টি-টোয়েন্টি নাকি তারুণ্যের খেলা। সেই ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরেকবার দেখাল অভিজ্ঞতার ভার। ‘বুড়োদের’ সৌজন্যেই চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে তারা ফিরল সিরিজে।
গ্রেনাডায় বৃহস্পতিবার খানিকটা মন্থর উইকেটে ক্যারিবিয়ানরা ২০ ওভারে তোলে ১৬৭ রান। প্রোটিয়ারা যেতে পারে ১৪৬ পর্যন্ত। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এখন ২-২ সমতা।
সিরিজের প্রথমবার এ দিন টস জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা, কিন্তু বোলিংয়ে নেমে শুরুতেই হয়ে যায় এলোমেলো। ‘পার্ট টাইম’ অফ স্পিনার এইডেন মারক্রামকে দিয়ে বোলিং শুরুর ফাটকা তাদের কাজে লাগেনি। দুটি করে চার-ছক্কায় প্রথম ওভারেই লেন্ডল সিমন্স নেন ২০ রান।
পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে লুঙ্গি এনগিডিকে লং অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ান এভিন লুইস। তবে এই লুইসকে ফিরিয়েই প্রোটিয়ারা ঘুরে দাঁড়ায় দ্রুত।
আনরিক নরকিয়ার বলে লুইস ধরা পড়েন মিড অনে (৭)। এক ম্যাচের বিশ্রাম কাটিয়ে একাদশে ফিরে গেইল করতে পারেন ৫। শিমরন হেটমায়ার পারেননি সহজাত ঝড় দেখাতে (১২ বলে ৭)।
সিমন্স অবশ্য এক পাশ থেকে আক্রমণ ধরে রেখেছিলেন। পাওয়ার প্লের মধ্যে নরকিয়ার এক ওভারে চার-ছক্কা মারেন তিনি, এনগিডিকে টানা দুই বলে চর-ছক্কা। কিন্তু স্পিন আক্রমণে আসার পর থমকে যেতে হয় তাকেও। ফিফটির আগে তাকে বিদায় করেন জর্জ লিন্ডা।
দুই বাঁহাতি স্পিনার লিন্ডা ও তাবরাইজ শামসির বোলিংয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। শামসি ফেরান বিপজ্জনক দুই ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান ও আন্দ্রে রাসেলকে।
৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন লিন্ডা। শামসির বোলিং বিশ্লেষণ হুবুহু আগের ম্যাচের মতো, ৪-০-১৩-২।
১৬ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৫ উইকেটে ১০১। পোলার্ড খেলছেন তখন ১১ বলে ৭ রান করে। ধুঁকতে থাকা ইনিংসে শেষ চার ওভারে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক বইয়ে দেন তাণ্ডব। সঙ্গী হন ফ্যাবিয়ান অ্যালেন।
কাগিসো রাবাদাকে লেগ সাইডে টানা তিন বলে ছক্কা মারেন পোলার্ড। ওই ওভার থেকে আসে ২৫ রান। এনগিডির করা শেষ ওভার থেকে ১৮। শেষ ৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ৬৬ রান!
৫ ছক্কায় ২৪ বলে পোলার্ড স্পর্শ করে ফিফটি। অ্যালেন অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ১৯ রান করে।
ব্যাটিংয়ের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিংয়ের শুরুটাও ছিল চমকপ্রদ। দুই উদ্বোধনী বোলারের সম্মিলিত বয়স ৮০ বছরের বেশি! ৩৯ পেরিয়ে যাওয়া ফাস্ট বোলার ফিডেল এডওয়ার্ডস করেন প্রথম ওভার। দ্বিতীয় ওভারে গেইল।
২০১৬ বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার বোলিংয়ে আসেন গেইল। মাথায় ক্যাপ, চোখে সানগ্লাস আর কানে ইয়ারপিস নিয়ে বোলিং করে প্রথম বলেই পেয়ে যান উইকেট। ড্রাইভ করতে গিয়ে স্টাম্পড রিজা হেনড্রিকস। সতীর্থ কেনভিন সিনক্লেয়ারকে দেখিয়ে তার মতো ডিগবাজিতে উদযাপনে মেতে ওঠেন গেইল।
দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডারের ভরসা রাসি ফন ডার ডাসেনকে ফেরান পোলার্ড নিজেই।
ব্রাভো আক্রমণে আসার পর ম্যাচ থেকে আরও ছিটকে পড়ে প্রোটিয়ারা। দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থাকা ডি ককও তার শিকার। ৪৩ বলে ৬০ রান করা ব্যাটসম্যান আউট হতেই একরকম নিশ্চিত হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়।
সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচ একই মাঠে, রোববার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৭/৬ (সিমন্স ৪৭, লুইস ৭, গেইল ৫, হেটমায়ার ৭, পুরান ১৬, পোলার্ড ৫১*, রাসেল ৯, অ্যালেন ১৯*; মারক্রাম ১-০-২০-০, এনগিডি ৪-০-৪৮-০, নরকিয়া ৪-০-৩২-১, রাবাদা ৩-০-৩৬-১, লিন্ডা ৪-০-১৬-২, শামসি ৪-০-১৩-২)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৪৬/৯ (ডি কক ৬০, হেনড্রিকস ২, বাভুমা ৭, মারক্রাম ২০, ফন ডার ডাসেন ৬, মিলার ১২, লিন্ডা ৬, রাবাদা ১৬*, শামসি ০, এনগিডি ০, নরকিয়া ৪*; এডওয়ার্ডস ২-০-২১-০, গেইল ২-০-১১-১, ম্যাককয় ৪-০-৩৩-১, রাসেল ৪-০-৩০-২, ব্রাভো ৪-০-১৯-৪, পোলার্ড ৪-০-২৪-১)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২১ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ২-২ সমতা।
ম্যান অব দা ম্যাচ: কাইরন পোলার্ড।