সৌম্য-লিটনের ঝড়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত আকারে ম্যাচের টিকেট ছেড়েছিল বিসিবি। টি-টোয়েন্টির টানে তবু গ্যালারিতে এসেছিলেন হাজার সাতেক দর্শক। ব্যাটিং তাণ্ডবে তাদের মাতিয়ে রাখলেন লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকার। দলও পেল প্রত্যাশিত জয়। ঝুঁকি নিয়ে আসা সেই দর্শকেরা মাঠ ছাড়লেন টইটুম্বুর বিনোদনের পূর্ণতায়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2020, 03:49 PM
Updated : 9 March 2020, 04:44 PM

মিরপুরে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সোমবার জিম্বাবুয়েকে ৪৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
 
তামিম ইকবাল ও লিটনের রেকর্ড গড়া জুটি গড়ে দিয়েছিল যে ভিত, সেখানে দাঁড়িয়ে সৌম্যর বিধ্বংসী ইনিংস বাংলাদেশকে এনে দেয় ২০০ রানের পুঁজি। জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে ১৫২ রানে।
 
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ৩২ বলে অপরাজিত ৬২ করেছেন সৌম্য। ওপেনিংয়ে লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৯ বলে ৫৯।
 
টি-টোয়েন্টিতে এই নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার দুইশ রানের ছোঁয়া পেল বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমবার।
 
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ও এটিই।

ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন তামিম ও লিটন, সেখান থেকেই যেন টি-টোয়েন্টিতে শুরু করলেন এই দুজন। সেই ম্যাচে দুজন গড়েছিলেন ওয়ানডের রেকর্ড জুটি, এই ম্যাচে টি-টোয়েন্টির রেকর্ড!
 
লিটনের ব্যাটে যথারীতি ছিল শিল্পিত আগ্রাসন। নান্দনিক সব শটে খুন করেছেন জিম্বাবুয়ের বোলিং। প্রথম ওভারেই সিকান্দার রাজার বলে চোখ ধাঁধানো ছক্কা ও চারে শুরু। এরপর আর যেন থামাথামি নেই।
 
তামিম শুরুতে ছিলেন একটু সাবধানী। সময়ের সঙ্গে তিনিও সামিল হয়েছেন রান উৎসবে। ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতার ৬ ওভারে রান এসেছে ৫৯।
 

পাওয়ার প্লে শেষেও কমেনি রানের জোয়ার। নিজেদেরই গড়া ৭৪ রানের জুটি ছাপিয়ে এই দুজন বাংলাদেশকে উপহার দেন উদ্বোধনী জুটির নতুন রেকর্ড।
৬২ বলে ৯২ রানের জুটি থেমেছে তামিমের বিদায়ে। ৩৩ বলে ৪১ রান করা তামিম ফিরেছেন ওয়েসলি মাধেভেরেকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে।
ওই ওভারেই লিটন ফিফটি স্পর্শ করেছেন ৩১ বলে, টি-টোয়েন্টিতে যেটি তার তৃতীয়।
তার দারুণ সম্ভাবনাময় ইনিংস শেষ হয়েছে সিকান্দার রাজার সোজা বল ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে। ৫৯ রানের ইনিংসে ৫ চারের সঙ্গে ছক্কা ছিল ৩টি।
লিটনের বিদায়ের পরের বলেই বিশাল ছক্কায় সৌম্য জানান দেন, ঝড় থামছে না সহসাই! রান প্রবাহ চলতেই থাকে। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তার জুটিতে ৪০ রান আসে ৩ ওভারেই।

ক্রিস এমপোফুর এক ওভারে দুটি ছক্কার পর মুশফিক বিদায় নেন আরেকটির চেষ্টায় (৭ বলে ১৭)। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে শেষের দাবি মেটান সৌম্য। যেখানে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন মূলত সহকারীর ভূমিকায়।
 
২৫ বলে ৫৪ রানের জুটিতে মাহমুদউল্লাহ করেছেন ৯ বলে ১৪, সৌম্য ১৬ বলে ৪০!

ডনাল্ড টিরিপানোর এক ওভারে সৌম্য মেরেছেন একটি করে চার ও ছক্কা। ফিফটিতে পৌঁছেছেন ৩০ বলে। শেষ ওভারে এমপোফুকে উড়িয়েছেন দারুণ তিনটি ছক্কায়। ইনিংসের শেষ দুই বলে তার দুটি ছক্কাতেই দলের রান ছুঁয়ে ফেলে দুইশর সীমানা।
 
হার না মানা ইনিংস খেলে সৌম্য যখন ফিরছেন, তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৩২ বলে ৬২। ছক্কা সেখানে ৫টি, চার ৪টি।
 
ক্যারিয়ারে আগের ৪৮ ম্যাচে সৌম্যর ফিফটি ছিল মোটে ১টি, সর্বোচ্চ ছিল ৫১।
 
জিম্বাবুয়ের রান তাড়ার শুরুটায় ছিল আশার ইঙ্গিত। ইনিংসের প্রথম দুই বলে মুস্তাফিজুর রহমানকে দারুণ দুটি বাউন্ডারি মারেন টিনাশে কামুনহুকামউই। কিন্তু আশা মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি।
 

অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর দ্বিতীয় ওভারেই ফেরেন আলগা শট খেলে। অসুস্থতা কাটিয়ে ফেরা ক্রেইগ আরভিন শেষ ৮ রানেই। প্রতিভাবান ওয়েসলি মাধেভেরের টি-টোয়েন্টি অভিষেক তিক্ততায় শেষ হয়েছে রান আউটে।
কামুনহুকামউই ছিলেন দলের আশা হয়ে। আমিনুল ইসলামকে দারুণ টাইমিংয়ে ছক্কা মেরেছেন। তরুণ লেগ স্পিনার পরের বলটি দিয়েছেন আরও ঝুলিয়ে। ছক্কার পুনরাবৃত্তির চেষ্টায় কামুনহুকামউই দিয়েছেন ক্যাচ (২০ বলে ২৮)।
মিডল অর্ডারে শন উইলিয়ামস দুর্দান্ত খেলছিলেন স্পিনারদের। কিন্তু ১২ বলে ২০ রান করে আউট হয়েছেন বাজেভাবে। আমিনুলের ফুল টস বল তুলে দিয়েছেন সোজা ফিল্ডারের হাতে।
শেষ দিকে টিরিপানোর ৩ ছক্কায় ২০ রান ও কার্ল মুম্বার ১৬ বলে ২৫ রানে জিম্বাবুয়ের রান পেরিয়েছে দেড়শ। কমেছে ব্যবধান। তবু আটকানো যায়নি বাংলাদেশের রেকর্ড জয়।
৩ ওভারে ৩টি ছক্কা হজম করলেও ছোট্ট টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়েছেন আমিনুল। ৩ উইকেট নিলেও মুস্তাফিজের বোলিংয়ে ছিল ভালো-মন্দের মিশেল। টুকটাক কিছু অস্বস্তি ছাড়া বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে ছিল প্রত্যাশিত দাপট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ২০০/৩ (তামিম ৪১, লিটন ৫৯, সৌম্য ৬২*, মুশফিক ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৪*; রাজা ৪-০-৩১-১, মুম্বা ২-০-২৪-০, টিরিপানো ৪-০-৩৯-০, এমপোফু ৪-০-৫৮-১, মাধেভেরে ২-০-১৫-১, উইলিয়ামস ৪-০-৩১-০)

জিম্বাবুয়ে: ১৯ ওভারে ১৫২ (কামুনহুকামউই ২৮, টেইলর ১, আরভিন ৮, মাধেভেরে ৪, উইলিয়ামস ২০, রাজা ১০, মুতুমবামি ২০, মাটোমবোদজি ২, টিরিপানো ২০, মুম্বা ২৫, এমপোফু ২*; মুস্তাফিজ ৪-০-৩২-৩, শফিউল ৩-০-১৯-১, সাইফ ৩-০-১৯-১, মেহেদি ৪-০-২৯-০, আমিনুল ৩-০-৩৪-৩, আফিফ ২-০-১৮-১)
 
ফল : বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী
 
সিরিজ : ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে
 
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার