আকাশে ছিলাম না, মাটির তলেও যাইনি: সাকিব

বিশ্বকাপের অভাবনীয় সাফল্যকে সঙ্গী করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নেমেছিলেন সাকিব আল হাসান। এখানে দেখলেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। নিজে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি পারফরম্যান্সে। তার নেতৃত্বে হেরেছে দল। তবে সাফল্যের উচ্ছ্বাস কিংবা ব্যর্থতার হতাশা, কোনোটাই তীব্র নয় বাংলাদেশ অধিনায়কের। জানালেন, তিনি স্বাভাবিকই আছেন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2019, 09:29 AM
Updated : 10 Sept 2019, 11:25 AM

চট্টগ্রাম টেস্টে বোলিং খুব খারাপ করেননি সাকিব। প্রথম দিনে বল হাতে একটু অচেনা থাকলেও পরে প্রথম ইনিংসে নেন দুই উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট নেন তিনটি। ব্যাটিংয়ে দুই ইনিংসে করেন ১১ ও ৪৪।

ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সেরা পারফরমার তিনি বরাবরই। দেশের সবসময়ের সেরা ক্রিকেটার হয়ে গেছেন বেশ আগেই। গত ১০ বছরে আইসিসি অলরাউন্ডারদের র‍্যাঙ্কিংয়ে তার দাপটেই প্রমাণ হয় শ্রেষ্ঠত্বের।

গত বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স সাকিবের ক্যারিয়ারে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে রাঙিয়েছেন আসর। বিশেষ করে ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় ধাঁধিয়ে দিয়েছেন চোখ।

কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে সাকিবের ব্যাটিংটাই ভুগিয়েছে দলকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রান করেছেন বটে। কিন্তু ম্যাচের শেষ ৭০ মিনিট টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ যখন বাংলাদেশের সামনে, বৃষ্টি বিরতির পর প্রথম বলেই ভীষণ দৃষ্টিকটু এক শটে প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দলের পরাজয়ের পথে এগিয়ে যাওয়া তার ওই শট থেকেই।

পাশাপাশি নেতৃত্বে আফগানিস্তানের কাছে এমন বড় হারের বিব্রতকর অভিজ্ঞতা তো আছেই। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের পর নিজের প্রথম ম্যাচেই সাকিব পেলেন তেতো স্বাদ।

তবে সাকিব নিজে এসবে খুব ভাবিত নন। প্রতিক্রিয়ায় তার ক্যারিয়ার জুড়ে বেশির ভাগ সময়ই আবেগের প্রকাশ ছিল সামান্য। এবারও তার কথায় সেটিই ফুটে উঠল।

“না, বিশ্বকাপে ভালো খেলার পর আমি মনে করিনি যে আকাশে ছিলাম, না মনে করছি এই ম্যাচ খারাপ খেলার পর মাটির তলে চলে গেছি। বিষয়টি এমন নয়। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি। এখন এটা কে কিভাবে নিবে বা কে কিভাবে চিন্তা করবে এটা তাদের ব্যাপার।”

“আমি সবসময় যেটি বলেছি যে চেষ্টা থাকে কিভাবে ভালো করতে পারি। সবসময় অবদান রাখতে পারব না, এটি খুবই স্বাভাবিক। একটা ম্যাচ খারাপ যেতেই পারে।”

খারাপ-ভালো সময় ক্রিকেটীয় নিয়মেই আসে। কিন্তু এই প্রসঙ্গেই সাকিবের কণ্ঠে বিরক্তি ফুটে উঠল সতীর্থদের অনেককে নিয়ে।

“যদি তেমনই হয় (সবসময় কয়েকজনেরই অবদান রাখতে হয়), তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ম্যাচ ফি বেশি আমাদেরই দেয়া উচিত। কারণ কিছু খেলোয়াড়...যদি সবসময় ওরাই খেলবে, তাহলে ওদের ম্যাচ ফি বেশি হওয়া উচিত আমার কাছে মনে হয়।”

চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিকের উদাহরণ দিয়ে সাকিব বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন দলের কয়েক জনকে নিয়ে। নিশ্চিত আউট জানার পরও রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশের শেষ রিভিউটি নষ্ট করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরে তাইজুল ইসলামকে আম্পায়ার ভুল আউট দিলেও বাংলাদেশের ছিল না কোনো রিভিউ।

শেষ জুটিতে যখন নাঈম হাসানের সঙ্গে লড়ছেন সৌম্য সরকার, দ্বিধান্বিত ছিলেন তিনি স্ট্রাইক দেওয়া-নেওয়া নিয়ে। এক পর্যায়ে একটি শট খেলে রান নিতে গিয়ে সৌম্য বুঝতে পারেন, নাঈম স্ট্রাইকে চলে যাচ্ছে। উইকেটের মাঝপথেই মাথায় হাত দিয়ে বসেন।

এসব দেখে হতাশ সাকিব। ভুল থেকে আদৌ শিক্ষা কবে নেবে তারা, অধিনায়ক নিজেও সংশয়ে।

“তাইজুলের আউট যদি দেখেন, ব্যাট-প্যাড ছিল। তার আগে মিরাজের আউটে যেটা হয়েছে, যে একদিন ক্রিকেট খেলেছে তারও বোঝা উচিত ছিল ওটা নিশ্চিত আউট। স্বাভাবিকভাবে সে যদি রিভিউটা না নিত, তাহলে তাইজুল নিতে পারতো। তাইজুল আগের ইনিংসেও ভালো ব্যাটিংই করেছিল। অনেকক্ষণ ডিফেন্স করেছিল। এই ধরণের ভুল ভ্রান্তিগুলো হয়।”

“কিংবা সৌম্য যখন রানটা নিয়ে মাথায় হাত দিচ্ছে। ও আসলে বুঝতে পারছে না ওর ভূমিকাটা কী, কী করা উচিত। এই জিনিসগুলো থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, বোঝার আছে। এখন কতদিন যে লাগবে শিখতে, এটা বড় ব্যাপার।”