‘সাকিবের মতো ক্রিকেটার যে কোনো দলের জন্য আশীর্বাদ’

নিজ দলের অধিনায়ক তো বটেই, অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচ জিতিয়ে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের বাহবাও পেয়েছেন সাকিব আল হাসান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2023, 05:20 PM
Updated : 6 March 2023, 05:20 PM

সিরিজ শুরুর আগে আলোচনায় ছিল সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সম্পর্কের টানাপোড়েন। সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘ সময় নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছিল তামিমকে। সিরিজ শেষের সংবাদ সম্মেলনেও বাংলাদেশ অধিনায়কের কথার অনেকটা জুড়ে থাকলেন সাকিব। তবে এবার সেখানে থাকল শুধুই প্রশংসা। ম্যাচটিকেই যে বলা যায় সাকিবের ম্যাচ!

অনেক স্মরণীয় জয়ের নায়কের হাত ধরেই বাংলাদেশ পেয়েছে আরেকটি স্বস্তির জয়। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোমবার তার অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে। ব্যাট হাতে ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংসের পর বোলিংয়ে ৩৫ রান খরচায় তিনি নিয়েছেন ৪ উইকেট। ম্যাচ সেরার লড়াইয়ে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না এ দিন।

দ্যুতিময় অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের ম্যাচেই বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ৩০০ ওয়ানডে উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পূরণ করেন ৩০০ উইকেট ও ৬ হাজার রানের ডাবল।  

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য পাওয়া যায়নি সাকিবকে। তবে দলের প্রতিনিধি হয়ে এসে অধিনায়কই স্তুতিতে ভাসালেন তার দলের সেরা ক্রিকেটারকে।

“সাকিব অসাধারণ ছিল। সে যেভাবে ব্যাটিং করেছে... বিশেষ করে শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে, তখনকার ওই ২০-২৫ রান খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” 

২৫তম ওভারে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন সাকিব। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে ৭ চারে করেন ৭৫ রান। আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজদের নিষ্প্রভ দিনে শেষ দিকে সাকিবই ছিলেন দলের ভরসা। 

বল হাতেও সেরা রূপে ছিলেন সাকিব। ফিল সল্টকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু দেন তিনি। পরে বিপজ্জনক হওয়ার আভাস দেওয়া জেসন রয়, জেমস ভিন্সকেও ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠান তিনি। 

সাকিবের বোলিং দলের অন্য স্পিনারদেরও সাহায্য করেছে বলে মনে করেন তামিম।

“উইকেটে ততটা স্পিন ধরেনি। কিন্তু সে যেভাবে বোলিং করেছে, সত্যিই দুর্দান্ত ছিল। যা তাইজুলকেও (ইসলাম) আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। ওর (তাইজুল) শুরুটা ভালো ছিল না। সাকিব যেভাবে বোলিং করেছে তা দেখেছে, সাকিবের সঙ্গে কথাও বলেছে। এটি তাই অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল।”

তিন সংস্করণেই সমান তালে পারফর্ম করেন সাকিব। বিশেষ করে বড় ম্যাচ বা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলিতে নিয়মিতই জ্বলে উঠতে দেখা যায় তাকে। তাই পুরনো প্রশ্নটি আবারও উঠল সংবাদ সম্মেলনে, অন্যদের থেকে ঠিক কোন জায়গায় আলাদা সাকিব!

“আমি মনে করি, সাকিব মানসিকভাবে খুব শক্ত। বেশিরভাগ সময় দেখবেন যখন সে চাপে থাকে, এরকম পারফরম্যান্স করে। অতীতেও সে এমন করেছে। সে মানসিকভাবে যেমন শক্ত, তেমনি স্কিলসেটও দারুণ। খুব বেশি ক্রিকেটার এমন নেই, যে কিনা দশ ওভার বোলিং করে এবং তার মতো ব্যাটিং করে। আমি মনে করি, সে দুটিই দারুণভাবে কাজে লাগায়।”

এমন পারফরম্যান্স অবশ্য বছরের পর বছর ধরেই করে আসছেন সাকিব। তার প্রশংসায় বিশেষণেরও কমতি পড়ে যায় কখনও কখনও। সবকিছুই যে ব্যবহার করা হয়ে গেছে নানা সময়ে!

“আমার মনে হয় যে আজকে (সোমবার) তার পারফরম্যান্স অসাধারণ। পুরো ক্যারিয়ারেই সে অসাধারণ করেছে। আমি সবসময় বলি, সাকিবের মতো ক্রিকেটার যে কোনো দলের জন্যই আশীর্বাদ।”

সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের কাছেই ম্যাচ হেরে গিয়ে তার প্রশংসা প্রতিপক্ষ অধিনায়ক জস বাটলারের কণ্ঠেও।

“অবশ্যই সাকিব দুর্দান্ত ক্রিকেটার। তার পরিসংখ্যানই তার হয়ে কথা বলে, তাই নয় কি? তার বিপক্ষে খেলা সবসময়ই বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৯ বিশ্বকাপেও তার পারফরম্যান্স (৬০৬ রান ও ১১ উইকেট) অসাধারণ ছিল। সাকিব দারুণ ক্রিকেটার।”