দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত সিরিজ
নিজে থেকেই তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করার কথা অধিনায়ককে বলেছিলেন তিলাক ভার্মা, সুযোগটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে সেঞ্চুরি উপহার দেন ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
Published : 14 Nov 2024, 12:23 PM
তিন নম্বরে তিলাক ভার্মাকে নামতে দেখে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। ধারাভাষ্যকাররাও ছিলেন কিছুটা বিস্মিত। এমনিতে জায়গাটি সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের জন্য বরাদ্দ। তাকে মনে করা হয় টি-টোয়েন্টিতে দুনিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান। ভারতের অধিনায়কও তিনি। অথচ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কি না তার জায়গায় নামলেন তিলাক!
সেই প্রশ্নের উত্তর ব্যাটেই দিয়েছেন তিলাক। ৮ চার ও ৭ ছক্কায় উপহার দিয়েছেন ৫৬ বলে ১০৭ রানের অপরাজিত ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১১ রানে হারিয়ে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে ভারত।
ভারতের হয়ে ১৯ ম্যাচের ছোট্ট টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে আগেও তিন নম্বরে খেলেছেন তিলাক। তবে সাফল্য খুব একটা পাননি। আট ইনিংসে রান ছিল মোট ১২০। সুরিয়াকুমার দলে থাকলে ভারতের হয়ে তিনে খেলেন সাধারণত তিনিই। এই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেও ভারতীয় অধিনায়কই ব্যাট করেছেন এই পজিশনে।
তবে তৃতীয় ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে বদলের কারণটি ম্যাচ শেষে খোলাসা করলেন সুরিয়াকুমার নিজেই।
“তিলাক ভার্মাকে নিয়ে কী বলতে পারি… সে আমার কাছে এসে বলেছিল যে, তিন নম্বরে ব্যাট করতে চায়। আমি তাকে বলেছিলাম, ‘আজকের দিনটি তোমার, উপভোগ করো।’ জানতাম, এমন কিছু করার সামর্থ্য তার আছে। তার জন্য খুবই খুশি আমি।”
“অবশ্যই সামনেও তাকে তিনে ব্যাট করতে দেখা যাবে। সে নিজে এটা চেয়েছে এবং করে দেখিয়েছে। তার জন্য, তার পরিবারের জন্য আমি খুবই খুশি।”
সুরিয়াকুমারের খুশি শুধু তার কণ্ঠে নয়, দেখা গেছে ম্যাচ চলার সময়ও। তিলাকের সেঞ্চুরি হওয়ার পর ডাগআউটে সবার আগে লাফিয়ে উঠেছেন অধিনায়কই। চওড়া হাসিতে তুমুল করতালিতে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ইনিংস শেষে ফেরার পর তরুণ এই ব্যাটসম্যানকে আলিঙ্গনে জড়িয়েছেন।
সেঞ্চুরি পূরণ করার পর মাঠ থেকে উড়ন্ত চুম্বন ছুড়তে দেখা যায তিলাককে। ধারণা করা যায়, সেটি ছিল সুরিয়াকুমারের জন্যই।
ম্যান অব দা ম্যাচ হয়ে তিলাক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন অধিনায়কের প্রতি। দলের প্রয়োজনের সময় এমন ইনিংস খেলতে পেরে ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান উচ্ছ্বাস প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না যেন।
“ভাবতে পারিনি… আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এটা ছিল আমার স্বপ্ন এবং দলের হয়ে সেঞ্চুরি করার উপযুক্ত সময় ছিল এটিই। অনেকটা সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচই ছিল। চাপের মধ্যে ভালো ইনিংস খেলেছি। সব কৃতিত্ব আমার অধিনায়ক সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের, তিনিই আমাকে সুযোগটি দিয়েছেন (তিনে খেলার)। আমি খুবই খুশি।”
“আমি স্রেফ নিজেকে মেলে ধরতে চেয়েছি এবং নিজের মৌলিক খেলাটা খেলতে চেয়েছি। চাপের মধ্যেও নিজের মৌলিকত্বে আস্থা রেখেছি এবং নিজের ওপর ভরসা রেখেছি।”
সেঞ্চুরিয়নের এই ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই সাঞ্জু স্যামনসনকে বোল্ড করে দেন মার্কো ইয়ানসেন। দ্বিতীয় উইকেটে পাল্টা আক্রমণে ৫২ বলে ১০৭ রানের জুটি গড়েন আভিশেক শার্মা ও তিলাক ভার্মা। ৫ ছক্কায় ২৫ বলে ৫০ করে বিদায় নেন ওপেনার আভিশেক। এরপর সুরিয়াকুমার, হার্দিক পান্ডিয়া ও রিঙ্কু সিং মেটাতে পারেননি সময়ের দাবি। দলকে টেনে নেন তখন তিলাক।
শেষ দিকে নেমে কিছুটা সহায়তা করেন রামানদিপ সিং। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে প্রথম বলেই ছক্কা মেরে তিনি শুরু করেন। ৬ বলে ১৫ করে রান আউট হন তিনি শেষ ওভারে। ২০ ওভারে ভারত তোলে ২১৯।
দক্ষিণ আফ্রিকা রান তাড়ায় সেখাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি শুরুতে। পরে পাঁচে নামা হাইনরিখ ক্লসেন চার ছক্কায় ২২ বলে করেন ৪১। শেষ দিকে তাণ্ডব চালিয়ে ম্যাচে কিছুটা উত্তেজনা ফেরান মার্কো ইয়ানসেন। তবে ৫ ছক্কা ও ৪ চারে তার ১৭ বলে ৫৪ রানের ইনিংস যথেষ্ট হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য।
চার ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ায় ভারত নিশ্চিত করে ফেলেছে, সিরিজটি অন্তত হারছে না তারা। সিরিজের শেষ ম্যাচ জোহানেসবার্গে শুক্রবার।