টি-টোয়েন্টি খেলতে যাওয়া নিয়ে সরকারের সব পক্ষ থেকে এখনও ছাড়পত্র পায়নি বিসিবি। সফর অনিশ্চয়তার প্রথম কারণ এটি। এছাড়া, কোচিং স্টাফদের বেশির ভাগ যেতে চান না পাকিস্তানে। ক্রিকেটারদের একটি বড় অংশও রাজী নন। তাই মোটামুটি একটি দলও দাঁড় করানো যাবে কিনা, নিশ্চিত নয় বিসিবি।
বিসিবি যদিও টি-টোয়েন্টি পাকিস্তানে খেলে টেস্ট নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে পিসিবিকে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজ শেষে পিসিবি প্রধান এহসান মানি জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের সব ‘হোম’ সিরিজ এখন থেকে পাকিস্তানেই হবে। বাংলাদেশকেই প্রমাণ করতে হবে পাকিস্তান নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের কোচ মিসবাহ-উল-হক ও টেস্ট অধিনায়ক আজহার আলি।
এসবের প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার বিসিবিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা তুলে ধরলেন নাজমুল হাসান।
“আপাতত আমরা তাদেরকে জানিয়েছি যে, আমরা টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাওয়ার চেষ্টা করব। ওরা যদি রাজী হয়। তবে সেটা নির্ভর করবে দুটি জিনিসের ওপর। একটা হলো ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফরা যদি রাজী হয়, আমরা যদি ভালো একটি দল বানাতে পারি, তাহলে পাঠাব। দ্বিতীয়ত, সরকারের প্রত্যেকটি জায়গা থেকে ছাড়পত্র। টি-টোয়েন্টি খেলতে যেতেও তো আমার ছাড়পত্র লাগবে সরকারের সব নিরাপত্তা সংস্থার! তাছাড়া আমরা এবার ঠিক করেছি, আমাদের নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াও ডিজিএফআই, এনএসআই, ওসব জায়গা থেকে লোকজন নিয়ে যাব।”
টি-টোয়েন্টি খেলতে সরকারের সব সংস্থার ছাড়পত্র দু-একদিনের মধ্যেই বিসিবি পেয়ে যাবে বলে মনে করছেন নাজমুল হাসান। তবে বড় সংশয় আছে কোচিং স্টাফ আর ক্রিকেটারদের যাওয়া নিয়ে।
“কোচিং স্টাফদের অনেকে আগেই বলে দিয়েছে, ওরা যাবে না। কেউ কেউ যেতে পারে, তবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। বেশির ভাগই যেতে চায় না। ক্রিকেটারদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছু ক্রিকেটার যেতে ইচ্ছুক নয়। কয়েকজন যেতে রাজী, তবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। ওদের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে একটি বড় ব্যাপার হলো পরিবার। ওদের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সবাই চিন্তিত, উৎকণ্ঠায় আছে।”
“যারা যেতে রাজী, তারা বলেছে যে আপাতত টি-টোয়েন্টি খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে চলে আসি। সেই অভিজ্ঞতা হয়তো তাদের ভবিষ্যতে চিন্তা করতে সহায়তা করবে যে লঙ্গার ভার্সন খেলতে যাবে কিনা।”
এই বছরের শুরুতে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই উদাহরণ টেনে পিসিবি প্রধান এহসান মানি বলেছেন, সব দেশেই ঝুঁকি আছে। তবে বিসিবি প্রধান এখানে একমত নন, পাকিস্তান তার কাছে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
“একটা ব্যাপার হলো যে, ওখানে ঝুঁকির ব্যাপার তো আছেই। যে কোনো জায়গাতেই হতে পারে যে কোনো কিছু। কিন্তু অন্যান্য অনেক জায়গার চেয়ে পাকিস্তানের শঙ্কা নিশ্চিতভাবেই একটু বেশি।”
বিদেশি দলগুলিকে যে নিরাপত্তা দেয় পাকিস্তান, সেটির কার্যকারিতা নিয়ে অবশ্য কোনো সংশয় নেই বিসিবি প্রধানের। তবে নিরাপত্তার জালে বন্দী থাকার মানসিক ব্যাপারটিও তিনি তুলে ধরলেন।
“পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্দেহ থাকার কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। আমি নিজেও দেখে এসেছি। মেয়েরা গিয়েছে, অনূর্ধ্ব-১৬ দল গিয়েছে। ওদের কাছ থেকেও ফিডব্যাক পেয়েছি যে সিস্টেম ভালো। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাইরেও অনেক ব্যাপার আছে।”
“ওরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কতদিন থাকা যায় … বদ্ধ একটা পরিবেশে কতদিন থাকা যায়। মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারও তো আছে! ক্রিকেটারদের যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, প্রায় সবাই বলেছে যে এত লম্বা সময় আমরা থাকতে চাই না।”
ক্রিকেটারদের কাউকে বোর্ড থেকে কোনোরকম জোর করা হবে না, সেটি নিশ্চিত করে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।
“কাউকে জোর করার তো প্রশ্নই আসে না। আমরা কাউকে বলিনি যে, যেতে হবেই। আমরা ওদের মতামত চেয়েছি। অনেকে বলেছে যে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলে যাওয়া যেতে পারে। তার পরও বলেছে যে পরিবারের সঙ্গে কথা বলবে।”
“তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যেই কেউ কেউ বলেছে, টি-টোয়েন্টি খেলতেও যাব কিনা ঠিক নেই। তো ব্যাপারটা এমন যে আমরা আমাদের মূল দল পাঠাতে পারব কিনা নিশ্চিত নই। পাকিস্তানের এটা বোঝা উচিত। সিনিয়ররা ৪-৫ জন যদি বলে যে তারা যাবে না, তখন তো জুনিয়ররাও তো রাজী হবে না। তাহলে আমার কি করার আছে!”
পাকিস্তানের বিপক্ষে এই টেস্ট দুটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট না খেললে এবং পাকিস্তান নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন না করলে এই ম্যাচ দুটির ভাগ্যে কী আছে, নিশ্চিত নন বিসিবি প্রধান।
“একটা প্রক্রিয়ার সব যে আমি জানি, তেমনটা বলা মুশকিল। কারণ এই ধরণের পরিস্থিতি সবসময় হয় না। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, তারা আমাদের অবস্থা বুঝতে পারবেন এবং নিরপেক্ষ ভেন্যুতে টেস্ট সিরিজের ব্যবস্থা করবেন। আগে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষেত্রে এটাই করেছে। আমাদের ক্ষেত্রে করতে সমস্যা কোথায়!”
“আমরা চাই ওদের দেশে ক্রিকেট ফিরে যাক। সেটা নিয়ে দ্বিধা নেই। কিন্তু আমাদের ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফদের কথাও ওদের চিন্তা করতে হবে। … একটা হতে পারে যে, খেলার সূচি আবার করা যায় কিনা, সেই চিন্তা করছি। তা যদি না হয়, এক্সট্রিম কেইস হয়, তখন আরবিট্রেশন টাইপ কিছু হবে। তখনও বোঝা যাবে।”