লিটন ঝড়ের পর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে রান

মূল স্কোয়াডের অংশ ছিলেন না তিনি। সুযোগ পেয়েছেন সাকিব আল হাসানের বদলি হিসেবে। প্রস্তুতি ম্যাচে খেলতে পারলেন তামিম ইকবাল বিশ্রামে বলে। সুযোগটা এমনভাবে কাজে লাগালেন লিটন দাস, যে এখন সেরা একাদশেও বিবেচনা করতে হবে তাকে! প্রস্তুতি ম্যাচে ঝড় তুলেছেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। পরে দারুণ খেলেছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2018, 06:54 AM
Updated : 6 March 2018, 09:16 AM

ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে অনুশীলনটা ভালোই হলো বাংলাদেশের। ব্যাটিংয়ে বড় রানের পর খারাপ হয়নি বোলিংটাও। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট প্রেসিডেন্ট একাদশকে ৪১ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব মাঠে ২০ ওভারে বাংলাদেশ করে ১৮৬ রান। ক্রিকেট শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট একাদশ গুটিয়ে যায় ১৪৫ রানে।

১৮ বলে ৪০ রান করেছেন লিটন। ইনিংসের একমাত্র অর্ধশতক মুশফিকের ব্যাটে, ৪৪ বলে ৬৫। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ২৭ বলে ৪৩ রানের ইনিংস।

বোলিংয়ে স্বস্তি হয়ে এসেছে রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদের পারফরম্যান্স। ৩ ওভারে ১৬ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, ১৯ রানে দুটি রুবেল।

প্রস্তুতি ম্যাচ হিসেবে বেশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মূল স্কোয়াডে থাকা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা দলটির অধিনায়ক। দলে আছেন নিরোশান ডিকভেলা, সাদিরা সামারাবিক্রমা, লাকশান সান্দাকান, জেফ্রি ভ্যান্ডারসে, অ্যাঞ্জেলো পেরেরা, আসিথা ফার্নান্দো, লাহিরু কুমারার মতো শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটাররা। দুই দলের একাদশেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যাটিং-বোলিং করেছেন স্কোয়াডে থাকা ১৬ জনের প্রায় সবাই।

কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব মাঠের উইকেট ঘাসে ভরা। তবে বেশিরভাগই মরা ঘাস। বল ব্যাটে এসেছে বেশ ভালো। প্রস্তুতি ম্যাচ বলে টস হয়নি, আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয় বাংলাদেশকে।

পিএসএল খেলে আসায় তামিম বিশ্রামে থাকায় সৌম্য সরকারের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন লিটন। প্রথম ওভারেই বাংলাদেশ হারায় সৌম্যকে।

মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আসিথা ফার্নান্দোর স্টাম্পে থাকা বল ফ্লিক করতে গিয়ে বোল্ড সৌম্য। তিনে নামা সাব্বির ফিরেছেন ১০ বলে ১ রান করে। আউট হওয়ার ধরনও ছিল দৃষ্টিকটু। চতুর্থ ওভারে পেসার শেহান ড্যানিয়েলসের অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট ফাইন লেগে। ১৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে তখন চাপে বাংলাদেশ।

সেই চাপ উড়ে যায় লিটনের ব্যাটে। ড্যানিয়েলসকে লং অন দিয়ে যে ছক্কা মারলেন, সেটি ছক্কা হতো সম্ভবত বিশ্বের যে কোনো ক্রিকেট মাঠেই। পরের ওভারে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কা লাহিরু কুমারাকে। ওই ওভারেই ফ্লিক করে চার।

আরেক পাশে মুশফিকও শুরু থেকে খেলেছেন দারুণ। ড্যানিয়েলসকে দৃষ্টিনন্দন কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু। ষষ্ঠ ওভারে লেগ স্পিনার জেফ্রি ভ্যান্ডারসের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক। মুশফিক স্বাগত জানান আরেকটি কাভার ড্রাইভে চার মেরে। শুরুর চাপ সরিয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তোলে ৫১ রান।

ইনিংস জুড়ে ফ্লিক শট সবচেয়ে ভালো খেলেছেন লিটন। আউট হয়েছেন ফ্লিকেই। পেসার থিকশিলা ডি সিলভাকে বেরিয়ে এসে ফ্লিক করে ক্যাচ দিয়েছেন মিড উইকেটে। ১৮ বলে ৪০ রানের ইনিংসে চার চারটি, ছক্কা তিনটি।

বাংলাদেশের ইনিংস ততক্ষণে গতি পেয়ে গেছে। ভ্যান্ডারসের লেগ স্পিনে স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন মুশফিক। চায়নাম্যান সান্দাকানকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ।

মুশফিক পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৩৯ বলে। পরের ওভারে কুমারাকে পুল করে ছক্কায় উদযাপন করেন ফিফটি। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটির পঞ্চাশ আসে ৩১ বলে।

আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় মুশফিকের ইনিংস। ছয়টি চার ও তিন ছক্কায় ৪৪ বলে ৬৫।

খানিক পর স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ। তিনটি ছক্কা এসেছে তার ব্যাট থেকেও, চার দুটি।

শেষ দিকে বল প্রতি রান করলেও প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি আরিফুল হক ও নুরুল হাসান। ১২ বলে ১৫ করেছেন আরিফুল, ৯ বলে ১২ নুরুল। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশে তুলেছে ৩৮।

শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দু্ইশ রানের ঠিকানায় যেতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে জয়ের জন্য যথেষ্ট হয় সেই রানই।

শুরুতে যদিও কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন নিরোশান ডিকভেলা। ম্যাচের প্রথম বলেই আবু জায়েদকে স্কুপ করার চেষ্টা করে পারেননি। পরের বলে ঠিকই সফল, স্কুপ করে ছক্কা!

প্রথম চার ওভারে চার পেসারকে বোলিংয়ে আনেন মাহমুদউল্লাহ। ডিকভেলার ঝড় থামান রুবেল। ১৩ বলে ২৭ রান করা ব্যাটসম্যান পয়েন্টে ক্যাচ দেন সাব্বিরকে।

এরপর সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি আর কেউ। ত্রিদেশীয় সিরিজের শ্রীলঙ্কা দলে থাকা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা তিন চারের পর ফিরেছেন ১৪ রানে। মিডল অর্ডারে অ্যাঞ্জেলো পেরেরা করেছেন ২২।

নয় জন বোলার হাত ঘুরিয়েছেন বংলাদেশের হয়ে। অধিনায়ক বেশি পরখ করতে চেয়েছেন পেসারদেরই। তাসকিন ও রুবেল ভালো করলেও আবু জায়েদ ও আবু হায়দার ছিলেন বিবর্ণ।

তবে দল হিসেবে প্রস্তুতি ম্যাচটি স্বস্তিই দেবে বাংলাদেশকে। সাব্বিরের রান না পাওয়া, শুরুর পাঁচ ও শেষের পাঁচ ওভারে ততটা ঝড় না ওঠা কিংবা নতুন বলে খরুচে শুরু, এসব ঘাটতি ছিলই। তার পরও মূল টুর্নামেন্টের আগে এই জয় জোগাবে আত্মবিশ্বাস। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮৬/৫ (লিটন ৪০, সৌম্য ০, সাব্বির ১, মুশফিক ৬৫, মাহমুদউল্লাহ ৪৩, আরিফুল ১৫*, নুরুল ১২*; ফার্নান্দো ২/২২, ড্যানিয়েলস ১/১৪, কুমারা ১/৫০, ভ্যান্ডারসে ০/৩৯, থিকশিলা ১/১০, সান্দাকান ০/৫০)

শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট প্রেসিডেন্ট একাদশ: ১৯ ওভারে ১৪৫ (ডিকভেলা ২৭, মুনাবিরা ১০, সামারাবিক্রমা ৪, ধনঞ্জয়া ১৪, পেরেরা ২২, মিলান্থা ১৯, থিকশিলা ৪, ড্যানিয়েলস ১০*, বান্দারা ৭, ভ্যান্ডারসে ১, সান্দাকান ১৩; আবু জায়েদ ২-০-২৮-০, আবু হায়দার ৪-০-৩৫-১, রুবেল ৩-০-১৯-২, তাসকিন ৩-০-১৬-২, সৌম্য ২-০-১৭-১, নাজমুল অপু ১-০-৩-১, আরিফুল ১-০-৮-০, মিরাজ ২-০-১০-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৮-০)।

ফল: বাংলাদেশ ৪১ রানে জয়ী