সফলতম আইপিএলে সাকিবের অতৃপ্তি ব্যাটিং

দল আস্থা রেখেছিল তার ওপর। তিনি প্রতিদান দিয়েছেন অনেকটাই। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে প্রথম মৌসুমে নিজের আইপিএল ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুম কাটিয়েছেন সাকিব আল হাসান। টুর্নামেন্ট শেষে পেছন ফিরে তাকিয়ে তার একটিই অতৃপ্তি, আরেকটু ভালো করা যেত ব্যাটিংয়ে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2018, 11:06 AM
Updated : 28 May 2018, 11:21 AM

ছয় মৌসুম কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলার পর সাকিব এবার প্রথমবার খেলেছেন অন্য দলে। নতুন দল, নতুন পরিবেশ। দায়িত্বও ছিল নতুন, সাকিব নিজেকে চিনিয়েছেন নতুন করে।

এমনিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার নতুন করে চেনানোর আছে সামান্যই। অনেক দিন ধরেই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। তবে আইপিএলে নিজের মানে পারফর্ম করতে পারা বা সেই সুযোগ আগে খুব বেশি পাননি। একটা পর্যায়ের পারফরম্যান্স কলকাতার হয়েও প্রায় নিয়মিত ছিল। তবে ওই দলটির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পেয়েছেন কম সময়ই। খুব একটা হতে পারেনি দলের অবিচ্ছেদ্দ অংশ।

এবার যেখানে ছিল উল্টো। আইপিএল শুরুর কদিন পর বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব জানিয়েছিলেন, হায়দরাবাদ তাকে দল নেওয়ার পরপরই যোগাযোগ করেছে এবং তাকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিয়েছে। দলের কাছে গুরুত্ব পেয়ে নিজের বাড়তি তাগিদের কথাও বলেছিলেন। টুর্নামেন্ট জুড়েও দেখা গেছে অধিনায়ক ও ম্যানেজমেন্টের আস্থা পেয়েছেন সাকিব। দলের সেই ভরসার প্রতিদান মিলেছে সাকিবের পারফরম্যান্সে।

কলকাতার হয়ে দুইবার আইপিএল শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন সাকিব। তবে সাত মৌসুমে এই প্রথমবার খেললেন টুর্নামেন্টের সব ম্যাচ। ছিলেন হায়দরাবাদের ১৭ ম্যাচের সবকটিতে।

ছবি: বিসিসিআই

দলে থিতু জায়গা পাওয়ায় পারফরম্যান্সেও ছিল ধারাবাকিতা। ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই সাকিব ছাড়িয়ে গেছেন নিজের আগের সেরা মৌসুমকে।

এবার ২৪.৪ গড়ে ওভারপ্রতি ৮ করে রান দিয়ে সাকিব নিয়েছেন ১৪ উইকেট। আগের সেরা ছিল ২০১২ আইপিএলে ১২ উইকেট। উইকেট ১৪টি দেখে পুরোপুরি বোঝা যাবে না তার অবদান। বোলিং আক্রমণে ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রশিদ খানের সঙ্গে মিলে গড়েছিলেন দারুণ স্পিন জুটি।

অনেক ম্যাচেই তাকে ব্যবহার করা হয়েছে পাওয়ার প্লেতে। সেখানে রান আটকেছেন সাকিব, এনে দিয়েছেন উইকেট। মাঝের ওভারেও এনে দিয়েছেন ব্রেক থ্রু। অনেক ম্যাচেই চাপে ফেলেছেন প্রতিপক্ষকে।

ব্যাটিংয়ে ১৩ ইনিংসে ২১.৭২ গড়ে ১২১.৩১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৩৯ রান। ২০১৪ আসরে ২২৭ রান ছিল তার আগের সেরা।

তবে সাকিবের আক্ষেপের জায়গা এই ব্যাটিংয়েই। আইপিএল ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম ব্যাটিংয়ে অর্ডারে গুরুত্ব পেয়েছিলেন সাকিব। নিয়মিতই সুযোগ পেয়েছেন চার-পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ের। বেশ কয়েকটি ম্যাচে খুব ভালো শুরুও করেছেন। তার ২০-২২ রানের ইনিংসে জুটি গড়ে উঠেছে, দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। কিন্তু একটি ইনিংসও বড় করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ছিল ৩৫। রানের দিক থেকে নিজের সেরা মৌসুম হলেও তাই রানের ঝুলি খুব ভারী নয়।

ছবি: বিসিসিআই

সোমবার দুপুরে আইপিএল থেকে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাকিব জানালেন, এই অতৃপ্তি কাজ করছে তার ভেতরেও।

“ভালোই কেটেছে আইপিএল। তবে আরও ভালো হতে পারত। এমনিতে দলের যে ফল হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট। ব্যক্তিগত দিক থেকেও সন্তুষ্ট। একটা অতৃপ্তি আছে, সেটা হলো প্রায় প্রতি ম্যাচেই ভালো শুরু করার পরও রানটা বড় করতে পারিনি।”

তবে সেই অতৃপ্তিকে সামনে নিতে চান না সাকিব। আইপিএল অভিযান শেষে এখন জাতীয় দায়িত্ব পূরণের পালা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ ভারতেই। আইপিএল অভিজ্ঞতা আসছে সিরিজে কাজে দেবে, বলছেন সাকিব।

“একই কন্ডিশন, একই জায়গায় খেলা। অবশ্যই কাজে আসবে আইপিএল অভিজ্ঞতা। যদিও দেরাদুনে আমাদের ম্যাচ ছিল না। তার পরও আমার ধারণা একইরকম হবে। ভারতে সাধারণত যে ধরণের উইকেট থাকে, তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। অবশ্যই কাজে লাগবে অভিজ্ঞতা।”

অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর আগে অবশ্য দিন দুয়েক বিশ্রামে থাকবেন সাকিব। বাংলাদেশ দল দেরাদুনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে মঙ্গলবার, সাকিব যাবেন বৃহস্পতিবার। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু আগামী রোববার।