থিসারা তাণ্ডবের পরও চিটাগংকে জেতালেন মুশফিক

বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন থিসারা পেরেরা। রান তাড়ায় শুরুতে চিটাগং ভাইকিংসকে পথ দেখালেন মোহাম্মদ শাহজাদ। শেষে দুর্দান্ত এক ইনিংসে ব্যবধান গড়ে দিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচে দারুণ এক জয় পেল তার দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2019, 02:38 PM
Updated : 13 Jan 2019, 05:04 PM

বিপিএলে রোববারের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ উইকেটে জিতেছে মুশফিকের দল। ১৮৫ রানের লক্ষ্য ২ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় চিটাগং। চলতি আসরে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি কুমিল্লার। রানের খাতা খোলার আগেই কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান তামিম ইকবাল। দ্রুত বিদায় নেন এনামুল হক।

অনেকটা সময় ক্রিজে কাটানো এভিন লুইস তুলতে পারেননি প্রত্যাশিত ঝড়। চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়ার আগে ক্যারিবিয়ান এই বাঁহাতি ওপেনার ৩৪ বলে করেন ৩৮। 

ভালো শুরুটা বড় করতে পারেননি ইমরুল কায়েস। কুমিল্লা অধিনায়ককে বিদায় করার পর লিয়াম ডসন ও শহিদ আফ্রিদিকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া কুমিল্লাকে পথ দেখান থিসারা। শ্রীলঙ্কার হয়ে নিউ জিল্যান্ডে দাপুটে ব্যাটিং করা এই অলরাউন্ডার রোববার সকাল ১১টায় পৌঁছান ঢাকায়। সেই ছন্দ যেন নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশেও। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের উইকেটেও করেছেন সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং।

১৪তম ওভারে ক্রিজে আসা থিসারার শুরুটা ছিলো সাবধানী। প্রথম তিন বল ডট খেলেন। খালেদের করা সেই ওভারের শেষ বলে দুই নিয়ে খোলেন রানের খাতা।

বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলামের করা পরের ওভারে তিন ছক্কায় তুলে নেন ২১ রান। পরের দুই ওভারে লঙ্কান অলরাউন্ডারকে চড়াও হতে দেননি নাঈম হাসান ও রবি ফ্রাইলিঙ্ক।

১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে আবু জায়েদকে ছক্কায় ওড়ানো থিসারা পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ধরে রাখেন স্ট্রাইক। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত চিটাগংয়ের সেরা বোলার ফ্রাইলিঙ্কের ওপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে যায় পরের ওভারে। চার ছক্কা ও এক চারে ৩০ রান তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

এই ওভারেই ২০ বলে ফিফটিতে পৌঁছান থিসারা। এবারের আসরে এটা দ্রুততম ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ২৬ বলে ৮ ছক্কা ও তিন চারে অপরাজিত থাকেন ৭৪ রানে। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে দুই অলরাউন্ডার ৪০ বলে যোগ করেন ৯৮ রান!

বড় রান তাড়ায় মোহাম্মদ শাহজাদের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় চিটাগং। ক্যামেরন ডেলপোর্টকে ফিরিয়ে ৫.২ ওভার স্থায়ী ৫৮ রানের জুটি ভাঙেন সাইফ। দ্রুত ফিরেন ইয়াসির আলী চৌধুরী।

অন্য প্রান্তে রান আসছিল না। তাই রানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন শাহজাদ। লেগ স্পিনার আফ্রিদিকে ছক্কায় উড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন ডসনের হাতে। আফগান কিপার ব্যাটসম্যান ২৭ বলে ফিরেন ৪৬ রান করে।

চিটাগংয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন অধিনায়ক মুশফিক। তবে সমীকরণ ছিল বেশ কঠিন। শেষ ২৪ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ৫৩ রান, উইকেট ছিল ৬টি।

সাইফের এক ওভার থেকে ছক্কা-চারে ১৫ রান নিয়ে সমীকরণ একটু সহজ করেন মুশফিক। আবু হায়দারের পরের ওভারে দুই ছক্কায় তুলে নেন ১৪ রান। জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে দরকার ছিলো ২৪। সাইফের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারে একটি করে ছক্কা-চারে ১৭ রান নিয়ে দলকে জয়ের দুয়ারে রেখে ফিরেন মুশফিক।

৩০ বলে ফিফটিতে পৌঁছানো চিটাগং অধিনায়ক ৪১ বলে সাত চার ও চার ছক্কায় করেন ৭৫ রান। ডসনকে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়া ফ্রাইলিঙ্ক অপরাজিত থাকেন ৯ রানে।

ব্যবধান গড়ে দেওয়া ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন মুশফিক। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৮৪/৫ (তামিম ০, লুইস আহত অবসর ৩৮*, এনামুল ১০, ইমরুল ২৪, ডসন ২, আফ্রিদি ২, সাইফ ২৬*, থিসারা ৭৪*; ফ্রাইলিঙ্ক ৪-১-৪৯-১, নাঈম ৪-০-২০-০, ৩-০-, আবু জায়েদ ৪-০-৪১-১, খালেদ ৪-০-৩৪-৩, মোসাদ্দেক ২-০-১৩-০, সানজামুল ২-০-২৫-০)

চিটাগং ভাইকিংস: ১৯.৪ ওভারে ১৮৬/৬ (শাহজাদ ৪৬, ডেলপোর্ট ১৩, ইয়াসির ৪, মুশফিক ৭৫, নাজিবউল্লাহ ১৩, মোসাদ্দেক ১২, ফ্রাইলিঙ্ক ৯*, নাঈম ১; আবু হায়দার ৩-০-৩০-০, মেহেদি ৪-০-৩০-১, সাইফ ৪-০-৪৫-৩, ডসন ২.৪-০-৩৪-০, আফ্রিদি ৪-০-১৫-১, থিসারা ২-০-২৮-০)

ফল: চিটাগং ভাইকিংস ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম