ইতিহাস বদলানোর আশায় বাংলাদেশ

একটি করে সিরিজ গেছে, একটু করে এগিয়েছে বাংলাদেশ। সময় যত গেছে তত সমৃদ্ধ হয়েছে দেশটির ক্রিকেট। এখন তাই ইতিহাস বদলানোর কথা বলতে পারছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। স্বপ্ন দেখছেন নতুন ইতিহাস রচনার।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতকলম্বো থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2017, 03:17 PM
Updated : 1 April 2017, 03:58 AM

সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠ বা এসএসসিতে স্থানীয় সময় সকাল দশটায় শুরু হবে খেলা। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে রয়েছে সকালে বৃষ্টির সম্ভাবনা। তাতে দুর্ভাবনায় আছে স্বাগতিকরা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ছয় ওয়ানডে সিরিজের একটিতে ড্র করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের সফরে বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল দ্বিতীয় ওয়ানডে। তৃতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে হার এড়িয়েছিল অতিথিরা।

২০০৫/০৬ মৌসুমে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। এর বাইরে অন্য চার সিরিজে লঙ্কানরা জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে, করেছে হোয়াইটওয়াশ।

সেই সময় এখন পাল্টে গেছে। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকারত্নে দিলশানদের বিদায়ের পর পালা বদলের পথে আছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট। বাংলাদেশের ক্রিকেটে রাজত্ব করছে সোনালী প্রজন্ম। অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে তারা। মাঠেও পড়ছে তার প্রতিফলন।

মাশরাফির সঙ্গে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহর উপস্থিতিতে অভিজ্ঞতায় পূর্ণ বাংলাদেশ দল। সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদের মতো তরুণরাও লড়ছেন কাঁধ মিলিয়ে। অনেকের মতে গত কয়েক বছরের মধ্যে এটাই বাংলাদেশের সেরা দল।

বাইরে অপেক্ষায় আছেন ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, শুভাশীষ রায় চৌধুরী, নুরুল হাসান, শুভাগত হোম চৌধুরী। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ তৈরি বাংলাদেশ। স্পিন সহায়ক উইকেটের জন্য আছে যথেষ্ট স্পিনার। কমতি নেই পেস আক্রমণে। ব্যাটসম্যানরা আছেন দারুণ ছন্দে। বাকি শুধু মাঠে নেমে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, সেটাই সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ।  

২০১১ সালের পর সিংহলিজ স্পোর্ট ক্লাব মাঠ বা এসএসসিতে কোনো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে হয়নি। তবে এই মাঠে প্রচুর লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ হয়। এই ম্যাচগুলোতে অবশ্য রান নেই, প্রথম ইনিংসের গড় মোটে ১৪৬। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচে রান হয়, এবারও তেমনই উইকেটের আশা দুই দলের।

মাশরাফি সতীর্থদের তৃতীয় ওয়ানডেতে সতীর্থদের তিনশ রানের লক্ষ্য তাড়ার জন্য তৈরি থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার মাটিতে তিনশ রানের লক্ষ্য তাড়া করে কেউ জেতেনি মনে করিয়ে দেওয়ার পর তার কণ্ঠে ঝরেছে নতুন ইতিহাস রচনার প্রত্যয়।

“ইতিহাস সব সময় বদলায়। বদলায় বলেই নতুন ইতিহাস রচিত হয়। ইতিহাস বলে এখানে তিনশ রান তাড়া করা কঠিন। তবে আমরা জানি, যদি প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে যদি জুটি গড়ে উঠে তাহলে সম্ভব।”

তিনশ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতা সব সময়ই কঠিন। তার মতোই কঠিন দেশের মাটিতে কোনো সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ফল হওয়া সব ম্যাচে হারানো। সেই ২০০৬ সালে শেষবার কোনো অতিথি দল গড়েছিল তেমন নজির। প্রথম ম্যাচে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর শেষ দুই ওয়ানডেতে জিতেছিল পাকিস্তান।

সেই প্রসঙ্গ টেনেছেন বাংলাদেশের কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে। শ্রীলঙ্কায় স্বাগতিকরা কোনো সিরিজে কোনো ম্যাচই শেষ কবে জিতেনি সেটা তার মনেই নেই। তেমন কিছু করতে হলে কোন মানের ক্রিকেটার খেলতে হবে তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই মাশরাফির।

“জিততে পারলে খুবই ভালো লাগবে। তার জন্য আমাদের খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। ওরা যত রান করতে পারবে মনে হবে সেখান থেকে আমাদের ২০/২৫ রান কমানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি তিনশ রান (সম্ভব) হয়, আমাদের চেষ্টা করতে হবে ২৮০ রানের ভেতর রাখার। এমন কিছু করতে পারলে আমাদের জন্য কাজটা সহজ হবে। বারবার বলছি, পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে না পারলে খুব কঠিন হবে।”

২০০৫ সালে শেষবার এসএসসিতে খেলেছে বাংলাদেশ। এই মাঠে একটি জয়ও আছে তাদের। ২০০৪ সালে হংকংকে হারিয়ে এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম জয় পেয়েছিল দলটি। সেই মাঠে আরেকটি জয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

কেমন উইকেট হবে তা নিয়ে মোটেও ভাবছেন না মাশরাফি। সতীর্থদের ওপর তার অগাধ আস্থা, উইকেট যেমনই হোক মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আছে।   

“ইতিহাস বলে, এই মাঠে প্রথম ইনিংসে গড় সংগ্রহ ২৭০/২৮০ রান। তার মানে এখানে তিনশ রানের ওপরে স্কোর হতে পারে। আমি মনে করি, তার জন্য ছেলেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে।”

সব মিলিয়ে টানা পাঁচ ওয়ানডেতে হেরেছে শ্রীলঙ্কা। চোটের সমস্যায় কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে পাচ্ছেও না তারা। বাংলাদেশ আছে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। এমন সময়ে প্রতিপক্ষকে হালকা করে দেখার মারাত্মক ভুল করার কথা ভাবতেও রাজি নন অধিনায়ক।

“ওয়ানডে সব সময় চ্যালেঞ্জিং। যদি দুই-তিনটা ভালো জুটি হয় তখন খেলা পরিবর্তন হয়ে যায়। আমি আশা করছি না যে, খেলা সহজ হবে। ম্যাচ কঠিন হবে। জিততে হলে আমাদের খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে, যেটা আমরা খেলে আসছি।”

শেষ লক্ষ্য তো অবশ্যই জয়। তবে তার আগে সতীর্থদের সবার কাছ থেকে ভালো ক্রিকেট দেখতে চান মাশরাফি।

“ভালো খেলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো খেললে হয় কি, অভ্যাসটা তৈরি হয়। জয়ের সুযোগ তৈরি হয়। তখন জয়ের সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে। ভালো খেলা তাই খুব জরুরি।”

এসএসসিতে সেই ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে জয়ের হাসিতেই হয়তো মাঠ ছাড়বেন মাশরাফিরা। বাংলাদেশের জন্য হতে পারে নতুন শুরু, বদলাতে পারে ইতিহাস।