‘মাশরাফিতে আরেকবার, মাশরাফিতে শেষবার…’

‘লাল সবুজের বেশে, খেলছে বাংলাদেশ… ক্যাপ্টেন-লিডার-লিজেন্ড, ওয়ান অ্যান্ড ওনলি ম্যাশ…।’ দেশের মাটিতে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই গ্যালারিতে ‘দৌড়া বাঘ আইলো’ গ্রুপের কণ্ঠে শোনা যায় এই গান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একনিষ্ঠ সমর্থক এই গ্রুপের সদস্য ইলাহি শুভ বললেন, ‘হয়তো আজকেই শেষবার এই গান গাইব আমরা। গলা ছেড়ে গাইব, হৃদয় দিয়ে গাইব। এই গানে অধিনায়ককে সম্মান জানাতেই আমরা আজকে এসেছি।’

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2020, 10:48 AM
Updated : 6 March 2020, 11:11 AM

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে সিলেটের গ্যালারিতে ছিল দর্শক খরা। সিরিজের ফয়সালা হয়ে যাওয়ার পরও তৃতীয় ম্যাচে দর্শক তুলনামূলক অনেক বেশি। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে শেষ ম্যাচ বলে কথা! সময়ের সঙ্গে গ্যালারি ভরে উঠছে আস্তে আস্তে।

ম্যাচ শুরু হওয়ার বেশ আগে থেকেই গ্যালারিতে স্লোগান শুরু হয়ে গেছে, “মাশরাফি…মাশরাফি… ক্যাপ্টেন… ক্যাপ্টেন…।” বাংলাদেশের জার্সিতে মাশরাফি শেষবার টস করতে নামার সময় সেই স্লোগান রূপ নিল গর্জনে।

বাংলাদেশের ম্যাচে গ্যালারির পরিচিত মুখ ‘টাইগার’ নামে খ্যাত শোয়েব যথারীতি আছেন মাঠে। হৃদয়ের আকুতি তিনি ধারন করেছেন বুকে ও পিঠে, লেখা আছে ‘মিস ইউ ক্যাপ্টেন।’ তবে শুধু শুধু লেখাতেই নয়, কণ্ঠেও উঠে এসেছে অধিনায়কের জন্য ভালোবাসা। চারপাশ প্রকম্পিত করে তুলছিলেন তিনি মাশরাফির নামে চিৎকারে।

‘দৌড়া বাঘ আইলো’ গ্রুপের ১৫-১৬ জন সদস্য ঢাকা থেকে এসেছেন খেলা দেখতে। তাদের একজন শিহাব মোহাম্মদ জানালেন, এই সিরিজের শেষ ম্যাচ মাশরাফির শেষ হতে পারে ভেবে অনেক আগেই তারা টিকিট কেটে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তাদের ধারনার সঙ্গে মাশরাফির ভাবনা মিলে গেছে অনেকটা। এই ম্যাচে তারা এসেছেন একটি থিম নিয়েই, “মাশরাফিতে আরেকবার, মাশরাফিতে শেষবার…।”

এই গ্রুপের সঙ্গে আসা রাইসুস সালেহিন মারুফ জানালেন, মাশরাফি কেন তাদের কাছে আলাদা।

“তার চেয়ে ভালো বোলার আমরা আরও পেতে পারি, তার চেয়ে সফল অধিনায়কও হয়তো ভবিষ্যতে আসবেন। কিন্তু তার যে ব্যক্তিত্ব, তার যে সর্বব্যাপী প্রভাব, যেভাবে আমাদের দলকে বদলে দিয়েছেন, সব মিলিয়ে মাশরাফি একজনই।”

আরেক দর্শক মুরসালিন শাহ শোনালেন, মাশরাফির ছাপ কিভাবে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

“তার আগে-পরে অনেক অধিনায়ক এসেছেন ও আসবেন। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে একটি দলকে প্রায় শূন্য থেকে উল্লেখযোগ্য একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা, লড়িয়ে মানসিকতা গড়ে তোলা, জিততে শেখানো, এভাবেই তিনি দাগ রেখে যাচ্ছেন। একাই একটি দলকে উজ্জীবিত করে তোলা, জয়ের মনোভাব তৈরি করে দেওয়া, তার মতো আর কেউ পারত বলে মনে হয় না।”

বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফি বরাবরই ছিলেন আবেগের প্রতিশব্দ। তার নেতৃত্বের শেষ ম্যাচ ভক্ত-সমর্থকদেরও স্বাভাবিকভাবেই নাড়া দিচ্ছে প্রবলভাবে। তবে আবেগের পাশাপাশি ছিল কৃতজ্ঞতা স্বীকার। গ্যালারিতে ‘থ্যাঙ্ক ইউ ক্যাপ্টেন’, ‘ধন্যবাদ অধিনায়ক’, লেখা প্ল্যাকার্ড চোখে পড়েছে অনেক।

হবিগঞ্জ থেকে আসা রাশেদুল করিম যেমন বলছিলেন, অধিনায়ক মাশরাফির শেষ বলে কিছু তার কাছে নেই।

“আনুষ্ঠানিকভাবে হয়তো আজকে অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচ। কিন্তু তার শেষ বলে কিছু নেই। আমি তাকে বিদায় বলতে আসিনি। এসেছি অভিনন্দন জানাতে, কৃতজ্ঞতা জানাতে। এই দেশের ক্রিকেটকে তিনি অনেক কিছু দিয়েছেন, আরও দেবেন। হয়তো ভূমিকা বদলে যাবে, মাশরাফি বদলাবেন না।“

মাশরাফি বিদায়ের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ঘোরের মধ্যে আছেন অনুপম হোসেন পূর্ণম। সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগেনি। ঢাকা থেকে সিলেট চলে এসেছেন প্রিয় অধিনায়ককে কাছ থেকে বিদায় জানাতে। তার কাছে মাশরাফি মানে মাথা উঁচু করার দুঃসাহস।

“দুপুরে খবরটা শোনার পর থেকে অস্থির লাগছিল। সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসার যাচ্ছিলাম, কিন্তু নিজেকে আবিষ্কার করলাম কলাবাগানে বাস কাউন্টারে। নির্ঘুম রাত শেষে ভোর সাড়ে ৫টার বাসে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হলাম। অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচ… কে জানে, হয়তো ক্রিকেটার মাশরাফিরও! সেই মাশরাফি যার উদ্ধত কলারে উঁচু হয়ে যায় বাংলাদেশের কোটি মাথা!”