অবিশ্বাস্য এক ওভারে ভারতের জয় কেড়ে নিলেন ব্রাভো

ঝড় তুললেন এভিন লুইস, জনসন চার্লস। পাল্টা আঘাতে কাঁপিয়ে দিলেন লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা। রান বন্যার ম্যাচে নায়ক হতে পারতেন তাদের কেউ। কিন্তু অসাধারণ এক শেষ ওভারে সবটুকু আলো কেড়ে নিলেন ডোয়াইন ব্রাভো। ১ রানের নাটকীয় জয়ে নায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অলরাউন্ডার। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2016, 06:10 PM
Updated : 28 August 2016, 03:22 PM

টসের সময়ই আভাস মিলেছিল ছোট মাঠে, ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের চোখের পানি-নাকের পানি এক হতে যাচ্ছে। সময় যত গড়িয়েছে সেই অনুমান তত সত্য হয়েছে। ছক্কার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বিশাল লক্ষ্য দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটুর জন্য সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য তাড়ার নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়তে পারেনি ভারত।

শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৮ রান, হাতে ছিল ৭ উইকেট। প্রথম চার বলে চার রানের বেশি নিতে পারেনি অতিথিরা। পঞ্চম বলে আসে দুই রান। শেষ বলে টাই করতে অন্তত এক রান দরকার ছিল। কিন্তু ধোনি শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিলে দারুণ এক জয় পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

শনিবার ফ্লোরিডার সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড রিজিওন্যাল পার্ক স্টেডিয়াম টার্ফ গ্রাউন্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে এভিন লুইসের প্রথম শতকে ৬ উইকেটে ২৪৫ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে জয়ের আশা জাগিয়েও ৪ উইকেটে ২৪৪ রান করে ভারত।

দুই দল মিলিয়ে ৪৮৯ রান-এক ম্যাচে এটাই সর্বোচ্চ। ভারতের ২৪৪ টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান।

টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতার রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিকারে। গত বছর জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৩২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৪ উইকেটে জিতেছিল তারা।

বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই অজিঙ্কা রাহানে ও বিরাট কোহলিকে হারায় ভারত। তবে রোহিত শর্মার সঙ্গে ৮৯ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন লোকেশ রাহুল। ২২ বলে অর্ধশতক করা রোহিত ফিরেন ৬২ রান করে। তার ২৮ বলের ইনিংসটি ৪টি করে ছক্কা-চারে সাজানো।

রোহিতের বিদায়ের পর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে ৮.১ ওভারে ১০৭ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন রাহুল। শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ৪৩ রান করেন ধোনি।

নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি শতক পাওয়া রাহুল অপরাজিত থাকেন ১১০ রানে। তার ৫১ বলের ইনিংসটি ১২টি চার ও ৫টি ছক্কা সমৃদ্ধ। দ্বাদশ ক্রিকেটার হিসেবে তিন ধরনের ক্রিকেটেই শতক পেলেন তিনি। সবচেয়ে কম মাত্র ১৫ ম্যাচ লাগল তার।

এর আগে প্রথম ওভারে ১৭ রান নিয়ে সুরটা ঠিক করে দেন জনসন চার্লস ও লুইস। শুরুতে ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হন জনসন। ২০ বলে করেন অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত ফিরেন ৩৩ বলে ৭৯ রান করে। তার বিধ্বংসী ইনিংসটি গড়া ৬টি চার ও ৭টি ছক্কায়। জনসনের বিদায়ে ভাঙে ৯.৩ ওভার স্থায়ী ১২৬ রানের জুটি।

তিন নম্বরে মারকুটে আন্দ্রে রাসেলকে পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ততক্ষণে দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন লুইস। ২৫ বলে অর্ধশতকে পৌঁছানো এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্ট বিনির এক ওভারে তাণ্ডব চালিয়ে দ্রুততম শতকের রেকর্ড গড়ার আশা জাগান।

বিনির প্রথম ৫ বলে ছক্কা হাঁকান লুইস। শেষ বলটি ছিল ফুলটস। টাইমিংয়ে গড়বড় করে সেই বলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি লুইস। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভির ৪৫ বলে শতকের রেকর্ডও ভাঙতে পারেননি তিনি। ৪৮ বলে পৌঁছান তিন অঙ্কে।

টি-টোয়েন্টিতে এটি পঞ্চম দ্রুততম শতক। ৪৭ বলে শতক করা গেইলের অধিকারেই থাকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেকর্ড।

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই সংস্করণে অভিষেক হয় লুইসের। সেবার রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। এবার ফিরেন ১০০ রানে। তার ৪৯ বলের ইনিংসটি ৯টি ছক্কা ও ৫টি চারে গড়া।

ষোড়শ ওভারে জোড়া আঘাতে রাসেল (১২ বলে ২২) ও লুইসকে ফেরান রবিন্দ্র জাদেজা। তিন বলের মধ্যে দুই ব্যাটসম্যানকে হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষের দিকে ততটা দ্রুত রান তুলতে পারেনি। তবে কাইরন পোলার্ড ও অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েইট দলকে আড়াইশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে ছক্কা ২১টি। টি-টোয়েন্টিতে এর আগে সর্বোচ্চ ১৯টি ছক্কার রেকর্ড ছিল নেদারল্যান্ডসের অধিকারে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েছিল তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ২৪৫/৬ (চার্লস ৭৯, লুইস ১০০, রাসেল ২২, পোলার্ড ২২, ব্র্যাথওয়েইট ১৪, ব্রাভো ১*, সিমন্স ০, স্যামুলেস ১*; শামি ১/৪৮, ভুবনেশ্বর ০/৪৩, বুমরাহ ২/৪৭, অশ্বিন ০/৩৬, জাদেজা ২/৩৯, বিনি ০/৩২)

ভারত: ২০ ওভারে ২৪৪/৪ (রোহিত ৬২, রাহানে ৭, কোহলি ১৬, রাহুল ১১০*, ধোনি ৪৩; রাসেল ১/৫৩, বদ্রি ০/২৫, ব্রাভো ২/৩৭, নারাইন ০/৫০, ব্র্যাথওয়েইট ০/৪৭, পোলার্ড ১/৩০)

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ রানে জয়ী