প্রায় একশ স্ট্রাইক রেটে হ্যারি ব্রুকের ৩১৭ রানের ইনিংসটিকে পরাবাস্তব কিছু মনে হচ্ছে জো রুটের কাছে।
Published : 11 Oct 2024, 09:48 AM
প্রায় একশ স্ট্রাইক রেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি। বিশ্বরেকর্ড জুটির অংশ। আরও কত কত রেকর্ডের পাতায় হ্যারি ব্রুকের নাম খোদাই হয়ে গেল, হিসাব রাখাই কঠিন। বিশ্বজুড়ে বোলারদের জন্য অবশ্য আরও ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তাই দিলেন জো রুট। তার বিশ্বাস, ব্রুকের ব্যাটে এমন দানবীয় ইনিংস সামনে দেখা যাবে আরও। শেষ নয় এখানেই। রুটের ধারণা, একদিন তাকে ছাড়িয়ে ইংল্যান্ডের রানের চূড়ায় পৌঁছে যাবেন ব্রুক।
মুলতানের ব্যাটিং স্বর্গে ইংল্যান্ডের রান উৎসবে সবচেয়ে বেশি রঙিন ছিলেন এই দুজনই। ৪৫৪ রানের জুটি গড়েন দুজন। চতুর্থ উইকেটে যা বিশ্বরেকর্ড। যে কোনো জুটিতেই ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
জুটির পথে ক্যারিয়ার সেরা ২৬২ রানের ইনিংস খেলে আউট হন রুট। টেস্ট ক্রিকেট বিবেচনায় যথেষ্টই আক্রমণাত্মক ইনিংস ছিল সেটি। স্ট্রাইক রেট প্রায় ৭০। কিন্তু তার পরও আগ্রাসনে তিনি অনেকটাই আড়ালে পড়ে যান ব্রুকের।
ইংল্যান্ডের ইতিহাসের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ব্রুক। গত ৩৪ বছরে তিনশ ছোঁয়া প্রথম ইংলিশ ব্যাটসম্যান তিনিই।
২৯ চার ও তিন ছক্কায় ৩২২ বলে ৩১৭ রানে শেষ হয় তার ইনিংস। স্ট্রাইক রেট ৯৮.৪৪। ইংল্যান্ডের আগের পাঁচ ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ানের কারও স্ট্রাইক রেট স্পর্শ করেনি ৭০।
টেস্ট ইতিহাসের ৩২টি তিনশ ছোঁয়া ইনিংসের মধ্যে ব্রুকের চেয়ে গতিময় ইনিংস আছে আর কেবল একটি। ২০০৮ সালে চেন্নাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩০৪ বলে ৩১৯ রান করেছিলেন বিরেন্দার শেবাগ, স্ট্রাইক রেট ছিল ১০৪.৯৩।
এই ইনিংসের পথেই অ্যালেস্টার কুককে টপকে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানের রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন রুট। সব ঠিক থাকলে আরও কয়েক বছর খেলবেন তিনি। তার রেকর্ড ভেঙে দেওয়া হবে খুবই কঠিন। তবে এখনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, একদিন রুটকে ছাড়িয়ে যাবেন কি না ব্রুক!
যদিও ব্রুকের ক্যারিয়ারে এখন বলা যায় মাত্র প্রভাতবেলা। তবে সকালের সূর্যেই এতটা তেজ যে, তার আলোয় সামনে সবার চোখ ধাঁধিয়ে যাবে বলেই ধারণা রুটের।
“আশা করি তেমন কিছুই হবে (রুটের রান একদিন ছাড়িয়ে যাবেন ব্রুক)…। এমন একটি আবহ ও দল সবাই গড়তে চায়, যেখানে সবসময় উন্নতি হতেই থাকবে এবং ক্রমে আরও ভালো হয়ে উঠবে। চাওয়া থাকবে এরকম যে, ছেলেরা দলে আসবে এবং এই বিশ্বাস রাখবে যে তারা স্পেশাল কিছু করতে পারে…। ভবিষ্যতে যদি ছেলেরা রেকর্ড ভাঙতেই থাকে, তারা প্রচুর রান করবে এবং ইংল্যান্ডই তাতে উপকৃত হবে।”
“ওর ব্যাটিং একদম পরিপূর্ণ। উইকেটের চারপাশে খেলতে পারে। সিম বোলিং, স্পিন বোলিং, গতিময় বোলিং, সবই ভালো খেলতে পারে এবং রান করার জন্য এর চেয়ে ভালো রেসিপি আর কী হতে পারে! তাকে এরকম স্পেশাল কিছু করতে দেখে মোটেও অবাক হইনি এবং আমার মনে হয় না, এরকম ‘মনস্টার’ স্কোর তার নামের পাশে এটিই শেষবার দেখছি।”
১৯ টেস্ট খেলেই ৬টি সেঞ্চুরি হয়ে গেল ব্রুকের। এর মধ্যে তিনটিতেই ছাড়িয়েছেন দেড়শ। প্রথমবার দেড়শ ছাড়িয়ে থেমেছেন ১৫৩ রানে। পরেরবার করেছেন ১৮৬। এবার পেরিয়ে গেলেন তিনশ। টেস্টে তার ব্যাটিং গড় এখন ৬২.৫০।
ব্রুকের সঙ্গে রুটের সম্পর্ক বেশ পুরোনো। দুজনই ইয়র্কশায়ারের। ইংল্যান্ড দলের বাইরেও একসঙ্গে অনেক খেলেছেন দুজন। সম্পর্কের গাঁথুনি তাই মজবুত। পরস্পরের ব্যাটিং তারা বোঝেন খুব ভালো।
ব্রুকের ৩১৭ রানের ইনিংসে ২৬০ রানই আরেক প্রান্ত থেকে দেখেছেন রুট। এজন্য নিজেকে ভাগ্যবান ভাবেন ইংল্যান্ডের সফলতম টেস্ট ব্যাটসম্যান।
“ব্রুকির সঙ্গে খেলতে পছন্দ করি আমি। ইয়র্কশায়ারে ওর সঙ্গে প্রচুর খেলেছি এবং তাকে এই দলে আসতে দেথা ও টেস্ট ক্রিকেটে সহজেই মানিয়ে নিতে দেখা ছিল দারুণ। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে তার দাপুটে ব্যাটিং ও ৩০০ রান করতে দেখা ছিল সত্যি বলতে পরাবাস্তব একটা ব্যাপার। তার ইনিংসের বড় অংশ কাছ থেকে দেখা এবং এত বড় জুটি গড়া আমার দিক থেকেও ছিল চমৎকার।”
“আরেক প্রান্ত থেকে ওকে দেখলে ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বস্তি মেলে। খেলাটাকে এত সহজ করে তোলে ও, বলকে এত কাছে আসতে দেয় এবং এত দেরিতে খেলে, বোলারদের এতটা ধীরগতির করে তোলে… অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানের কাজটা সহজ হয়ে যায়। পিচ খুব ভালো ছিল (ব্যাটিংয়ের জন্য), আমরা চেয়েছি তা কাজে লাগাতে।”
রুট-ব্রুকের ব্যাটিং তাণ্ডবে ৭ উইকেটে ৮২৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। সড়কের মতো উইকেটেও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান দিন শেষ করে ৬ উইকটে ১৫২ রানে। প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান তুলেও তাই এখন পরাজয়ের মুখে তারা। শেষ দিনে ইনিংস পরাজয় এড়াতেই প্রয়োজন এখনও আরও ১১৫ রান।