সৌন্দর্যের আধারে হারের আঁধার কাটার অপেক্ষা

বে ওভালের নেটে ব্যাটিং করে ড্রেসিং রুমে ফিরছিলেন সাকিব আল হাসান। পথে খানিকটা দাঁড়িয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা। কথা হচ্ছিলো এই মাঠ, শহর নিয়ে। কেন উইলিয়ামসন তো তাওরাঙ্গারই সন্তান। টিম সাউদি, কোরি অ্যান্ডারসন, ট্রেন্ট বোল্টসহ বেশ কজন থাকেন এই মাউন্ট মঙ্গানুইতে। সাকিব শুনে অবাক, “ওরা সবাই তো তাহলে এখানকার!”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি মাউন্ট মঙ্গানুই থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2017, 01:20 PM
Updated : 5 Jan 2017, 02:13 PM

গাড়িতে ৯-১০ মিনিটের দূরত্বে যমজ শহর তাওরাঙ্গা ও মাউন্ট মঙ্গানুই। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে বন্দর শহর, বাণিজ্যকেন্দ্র এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, পর্যটনের শহর। বিশেষ করে মাউন্ট মঙ্গানুই। অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের তো বটেই, বিশ্বেরই অন্যতম জনপ্রিয় অবকাশ যাপন কেন্দ্র এটি।

নতুন বছরের প্রথম প্রহর উদযাপনের জন্য ফি বছর এখানে জড়ো হয় লাখ দশেক পর্যটক। ছবির মতো সুন্দর মাউন্ট মঙ্গানুই সৈকতে গিজগিজ করে লোক। গ্রীষ্মে এখানকার আবহাওয়া দারুণ মনোরম। সাউদি-বোল্টদের মত নিউ জিল্যান্ডের অনেকেই নিজের জন্ম ও বেড়ে ওঠার শহর ছেড়ে মঙ্গানুইতে থাকেন। এখন যেমন এখানে ভরা মৌসুম। পর্যটকদের ভীড়ে চারপাশে উৎসবের আবহ।

তবে সেই সৌন্দর্যে বুদ হওয়া কিংবা উৎসবের ছোঁয়া লাগানো, কোনো কিছুরই অবস্থা ঠিক নেই বাংলাদেশ দলের। সৈকতের চিকচিক করা সাদা বালিতে হাঁটা নয়, চিন্তা জুড়ে বে ওভালের ২২ গজে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো। নানা দেশের নানা বৈচিত্রে পর্যটকের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া নয়, ভাবনা জুড়ে ১১ কিউইকে সামলানো। সাগর তলে ডুব বা পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চ-অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজ নয়, মাশাফিরা খুঁজছেন একটি জয়!

উড়তে থাকা কিউইদের বিপক্ষে কাজটি সহজ নয়। তবে প্রতিপক্ষের চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা নিজেদের নিয়ে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই তো একের পর এক উইকেট আর মোমেন্টাম প্রতিপক্ষকে উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ! প্রতিটি ম্যাচের পরে তাই দীর্ঘসময় নিয়ে হয়েছে, হচ্ছে টিম মিটিং। আলোচনা হচ্ছে অনেক কিছুই। মাঠে প্রতিফলন পড়ছে সামান্য। বৃহস্পতিবার মাঠে এসেই টিম মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে ‘টিম পারফরম্যান্স’ নিয়ে। একাট্টা হয়ে খেলা। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সগুলোকে এক সুতোয় গেঁথে জয়ের মালায় রূপ দেওয়া।

উইকেট নতুন কিছু নয়। ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ডের বেশির ভাগ উইকেটের মতোই ব্যাটিংবান্ধব হওয়ার কথা। এখানকার একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে গত জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডের ১৮২ রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কা তুলেছিল ১৭৯। সবশেষ ওয়ানডেতে কিউইদের ২৯৪ রান তাড়ায় লঙ্কানদের রান ছিল ২৫৮।

নেপিয়ার-ক্রাইস্টচার্চের তুলনায় মাঠের সীমানা একটু বড়। আগের চারটি ম্যাচেই যে জায়গায় বাংলাদেশের ছিল ভীষণ ঘাটতি, রানিং বিটুইন দ্য উইকেট, সিঙ্গেলে চুরি করা বা এক রানকে দুই করা, সেটির প্রয়োজনীয়তা এখানে বাড়ছে আরও। যথারীতি টিম মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু মাঠে করে দেখানো তো আরেক ব্যাপার!

এখন তাই কিছু করে দেখানোর পালা। ওয়ানডে সিরিজে সব ম্যাচ হারার পর এখন টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারও দুয়ারে দাঁড়িয়ে। এই সিরিজে টিকে থাকার জন্য শুধু নয়, আসছে টেস্ট সিরিজের আত্মবিশ্বাসের রসদের জন্যও শুক্রবার জয়টা খুব দরকার।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া যদি সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হয়, গ্যালারি থেকে উৎসাহ দেওয়ার লোকেরও অভাব হবে না। আগের চার ম্যাচের চেয়ে এ দিন বাংলাদেশের দর্শক আরও বেশি হবে মাঠে নিশ্চিতভাবেই। অকল্যান্ডের পর তাওরাঙ্গাতেই সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশীর বাস। এছাড়া অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন থেকেও খেলা দেখতে এসেছেন অনেকে। গলা ফাটানোর লোকের অভাব হবে না। স্থানীয় সব বাংলাদেশি ও খেলা দেখতে আসাদের মাঝে প্রবল আগ্রহ, উৎসবের আমেজ।

এই উৎসবে বাড়তি রঙ দিতে পারে একটি জয়। জিতলে বাংলাদেশ দলের কাছেও মঙ্গানুইয়ের সৈকতের সৌন্দর্য বেড়ে যাবে বহুগুণে, সুনীল জলরাশিকে মনে হবে আরও বেশি নীল। সুদূর বাংলাদেশ থেকেও নিউ জিল্যান্ডকে মনে হবে আরেকটু বেশি সুন্দর।

সব সুন্দর মিলতে পারে, শুধু একটি জয়ে!