ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি পাওয়ার ম্যাচে শুধু ব্যাট হাতে দারুণ সব শট খেলেই নয়, নিজের ফিটনেস দিয়েও সবার নজর কেড়েছেন ওয়ার্নার। প্রায় নয় ঘন্টা সময়ে ১২৭ ওভার ধরে ক্রিজে ছিলেন। খেলেছেন ৪১৮ বল। একে একে পেরিয়েছেন সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি ও ট্রিপল সেঞ্চুরির গন্ডি।
কিন্তু ইনিংসের কোনো পর্যায়ে তেমন ক্লান্তির ছাপ ছিল না তার শরীরী ভাষায়। বরং ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পরও সমান উদ্যমে সিঙ্গেলগুলোকে ডাবলে রূপ দিতে ছুটেছেন, ছুটেছেন তৃতীয় রানের জন্যও।
অ্যাডিলেইডের গ্যালারি থেকে ওয়ার্নারের এই অসাধারণ সামর্থ্যের প্রদর্শনী দেখেছেন স্ত্রী ক্যানডিস। তার প্রেরণাতেই ফিটনেস নিয়ে গত ছয় বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন এই ব্যাটসম্যান।
ভূমিকা আছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডেরও। খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে নানামুখী কাজ করছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, প্রযুক্তির সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে সবার অগ্রগতি। বোর্ডের হাই-পারফরম্যান্স দলের তথ্য অনুযায়ী, ৩৩৫ রানের ইনিংস খেলার পথে ওয়ার্নার দৌড়ে অতিক্রম করেছেন ২০.৯২ কিলোমিটার দূরত্ব, যা ম্যারাথন দৌড়ের দূরত্বের প্রায় অর্ধেক।
ব্যাটসম্যানদের দৌড়ানোটা যেহেতু ২২ গজেই সীমাবদ্ধ, তাই পেস বোলারদের মতো খুব বেশি গতিতে দৌড়ানোর সুযোগ তাদের কম। তবে সেই ধারণাটাও বদলে দিয়েছেন ওয়ার্নার। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট দূরত্বের ৮০ শতাংশই তিনি পাড়ি দিয়েছেন জগিং করার গতিতে।
নিজেকে এবং অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানদের মোট ১৪৬ বার ‘হাই ইন্টেনসিটি অ্যাক্সিলারেশন’-এ ছুটিয়েছেন ওয়ার্নার, যেখানে তিনি প্রান্ত বদল করেছেন একজন স্প্রিন্টারের পূর্ণ গতিতে!
স্প্রিন্টের সাথে ওয়ার্নারের অবশ্য পরিচয় রয়েছে বেশ ভালোভাবেই। বিখ্যাত স্প্রিন্ট কোচ রজার ফ্যাব্রির কাছে যে অনুশীলন করেন নিয়মিতই! দলের ফিটনেস স্টাফদের পাশাপাশি ফ্যাব্রির সাথেও নিয়মিত সেশন করেন ওয়ার্নার।
শনিবার দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্নারকে অবধারিতভাবেই কথা বলতে হলো ফিটনেস নিয়ে। জানালেন, নিজের শারীরিক সক্ষমতা তার কাছে এখন গর্বের ব্যাপার।
“ফিটনেস নিয়ে আমি নিজের প্রতি গর্বিত। যদি আমি মাঠে বা নেটে না থাকি, তাহলে হয় আমি ট্রেডমিলে থাকি অথবা বাইরে দৌড়োতে বের হই। আমার স্ত্রী সবসময়ই আমাকে বাইরে নিয়ে যায় এবং আমি যেন নিয়মিত হাঁটি, সেটা সে নিশ্চিত করে। প্রতিদিন খেলা শুরু হওয়ার আগে আমি হাঁটি। আমি বাইরে থাকতে পছন্দ করি।”
“আমাদের তিনটি ছোট সন্তান আছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদেরকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হয়। তবে আমরা ফিটনেস নিয়ে কাজ করার জন্য সময় বের করে নিই এবং আমি এটা সত্যিই খুব উপভোগ করি। এর পেছনে অনেক পরিশ্রম রয়েছে।”
স্ত্রী অনুপ্রেরণা যোগান। রজার ফ্যাব্রি আর অন্য ফিটনেস স্টাফরা পথ দেখান। তবে সেই পথটা ওয়ার্নার পাড়ি দেন নিজের তীব্র ইচ্ছাশক্তির জোরেই - কখনো হেঁটে, কখনো দৌড়ে।