ম্যাচ গড়াল শেষ ওভারে। ছড়াল দারুণ উত্তেজনা। তবে শেষ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগকে হারিয়ে দিয়ে উল্লাসে মাতল খুলনা বিভাগ।
মেয়েদের দ্বাদশ জাতীয় ক্রিকেট লিগ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এই টুর্নামেন্টের প্রথম দিনে মাঠের লড়াইয়ে নেমেছে ৮টি দল।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে জিতেছে খুলনা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশালের ৮৫ রান পেরুতে শেষ ৬ বলে ৪ রানের প্রয়োজন ছিল তাদের। এই সমীকরণ মেলাতে দলটিকে খেলতে হয় শেষ বল পর্যন্ত।
বরিশালের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসটি আসে নিগার সুলতান ব্যাট থেকে। একটি করে ছক্কা-চারে ৩১ রান করেন তিনি। ১৬ রান করেন দিশা বিশ্বাস।
২৬ রানে ২ উইকেট হারানো খুলনাকে জয়ের ভিত গড়ে দেন শম্পা ও রুমানা আহমেদ। ৫১ রানের জুটি গড়েন তারা তৃতীয় উইকেটে। তাদের দুইজনের বিদায়ের পর কিছুটা চাপে পড়লেও শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে দলটি।
উইকেট না পেলেও মিতব্যয়ী বোলিং করেন রুমানা। ৩ ওভার করে দেন ৮ রান। পরে ২ চারে খেলেন ২৯ রানের ইনিংস। তাতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি।
ওপেনিংয়ে নেমে শম্পা করেন এক চারে ৩৪ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বরিশাল বিভাগ: ২০ ওভারে ৮৫/৬ (মিষ্টি ১৬, শারমিন সুপ্তা ১, নিগার ৩১, সুলতানা ১, শারমিন আক্তার ৭, দিশা ১৬, রাবেয়া ৪*; সুরায়া ৩-০-২৫-০, সোহেলী ৪-০-১৯-১, শরিফা ৪-০-১৪-১, রুমানা ৩-০-৮-০, ফাতেমা ৪-০-৯-১, ফাহমিদা ২-০-১০-০)
খুলনা বিভাগ: ২০ ওভারে ৮৬/৫ (শম্পা ৩৪, ঝিলিক ২, ফাতেমা ৯, রুমানা ২৯, সোহেলী ২, তাজ ৩*, শরিফা ১*; ফোয়ারা ৪-০-১১-১, দিশা ৩-০-১০-১, ফাতেমা ৪-০-২১-০, রাবেয়া ৪-০-১৩-০, লিলি ৩-০-১৬-২, সুলতানা ২-০-১২-০)
ফল: খুলনা বিভাগ ৫ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: রুমানা আহমেদ
তৃষ্ণার দারুণ বোলিংয়ের পর রংপুরের ১০ উইকেটে জয়
নিজের প্রথম দুই ওভারেই প্রতিপক্ষের ওপেনারদের ফিরিয়ে দিলেন ফারিহা তৃষ্ণা। তার বেঁধে দেওয়া সুরে সঙ্গত করলেন বাকি বোলাররা। তাতে ময়মনসিংহ বিভাগকে অল্পতে থামিয়ে মুরশিদা খাতুন ও সাথী রানির অবিছিন্ন উদ্বোধনী জুটিতে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল রংপুর বিভাগ।
সিলেট একাডেমি মাঠে রংপুরের জয় ১০ উইকেটে। ময়মনসিংহকে ৫৭ রানে গুটিয়ে তারা জয় তুলে নেয় ৪৮ বল বাকি থাকতে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ময়মনসিংহকে শুরুতে চেপে ধরা তৃষ্ণা ৪ ওভারে এক মেডেনসহ ৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে এই পেসারের হাতে।
সাথিরা জাকির জেসি ও তাজিয়া আক্তার নেন দুটি করে উইকেট। সাবেকুন নাহার পান একটি।
ময়মনসিংহের হয়ে হয়ে দুই অঙ্কে যেতে পারেন কেবল মিশু খান, করেন ১৮ রান। বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মাঝে।
রান তাড়া করতে নেমে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন মুরশিদা ও সাথী। অভিজ্ঞ মুরশিদা ৩ চারে করেন ২০ রান। ৬ চারে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন সাথী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ময়মনসিংহ বিভাগ: ২০ ওভারে ৫৭ (শারমিন ১, বিথি ০, সুমাইয়া ৯, সাদিয়া ২, মিশু ১৮, দোলা ৫, জাহানারা ৬, শিখা ৪, কামরুন ৫, আশা ১*, সানজিদা ০; তৃষ্ণা ৪-১-৭-৩, ফারজানা ৩-০-৩-০, সালমা ৩-১-৮-০, তিথি ২-০-৬-০, সাবেকুন ২-০-৭-১, জেসি ৩-০-১৬-২, তাজিয়া ৩-০-৮-২)
রংপুর বিভাগ: ১২ ওভারে ৬০/০ (মুরশিদা ২০*, সাথী ৩৩*; জাহানারা ২-১-১৩-০, শিখা ২-০-৭-০, বিথি ৩-০-১২-০, আশা ২-০-৩-০, সানজিদা ২-০-১৫-০, কামরুন ১-০-৭-০)
ফল: রংপুর বিভাগ ১০ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: ফারিহা তৃষ্ণা
নাহিদার উজ্জ্বল দিনে জিতল রাজশাহী
ঢাকা বিভাগের ৫ উইকেটের চারজনই হলেন রান আউট। বাকি উইকেটটি নেন নাহিদা আক্তার। পরে ব্যাট হাতেও আলো ছড়ান তিনি। তার অপরাজিত ইনিংসে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রাজশাহী বিভাগ।
সিলেট একাডেমি মাঠে ঢাকাকে ৫ উইকেটে হারায় রাজশাহী। প্রতিপক্ষকে ৮৬ রানে থামিয়ে তারা জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ১৪ বল আগে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকার হয়ে ৪৩ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন ফারজানা হক। ৪১ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি ৫ চারে। তার সঙ্গে ৬২ রানের জুটি গড়া রিতু মনি করেন ২৪।
বাকিদের কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে। তাতে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি ঢাকা।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় দিক হারাতে বসেছিল রাজশাহী। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে এক সময় তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৫৭/৫।
বিপাকে থাকা দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন নাহিদা ও ফেরদৌসি। দুজনে গড়েন ৩১ রানের অবিছিন্ন জুটি।
২ চারে ২২ রানে অপরাজিত থাকা নাহিদা জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ২ চারে ১১ রান করেন ফেরদৌসি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা বিভাগ: ২০ ওভারে ৮৬/৫ (সুমি ৩, লিপি ৯, ফারজানা ৪৩, রিতু ২৪, হাসনাত ১, রূপা ১*, তানজিলা ১*; পান্না ৪-০-১০-০, পূজা ৪-১-১০-০, নাহিদা ৪-০-১১-১, লতা ৩-০-১৭-০, সোমা ২-০-১৭-০, বৃষ্টি ১-০-১৪-০, ফেরদৌসি ২-০-৭-০)
রাজশাহী বিভাগ: ১৭.৪ ওভারে ৮৮/৫ (ফারজানা ১৩, সানজিদা ১১, আফিয়া ১১, লতা ৬, আয়েশা ৭, নাহিদা ২২*, ফেরদৌসি ১১*; রিতু ৩-০-১২-০, হাসনাত ৩-০-২১-০, শানু ৪-০-১২-০, রূপা আবেদীন ৪-০-১৮-৩, রূপা রয় ২-০-১৫-১, তানজিলা ১.৪-০-১০-০)
ফল: রাজশাহী বিভাগ ৫ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: নাহিদা আক্তার
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দ্যুতিময় দিপা
দুর্দান্ত বোলিংয়ে আলো ছড়ালেন দিপা খাতুন। সঙ্গে বাকি বোলারদের অবদানে চট্টগ্রাম বিভাগকে পঞ্চাশের আগে থামিয়ে দিল সিলেট বিভাগ। পরে রান তাড়ায় দলের জয়ে ব্যাট হাতেও ভূমিকা রাখলেন দিপা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিলেট জিতেছে ৫ উইকেটে। ৪৫ রানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে গেছে ৩৬ বল বাকি থাকতে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রাম বিভাগের হতাশার দিনে দুই অঙ্কে যেতে পারেন কেবল তমালিকা সুমনা। তাও করেন কেবল ১০ রান।
অফ স্পিনে স্রেফ ৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন দিপা। দুটি করে প্রাপ্তি মারুফা আক্তার ও ইসমত জাহান ইমুর।
জবাব দিতে নেমে প্রথম ওভারে উইকেট হারায় সিলেট। পরে ৩৭ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন তাদের আরও চারজন। তবে লক্ষ্য ছোট হওয়ায় বিপদে পড়তে হয়নি তাদের।
দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ১৭ রানের ইনিংসটি আসে ম্যাচ সেরা হওয়া দিপার ব্যাট থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম বিভাগ: ১৮.১ ওভারে ৪৪ (আফিয়া ২, ইভা ৪, ফাল্গুনী ১, নুজহাত ৩, নুসরাত ১, তমালিকা ১০, সোবহানা ৪, খাদিজা ৫, হ্যাপী ০, অপর্ণা ০, স্বর্ণা ৭*; মারুফা ৩-১-৩-২, লাবনি ৩-০-১৩-১, মরজিনা ৩-১-১১-০, ফাহিমা ২-০-২-১, ইসমত ৪-১-১০-২, দিপা ৩.১-০-৫-৩)
সিলেট বিভাগ: ১৪ ওভারে ৪৮/৫ (শামীমা ০, ইশমা ১৩, দিপা ১৭, ফাহিমা ০, নাসিমা ২, ইসমত ১০*, শিবানি ০*; খাজিদা ৪-১-১৩-১, অপর্ণা ২-০-৬-০, স্বর্ণা ৩-০-১২-১, সোবহানা ৪-০-১১-৩, হ্যাপী ১-০-৬-০)
ফল: সিলেট বিভাগ ৫ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: দিপা খাতুন