ঢাকা টেস্টে অগ্নিপরীক্ষার সামনে বাংলাদেশ

দেশের মাটিতে স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে টেস্ট জেতার পরিকল্পনায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। লম্বা সময়ের ব্যবধানে হলেও চট্টগ্রামে হারের স্বাদ পেয়েছে টানা দুই টেস্টে। লাল বলের ক্রিকেটে পায়ের নিচে মাটির সন্ধানে থাকা দলটি এক অগ্নিপরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ বাঁচাতে জয়ের বিকল্প নেই। আর যদি সঙ্গী হয় আরেকটি পরাজয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে স্বাগতিকদের।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2021, 03:59 PM
Updated : 10 Feb 2021, 06:06 PM

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে সকালে সাড়ে নয়টায়।

শঙ্কা যেমন আছে, প্রাপ্তিরও হাতছানি আছে মুমিনুল হকের দলের সামনে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচ খেলে যে পয়েন্টের দেখা পায়নি তারা।

পিছিয়ে থেকেও সমতায় সিরিজ শেষ করার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুইবার দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজে হার এড়িয়েছিল তারা। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও হয় একই অভিজ্ঞতা।

বাঁচা-মরার ম্যাচের আগে নিজেদের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ওপেনার সাদমান ইসলামকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দুটি পরিবর্তন তাই অনিবার্য। প্রথম টেস্টের পর দলে আসা সৌম্য সরকার ঢুকে যেতে পারেন একাদশে। সাকিবের জায়গায় একজন বাড়তি পেসার খেলিয়ে বোলিং আক্রমণে কিছুটা বৈচিত্র্য বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছে দলটি।

শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ইদানিং বাংলাদেশের রেকর্ড দারুণ। শেষ ৬ টেস্টের পাঁচটিতেই জিতেছে তারা। টানা শেষ তিন জয়ের একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। সবশেষ সিরিজে ইনিংস ব্যবধানে জিতেছিল স্বাগতিকরা।

তবে এই সব অতীত নিয়ে ভাবার ফুসরত নেই বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে জিততে বসা ম্যাচে হারের স্মৃতি যে এখনও উঁকি দিচ্ছে মনের আকাশে। চার দিন দাপট দেখিয়ে এক দিনের নিদারুণ ব্যর্থতায় হার। প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্য দিয়েও ৩ উইকেটের হার পোড়াচ্ছে তাদের।

সেই ম্যাচের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানালেন মুমিনুল।  

“এমন পরিস্থিতিতে আমরা এর আগে পড়িনি। বিশেষ করে চাপের সময় পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিতে হয়, এখান থেকে সেটা আমরা শিখব। কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে বল করতে হবে, ফিল্ডিং সাজাতে হবে সেটা শিখব।”

দুই টেস্টেই জিতে ১২০ পয়েন্টের আশায় ছিল বাংলাদেশ। হতাশার হারে হারিয়ে গেছে ৬০ পয়েন্ট। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর সঙ্গে পয়েন্টের খাতা খোলার দিকেও তাকিয়ে মুমিনুল। 

“এই ম্যাচ জেতার জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে। সবাই রোমাঞ্চিত হয়ে আছে মাঠে নামার জন্য। দেখা যাক কাল কি হয়।”

টেস্ট সিরিজকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ পা রাখছে মাটিতেই। খুশিতে ভেসে যেতে মানা অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের। চট্টগ্রামে জিতে অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে, ঢাকা টেস্টের আগে সতীর্থদের আবার নতুন করে শুরু করার তাগিদ দিলেন তিনি।

“আমরা একটা ভালো জয় পেয়েছি। এখন আবার আমাদের শুরু করতে হবে। আত্মতুষ্টিতে ভোগা চলবে না। আমাদের আবার লড়াই করতে হবে।” 

“দল হিসেবে আমরা খুব দূরে তাকাতে চাই না। আমাদের সামনে পাঁচ দিনের খেলা বাকি। প্রথম টেস্ট জিতে আমরা খুব খুশি। এখন নিজেদের সামলে নিয়ে পরের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পালা।”

ঢাকা টেস্টে একজন বাড়তি স্পিনার খেলানোর ভাবনা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ভিরাসামি পেরমল আসতে পারেন একাদশে। চট্টগ্রামে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল দেখিয়েছেন মরা উইকেটে তিনিও প্রাণ জাগাতে পারেন। আগুনে স্পেলে ঘুরিয়ে দিতে পারেন ম্যাচের মোড়।

“প্রথম ইনিংসে আমরা দেড়শ ওভার ফিল্ডিং করেছিলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্যানন আমাকে কিছুটা আক্রমণাত্মক হতে বলে। সে নিজের শতভাগ দিয়েছে…সে সামনে থেকে পথ দেখিয়েছে।”   

চট্টগ্রামে ক্যারিবিয়ানদের জয় সমীকরণ অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। ওয়ানডে সিরিজে অনায়াসে জেতা বাংলাদেশ ঢাকা টেস্টের আগে অনেকটাই নড়বড়ে। সাকিবকে হারিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একাদশ সাজানো নিয়েও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

নিদারুণ ব্যর্থতার পর স্পিনারদের সামনেও নিজেদের সামলে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, নাঈম ইসলাম সেটা কতটা ভালোভাবে পারবেন এর ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু।

বিপরীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জানে তাদের কি করণীয়। কোথায় আরেকটু উন্নতি প্রয়োজন। ঢাকা টেস্টের আগে হয়তো একটু এগিয়েই সফরকারীরা। তবে বাংলাদেশও জানে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। চট্টগ্রামে হেরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশের এবার এগিয়ে যাওয়ার পালা।