাচে বিদায় করে দলের জয়ও নিশ্চিত করেন তিনিই।

৪১ রানে মিরাজ নেন ৬ উইকেট। তার ৪২.৫ ওভারের ২২টিই মেডেন। ১০২ রান খরচায় ম্যাচে তার শিকার ৮টি। একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিংয়ে তিনি করেন ৬৭ রান।

প্রথম ইনিংসে ৬টিসহ ম্যাচে ১৫৪ রানে ৯ উইকেট নেন রায়হান।             

ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ার সেরা ১৭৫ রানের পর ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার নাহিদুল ইসলাম।

তিন ম্যাচে খুলনার এটি প্রথম জয়। সমান ম্যাচে ঢাকার প্রথম হার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা বিভাগ ১ম ইনিংস: ৪১৯

ঢাকা ১ম ইনিংস: ২৩১

ঢাকা ২য় ইনিংস: (ফলো অন) ১১২.৫ ওভারে ১৬১ (আগের দিন ৪৬/১) (মজিদ ৩৬, সাইফ ৪৪, রকিবুল ৩৭, তাইবুর ১০, শুভাগত ১৩, নাদিফ ১, মাহিদুল ০, নাজমুল ৪, এনামুল ৫; রায়হান ৩৩-১৫-৫৮-৩, নাহিদুল ১৮-১৪-২৫-০, মিরাজ ৪২.৫-২২-৪১-৬, হালিম ১০-৪-১৮-০, মৃত্যুঞ্জয় ৬-৩-৭-১, রবি ৩-০-৩-০)

ফল: খুলনা ইনিংস ও ২৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাহিদুল ইসলাম।