বঙ্গবন্ধু বিপিএলে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা প্লাটুন। চট্টগ্রামে সোমবার কুমিল্লাকে ১৬০ রানে থামিয়ে ঢাকা জিতে ১ বল বাকি রেখে।
দুর্দান্ত স্পেলে ৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন মেহেদি। পরে ব্যাট হাতে খেলেন ৭ ছক্কায় ২৯ বলে ৫৯ রানের ইনিংস। তরুণ অলরাউন্ডারের পারফরম্যান্সই ম্যাচে গড়ে দিয়েছে পার্থক্য।
১ বল বাকি থাকতে জয় এলেও ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ ছিল ঢাকার হাতেই। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রান। সৌম্য সরকারের করা ওভারের প্রথম ২ বলে আসে ১ রান। তৃতীয় বল ফুল টস পেয়ে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন আফ্রিদি। পঞ্চম বলে সিঙ্গেলে আসে জয়।
নাটকীয়তা আর পারফরম্যান্স, দুটি দিয়েই ম্যাচের প্রথম ভাগ ছিল কেবলই রাজাপাকসার। কুমিল্লার লঙ্কান ওপেনার ২০ রানে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন ড্রেসিং রুমে। পরে দেখা যায় বলটি ছিল ‘নো।’ ফিরিয়ে আনা হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত এই ওপেনার আর আউটই হননি। দারুণ খেলে অপরাজিত থেকে যান ৯৬ রানে।
রাজপাকসা ছাড়া ডানা মেলতে পারেননি কুমিল্লার আর কোনো ব্যাটসম্যান। উইকেট কেবল ৩টি হারালেও তাই ওঠেনি খুব বেশি রান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কুমিল্লার শুরুটা ছিল ঝড়ের আভাস দিয়ে। মাশরাফি বিন মুর্তজার করা ম্যাচের প্রথম ওভারে সৌম্য সরকারের দুই বাউন্ডারিতে রান আসে ১৪।
পরের ওভারেই মেহেদির অফ স্পিনে আত্মঘাতী শটে উইকেট বিলিয়ে আসেন সৌম্য। তিনে নামা সাব্বিরও বাজে শটে উইকেট দিয়ে আসেন মেহেদিকে।
রাজপাকসার বেঁচে যাওয়ার ঘটনা পঞ্চম ওভারে। ওয়াহাব রিয়াদের বলে ফ্লিক করে ধরা পড়েন মেহেদির হাতে। ফিরে যান ড্রেসিং রুমে, নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি রাব্বিও চলে আসেন উইকেটে। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার তখনও রিপ্লেতে দেখছিলেন, বলটি ‘নো কিনা। খানিক পর জানা যায় তার সিদ্ধান্ত, ‘নো’ বল। ডেকে আনা হয় রাজাপাকসাকে।
রাজপাকসা ফিরে আসার একটু পর ফিরে যান দাভিদ মালান। ১০ ওভার শেষে কুমিল্লার রান ৩ উইকেটে ৬০।
সেখান থেকেই ইয়াসিরকে নিয়ে দলকে টানেন রাজাপাকসা। বাঁহাতি লঙ্কান ব্যাটসম্যান ঠিকই রান তুলেছেন দ্রুততায়। তবে আরেক পাশে ইয়াসির পাননি ছন্দ। সঙ্গ দিয়ে গেছেন যদিও, তবে ঝড় তুলতে পারেননি।
৬৩ বলে ১০৩ রানের জুটিতে ইয়াসির করেছেন কেবল ৩০ রান। বল খেলেছেন ২৭টি।
রাজাপাকসা শেষ করেন ৭ ছক্কায় ৬৫ বলে ৯৬ রানে। শেষ ওভার শুরু করেছিলেন ৯৬ রান নিয়ে। স্ট্রাইকও পেয়েছিলেন দুটি বল, কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। দারুণ খেলেও তাই পাওয়া হয়নি প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির স্বাদ।
ঢাকার রান তাড়ার শুরু ছিল হোঁচট খেয়ে। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার রবিউল ইসলাম রবি বিপিএল অভিষেকে উইকেটের স্বাদ পান প্রথম ওভারেই। এনামুল হক শূন্যতে ফেরেন সীমানায় ক্যাচ দিয়ে।
তিনে নেমে সেই রবির ওপরই তাণ্ডব চালান মেহেদি। রবির দ্বিতীয় ওভারে মারেন চার-ছক্কা। সেটি ছিল কেবলই ইঙ্গিত। পরের ওভারে আক্রমণ পায় পূর্ণতা। এবার রবিকে একটি বাউন্ডারির পর টানা চার বলে ছক্কায় ওড়ান মেহেদি।
ঝড় চলতে থাকে এরপরও। সুমন খানের বলে ছক্কায় মেহেদি ফিফটি স্পর্শ করেন ২২ বলে। তার প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটি।
মেহেদির ইনিংস শেষ হয় আল আমিন হোসেনের বাউন্সারে। এই পেসারের ফুল লেংথ বলে ছক্কা মারার পর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে তুলে দেন আকাশে। ক্যাচ নেন কুমিল্লার কিপার মাহিদুল ইসলাম।
এই ধাক্কা সামলানোর আগেই জোড়া ধাক্কা। পরপর দুই বলে আসিফ আলি ও জাকের আলিকে ফিরিয়ে ঢাকাকে টালমাটাল করে দেন মুজিব উর রহমান।
রান রেটের চাপ ততটা ছিল না তখনও। তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক তাই দলকে এগিয়ে নেন ধীরে সুস্থে।
৩৩ বলে ৩৪ রানের জুটি থেমেছে অবশ্য আগ্রাসনের চেষ্টায়। সৌম্যকে উড়িয়ে সীমানায় ধরা পড়েন তামিম। অসুস্থতা ও চোট কাটিয়ে ফেরার ইনিংসে অভিজ্ঞ ওপেনার করেছেন ৪০ বলে ৩৪।
বাকি পথটুকু পাড়ি দিয়েছেন মুমিনুল হক ও আফ্রিদি। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি থেকে এসেছে ২৬ বলে ৩৯।
মুজিব অবশ্য নিজের শেষ ওভারে ফিরে প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ করেছিলেন আফ্রিদিকে। মেতে উঠেছিলেন হ্যাটট্রিকের আনন্দে। কিন্তু রিভিউ নিয়ে টিকে যান আফ্রিদি। শেষ করে আসেন ম্যাচ। অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ২৬ রানে। আরেক পাশে মুমিনুল অপরাজিত ২৬ বলে ২৮।
ম্যাচের নায়ক অবশ্য একজনই। ম্যান অব দা ম্যাচে মেহেদির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ২০ ওভারে ১৬০/৩ (রাজাপাকসা ৯৬*, সৌম্য ১০, সাব্বির ০, মালান ৯, ইয়াসির ৩০*; মাশরাফি ৩-০-২১-০, মেহেদি ৪-০-৯-২, হাসান ৩-০-৩৪-০, ওয়াহাব ৪-০-৩২-০, শাদাব ৪-০-৩২-১, আফ্রিদি ২-০-২৩-০)।
ঢাকা প্লাটুন: ১৯.৫ ওভারে ১৬১/৫ (তামিম ৩৪, এনামুল ০, মেহেদি ৫৯, আসিফ ০, জাকের ০, মুমিনুল , আফ্রিদি ; রবি ৪-০-৪৪-১, মুজিব ৪-১-২২-২, সুমন ৪-০-৩৪-০, আল আমিন ৪-০-২৯-১, সৌম্য ৩.৫-০-২৯-১)।
ফল: ঢাকা প্লাটুন ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান