শান্ত-মিরাজের নৈপুণ্যে শেষ আটে বাংলাদেশ

অসাধারণ এক অপরাজিত শতকে দলের জয়ের ভিত্তি গড়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আবারও অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। স্কটল্যান্ডেকে সহজেই হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শেষ আট নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2016, 06:31 AM
Updated : 31 Jan 2016, 12:56 PM

রোববার কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্কটল্যান্ডকে ১১৪ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় পায় বাংলাদেশ। শান্তর অপরাজিত শতকে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১৪২ রানে।

সকালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা আবারও ছিল অস্বস্তির। আগের ম্যাচের মতো এবারও ত্রাতা শান্ত। এবার আর সত্তরে থামেননি সহ-অধিনায়ক; দলকে উপহার দিয়েছেন এবারের বিশ্বকাপের প্রথম শতক। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যায় আড়াইশ’। দুর্বল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় তাতেই।

রান তাড়ায় কখন জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি স্কটিশরা। দেখা যায়নি রান তাড়ার ইচ্ছেটাও। শুরু থেকেই ছিল উইকেট আঁকড়ে রাখার চেষ্টা। ৪৮ রানের উদ্বোধনী জুটিও তাই হুমকি হতে পারেনি। মিরাজের বলে শান্তর দুর্দান্ত ক্যাচে ওই জুটি ভাঙার পর তারা উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত বিরতিতেই।

শেষ পর্যন্ত ধুঁকতে ধুঁকতে স্কটিশরা অলআউট হয় ১৪২ রানে। ৫০ করেছেন কেবল আজিম দার।

২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার সালেহ আহমেদ শাওন। সঞ্জিত সাহার নিষেধাজ্ঞায় একাদশে সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি স্পিনার আরিফুল ইসলাম নিয়েছেন দুটি। তবে পুরোনো বলে ৩ উইকেট নিয়ে আবারও দলের সফলতম বোলার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন (৩/১৭)। মিরাজ ৯ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট।

সঞ্জিতের বোলিং অ্যাকশন নিষিদ্ধ হওয়ার দু:সংবাদ পেয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। অস্বস্তিটা আরও বাড়ায় শুরুর ব্যাটিং। সকালে শুরুটা ছিল ভীষণ মন্থর।

আগের ম্যাচে দলকে দারুণ শুরু এনে দেওয়া পিনাক ঘোষ এবার ফিরে গেছেন কোনো রান না করেই। নিজের খেলা প্রথম বলেই বেঁচে গিয়েছিলেন জোরাল আবেদন থেকে। তাতে সতর্ক হননি এই বাঁহাতি ওপেনার। দুই বল পর মোহাম্মদ গাফফারের স্টাম্প সোজা আরেকটি ফুল লেংথ বলে ফ্লিক করতে গিয়ে হন এলবিডব্লিউ।

সাইফ হাসান একপ্রান্তে উইকেটে ছিলেন থমকে দাঁড়িয়ে। বলের পর বল করে গেছেন ব্লক। তিনে নেমে জয়রাজ শেখ অবশ্য শুরুটা ভালো করেছিলেন। দ্বিতীয় বলেই পয়েন্টের ওপর দিয়ে মেরেছেন চার। কিন্তু টেকেননি বেশিক্ষণ, মিডিয়াম পেসার গাফফারকেই ফ্লিক করতে গিয়ে টাইমিংয়ের গড়বড়ে ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে।

শুরু থেকেই শম্বুক গতিতে থাকা সাইফ আরও আটকে যান উইকেটে। আগের ম্যাচে ৩১ বলে করেছিলেন ৬। এদিন প্রথম বাউন্ডারি মারার আগে রান ছিল ৩৮ বলে চার!

রানের গতির চেয়েও হতাশাজনক ছিল তার ব্যাটিংয়ের ধরন। নতুন বল হাতে নেওয়া রায়ান ব্রাউনের গড়পড়তা অফ স্পিনেও বলের পর বল শুধু ঠেকিয়ে গেছেন। টানা তিন ওভার মেডেন খেলেছেন ব্রাউনকে; তার বলে প্রথম রান নিয়েছেন ২৩ বল খেলে! একটি বলও সম্ভবত টার্ন করেনি ব্রাউনের; কিন্তু উইকেট থেকে বেরিয়ে বাঁ পায়ের কাজ দেখিয়ে সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টাই করেননি সাইফ। হাফভলি, লেগ স্টাস্পে থাকা বলও খেলেছেন ফিল্ডারের হাতে।

চারে নেমে শান্ত আরেকপ্রান্তে একটু করে করে বাড়িয়েছেন রানের গতি। তার ব্যাটিংয়ে ছিল না কোনো অস্বস্তি। তৃতীয় উইকেটে ১৫০ বলে ১০১ রানের জুটি গড়েন শান্ত ও সাইফ।

সাইফের প্রস্তর যুগের ব্যাটিংয়ে একসময় তাকে ছাড়িয়ে যান শান্ত; টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক তুলে নেন ৭১ বলে। অতি সতর্ক ব্যাটিংয়ের পরও অর্ধশত করতে পারেননি সাইফ। মিচেল রাওয়ের অফ স্পিনে বোল্ড হয়েছেন ১০৮ বলে ৪৯ রান করে; ডট খেলেছেন ৭২টি।

চতুর্থ উইকেট শান্ত ও মিরাজের জুটিতে সত্যিকার অর্থেই গতি পায় দলের ইনিংস। তবে হাতে ৭ উইকেট থাকার পরও শেষ ১০ ওভারে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি দুজন। দুজনের ১০০ রানের জুটি এসেছে ৮৬ বলে। অর্ধশতকের পর গাফফারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন মিরাজ (৪৮ বলে ৫১)।

পরের বলেই গাফফারকে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে শতক ছুঁয়ে ফেলেন শান্ত, ১১১ বলে। শেষ দিকে সাঈদ সরকারের ছোট কিন্তু কার্যকর ইনিংস দলের কাজে এসেছে দারুণ। ৬ বলে ১৬ রানের ইনিংসে বিশাল এক ছক্কায় স্কোরবোর্ডের ওপর দিয়ে বল পাঠান সাঈদ।

শেষ ওভারে দুটি চার মেরে দলকে আড়াইশর ওপারে নিয়ে গেছেন শান্ত; শেষ পর্যন্ত অপরাজিত তিনি ১১৭ বলে ১১৩ রানে।

বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে ওই রান ছিল যথেষ্টরও বেশি। শেষ পর্যন্ত বড় জয়েই শেষ আটে পৌঁছল মিরাজ-শান্তরা। এই নিয়ে মাত্র চতুর্থবার প্লেট পব এড়িয়ে বাংলাদেশ খেলছে মূল পর্বে।