সেঞ্চুরির পর করুনারত্নে তবু আউট হলেন শেষ সেশনে। থিরিমান্নে দিন শেষেও অপরাজিত। পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার রান ১ উইকেটে ২৯১।
আগের টেস্টে ২৪৪ রানের ইনিংসের পর এবারও তেমন কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন করুনারত্নে। তাকে ১১৮ রানে থামাতে পেরে তাই স্বস্তিই পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। লঙ্কান অধিনায়কের এটি দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরি।
ধৈর্যশীল ইনিংসে থিরিমান্নে অপরাজিত ২৫২ বল খেলে ১৩১ রানে।
করুনাররত্নে ও থিরিমান্নের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২০৯ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি উদ্বোধনী জুটি এটি। টানা তিন ইনিংসে সেঞ্চুরিতেও তারা শ্রীলঙ্কার প্রথম আর টেস্ট ইতিহাসের একাদশ।
বাংলাদেশের একমাত্র উইকেট শিকারি বোলার অভিষিক্ত বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। দিনের সেরা বোলার সম্ভবত তাসকিন আহমেদ। গতি যথারীতি ভালো ছিল, নতুন বলে আদায় করেছেন মুভমেন্ট। পুরনো বলেও তিনিই যা একটু পরীক্ষা নিতে পেরেছেন লঙ্কানদের। সুযোগও সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় তার দিন কাটে উইকেটবিহীন।
প্রথম সেশনে তার বলেই আসে তিনটি সুযোগ। ২৮ রানে মিড অফে ক্যাচ করুনারত্নে। কিন্তু শুরুতে বুঝে উঠতে একটু দেরি করায় বলের কাছে সময়মতো যেতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। দুই বল পরই স্লিপে তুলনামূলক সহজ ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্ত।
একটু পর থিরিমান্নের শট গালি দিয়ে বল বেরিয়ে যায় বাউন্ডারিতে। মেহেদী হাসান মিরাজ ঝাঁপিয়েও পারেননি। বেশ কঠিন, তবে সুযোগ অবশ্যই।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। তাসকিনের করা ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই এলবিডব্লিউর আবেদন হয় দুটি। বেশ অস্বস্তিতে ফেলেন তিনি করুনারত্নেকে। প্রথম ঘণ্টাজুড়েই সেই দৃশ্য দেখা যায় নিয়মিত। তাসকিন, আবু জায়েদ চৌধুরি, শরিফুল বেশ কবারই বিপাকে ফেলেন দুই লঙ্কান ওপেনারকে।
প্রথম পানি পানের বিরতির পর থেকেই দিশা হারায় বাংলাদেশের বোলিং। আলগা হয় লঙ্কানদের চাপ। বাউন্ডারি আসতে থাকে নিয়মিত। দ্বিতীয় সেশনে আরও বেগবান হয় রানের স্রোত। বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং, কিছুই ভালো হয়নি এসময়। কার্যকর হয়নি পেস-স্পিন কিছুই। শরীরী ভাষাও পড়তে থাকে ক্রমে। করুনারত্নে ও থিরিমান্নে আরামে এগোতে থাকেন।
লাঞ্চের আগে ২৭ ওভারে আসে ৬৬ রান। লাঞ্চের পর ৩১ ওভারে ১২২!
ইনিংসের শুরুর দিকেই করুনারত্নে ৫ হাজার টেস্ট রানের মাইলফলকে পা রাখেন দশম শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে। ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ১০২ বলে। সেখান থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে লাগে মাত্র ৫৪ বল!
থিরিমান্নের ফিফটি আসে ১০২ বলে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি ২১২ বল খেলে।
৬৩ ওভার পেরিয়ে অবশেষে ভাঙে এই জুটি। শরিফুলের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ফ্ল্যাশ করে কিপার লিটনের হাতে ধরা পড়েন করুনারত্নে।
প্রথম সাফল্যই হয়ে থাকে দিনে বাংলাদেশের শেষ সাফল্য। ৮৫ ওভারের পর দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি। দ্বিতীয় উইকেটে ওশাদা ফার্নান্দোকে নিয়ে আরেকটি দারুণ জুটি গড়ে তোলেন থিরিমান্নে।
দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন এই জুটির রান ৮২। ওশাদা অপরাজিত রানে ৪০।
দিনের শেষ ওভারে শরিফুলের বলে থিরিমান্নেকে আউট দেন আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। বাংলাদেশের সেই আনন্দও মিলিয়ে যায় দ্রুত। রিভিউ নিয়ে ঠিকই টিকে থাকেন থিরিমান্নে। সেটিই জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশের অপেক্ষায় আরও কঠিন সময়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৯১/১ (করুনারত্নে ১১৮, থিরিমান্নে ১৩১*, ওশাদা ৪০*; আবু জায়েদ ১৬-৩-৪৭-০, তাসকিন ১৭-৩-৬৯-০, মিরাজ ২২-৪-৬৭-০, শরিফুল ১৬-৩-৫২-১, তাইজুল ১৯-২-৫৬-০)।