লুইস ঝড়ে ফাইনালে কুমিল্লা

বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে রংপুর রাইডার্সকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন বেনি হাওয়েল। তবে প্রাথমিক পর্বে দুইবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে গুঁড়িয়ে দেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজার দল এবার আর পেরে উঠেনি। এভিন লুইসের দায়িত্বশীল ইনিংসে শিরোপাধারীদের হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে কুমিল্লা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2019, 02:26 PM
Updated : 4 Feb 2019, 07:11 PM

প্রথম কোয়ালিফায়ারে সোমবার ৮ উইকেটে জিতেছে কুমিল্লা। ১৬৬ রানের লক্ষ্য ৭ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে তারা। ২০১৫ আসরের পর এই প্রথম বিপিএলের ফাইনালে উঠলো কুমিল্লা।

ফাইনালে যাওয়ার আশা টিকে আছে রংপুরের। আগামী বুধবার ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলবে তারা।

প্রাথমিক পর্বে দুইবারই ৯ উইকেটে রংপুরের কাছে হেরেছিল কুমিল্লা। সেই দুই ম্যাচে ৬৩ ও ৭২ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলটি এবার দেড়শ ছাড়ানো লক্ষ্য পেরিয়ে গেল অনায়াসে।

এতে সবচেয়ে বড় অবদান লুইসের। ক্যারিবিয়ান বিস্ফোরক বাঁহাতি এই ওপেনার ৫৩ বলে তিন ছক্কা আর পাঁচ চারে করেন ৭১ রান।   

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি রংপুরের। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩৪ রান তুলতে মেহেদি মারুফ ও মোহাম্মদ মিঠুনকে হারায় তারা।

বাঁহাতি পেসার ওয়াহাব রিয়াজের বলে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন মারুফ। ক্রিস গেইলের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান মিঠুন।

দুই ব্যাটসম্যানের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি এতোটাই ছিল যে কেউই সময় মতো পৌঁছাতে পারেননি। তামিম ইকবালের থ্রো ধরে এনামুল হক বেলস ফেলে দেওয়ার সময় বেশ দূরে ছিলেন মিঠুন। কুমিল্লার কিপারের আন্ডার আর্ম থ্রো অন্য প্রান্তের বেলস ফেলে দেওয়ার সময় কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন গেইলও! মিঠুন আউট না হলে ফিরে যেতে হতো বাঁহাতি এই ওপেনারকে।  

অনেক ডট বল খেলার মাঝে কিছু বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন গেইল। তবে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি এই ক্যারিবিয়ান। সঞ্জিত সাহা বেশ ভোগান তাকে। গেইলের উইকেটও পেতে পারতেন তরুণ এই অফ স্পিনার। তবে ডিপ স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ মুঠোয় নিতে পারেননি মেহেদি হাসান।

পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে মেহেদিই বিদায় করেন গেইলকে। ৪৪ বলে খেলা বাঁহাতি এই ওপেনারের ৪৬ রানের ইনিংস গড়া ছয়টি চার ও একটি ছক্কায়। সঞ্জিতকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হয়ে ফিরে যান রবি বোপারা।

সাবধানী ব্যাটিংয়ে এগোনো রাইলি রুশো জীবন পান ব্যক্তিগত ১৯ রানে। শহিদ আফ্রিদির বলে তার সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি ওয়াহাব। জীবন পাওয়ার পর শট খেলতে শুরু করেন রুশো। আফ্রিদিকে ছক্কা হাঁকিয়ে ডানা মেলেন প্রথম ১০ বলে ৫ রান করা হাওয়েল।

রুশো ও হাওয়েলের ব্যাটে শেষ ৫ ওভারে ৭৪ রান যোগ করে রংপুর পেরিয়ে যায় দেড়শ। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের স্লোয়ারে কট বিহাউন্ড হয়ে থামেন রুশো। ভাঙে তার সঙ্গে হাওয়েলের ৭০ রানের জুটি। রুশো ৩১ বলে চারটি চার ও দুই ছক্কায় করেন ৪৪ রান।

শেষের দিকে খুনে ব্যাটিংয়ে কুমিল্লার বোলিং এলোমেলো করে দেন হাওয়েল। নিজের শেষ ১৮ বলে এই অলরাউন্ডার তুলেন ৪৮ রান। শেষ পর্যন্ত ২৮ বলে পাঁচ ছক্কা ও তিন চারে অপরাজিত থাকেন ৫৩ রানে।

বাজে ফিল্ডিং এদিন বেশ ভুগিয়েছে কুমিল্লাকে। ছুটেছে ক্যাচ। হাত গলে হয়েছে বাউন্ডারি।

রান তাড়ায় তামিমের সঙ্গে ৩৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভালো শুরু এনে দেন এভিন লুইস। মাশরাফিকে ছক্কা হাকানোর পর শর্ট বল লেগে ঘুরাতে গিয়ে ক্যাচ দেন তামিম। বাঁহাতি এই ওপেনার একটি করে ছক্কা-চারে ফিরেন ১৭ রান করে।

দ্বিতীয় উইকেটে এনামুলের সঙ্গে ৬৩ বলে ৯০ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান লুইস। এনামুলকে বোল্ড করে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন শফিউল ইসলাম। কুমিল্লার কিপার ব্যাটসম্যানের ৩২ বলে খেলা ৩৯ রানের ইনিংস গড়া দুটি করে ছক্কা-চারে।

তৃতীয় উইকেটে লুইসের সঙ্গে ২২ বলে ৪১ রানের জুটিতে বাকিটা সহজেই সারেন শামসুর রহমান। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৫ বলে দুই ছক্কা ও চারটি চারে অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে।

৫৩ বলে খেলা ৭১ রানের দারুণ ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন লুইস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৬৫/৫ (গেইল ৪৬, মারুফ ১, মিঠুন ৩, রুশো ৪৪, বোপারা ৩, হাওয়েল ৫৩*, নাহিদুল ৬*; সাইফ ৪-০-৪২-১, মেহেদি ৪-০-২৮-১, ওয়াহাব ৪-০-৪৯-১, সঞ্জিত ৪-০-১৪-১, আফ্রিদি ৩-০-১৯-০, থিসারা ১-০-৭-০)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৮.৫ ওভারে ১৬৬/২ (তামিম ১৭, লুইস ৭১*, এনামুল ৩৯, শামসুর ৩৪*; নাহিদুল ৩-০-১৮-০, সোহাগ ২-০-১৫-০, মাশরাফি ৪-০-৪৩-১, রেজা ২.৫-০-২৯-০, হাওয়েল ২-০-১৯-০, শফিউল ৩-০-২১-১, বোপারা ২-০-২০-০)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: এভিন লুইস