নেতৃত্ব হারানো ইমরুলকে এমন ফর্মেই দেখতে চান লিটন

তিনবার কুমিল্লাকে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিলেও এবার অধিনায়কত্ব হারানো নিয়ে ইমরুলের ভেতর কোনো ক্ষোভ নেই বলেই মনে করেন এখনকার অধিনায়ক লিটন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2024, 03:29 AM
Updated : 24 Jan 2024, 03:29 AM

অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের আড়ালে অনেকটাই যেন চাপা পড়ে গিয়েছিলেন ব্যাটসম্যান ইমরুল। এবার নেতৃত্বের ভার সরে গেছে। ব্যাটসম্যান ইমরুলকেও চেনা যাচ্ছে নতুন করে। সাবেক অধিনায়কের এমন ফর্ম দেখে উচ্ছ্বসিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নতুন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। তার আশা, টানা দুই ফিফটিতে আসর শুরু করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ব্যাটে রানের ধারা চলতে থাকবে টুর্নামেন্টজুড়েই।

কুমিল্লাকে তিনটি শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিলেও এই তিন আসরের কোনোটিতেই ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন না ইমরুল। ২০১৯ বিপিএলে ১৩ ইনিংসে কোনো ফিফটি ছিল না তার। ১৬.৬৩ গড়ে রান করেছিলেন ১৮৩।

পরের আসরে তাকে দলে নেয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ক্যারিয়ারের সেরা বিপিএল কাটান তিনি সেবারই। ৪ ফিফটিতে ৪৪২ রান করেন ৪৯.১১ গড়ে। পরের দুই আসরে আবার কুমিল্লায় ফিরে সেই আগের মতোই নেতৃত্ব আর ব্যাটিংয়ের পথ দুদিকে যায় বেঁকে।

২০২২ বিপিএলে কুমিল্লার শিরোপা জয়ের পথে ১১ ইনিংসে ১৯৬ রান করেন তিনি ১৯.৬০ গড়ে। এর মধ্যে এক ম্যাচেই করেন ৮১। গত বিপিএলেও ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন তিনি অধিনায়ক হিসেবে। তবে ব্যাট হাতে ১৩ ইনিংসে তার রান ছিল ১৬.৭৬ গড়ে ২১৮।

একটি ব্যাপার অবশ্য তার ঢাল হিসেবে দাঁড় করানো যায়, ব্যর্থতার এই তিন আসরেই প্রিয় পজিশন ওপেনিংয়ে তিনি খেলতে পারেননি। দলীয় সমন্বয়ের দাবি মেটাতে অধিনায়ক হিসেবে বারবার ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তাকেই। তার ব্যাটিং পজিশনও নির্দিষ্ট ছিল না বেশির ভাগ সময়। তিন নম্বর থেকে শুরু করে মিডল অর্ডারের নানা পজিশনে তিনি খেলেন। অনেক ম্যাচেই বড় রান করার যথেষ্ট সময়-সুযোগই পাননি।

ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই এবার তাকে অধিনায়ক রাখেনি কুমিল্লা। সব ম্যাচের একাদশে তিনি জায়গা পাবেন কি না, এটা নিয়ে সংশয় ছিল খোদ কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচেই ইমরুল নিশ্চিত করেছেন, তাকে একাদশের বাইরে ঠেলে দেওয়া কঠিন হবে।

এবার প্রথম ম্যাচে ওপেনিংয়ের সুযোগ পান তিনি দীর্ঘদিন পর। সেই ম্যাচে করেন ৫৬ বলে ৬৬। এরপর বুধবার মোহাম্মদ রিজওয়ান দলে যোগ দেওয়ায় আবার ইমরুলকে হারাতে হয় তার প্রিয় জায়গা। তবে চারে নেমেও ৪১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে সফল রান তাড়ার পথে এগিয়ে নেন দলকে।

১৬৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে আগে একবারই টানা দুই ম্যাচে ফিফটি করেছিলেন ইমরুল। ২০১৫ বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ার ও ফাইনালে দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

অনেক দিন পর ইমরুলের ব্যাটে হাসি দেখে লিটনের মুখেও খেলে গেল হাসি। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচের পর কুমিল্লা অধিনায়ক তুলে ধরলেন তাদের দলে ইমরুলের গুরুত্বও।

“আমরা জানি যে কায়েস ভাই কী করতে পারেন একটা দলের জন্য। এর মধ্যেই দুটি ম্যাচেই তিনি প্রমাণ করেছেন। আশা করছি, উনি যে ফর্মে আছেন, এটা চালিয়ে যাবেন। যতটুকু তিনি স্ট্রাইকে থাকতে পারবেন, খুবই ভালো হবে আমাদের দলে জন্য।”

সবশেষ আসরেই যিনি চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক, এবার একই দলে থেকেও নেতৃত্ব না পাওয়ায় তার মনে বিষাদের ছায়া পড়া অস্বাভাবিক নয়। তবে ইমরুলের ভেতর তেমন কিছুর ছাপ চোখে পড়েনি লিটনের।

“ওভারঅল সব দিক দিয়েই ভালো। আমার মনে হয় না কায়েস ভাই এমন ব্যক্তি, এসব নিয়ে তার ভেতর কোনো চিন্তা আছে। তিনি খেলাটা উপভোগ করতে চান, খেলতে চান। সেটাই তিনি করছেন। সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে দলকে যথেষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং দিচ্ছেনও।”

তবে দারুণ ফর্মে থাকলেও ইমরুলকে তার প্রিয় পজিশনে ফেরানোর সম্ভাবনা আপাতত দেখেন না লিটন।

“নাহ, এই মুহূর্তে নয় (ওপেনিংয়ে)… যেহেতু আমি আছি, রিজওয়ান ভাই আছেন। আমার মনে হয় না এই মুহূর্তে আমরা উনাকে ওপেনিংয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করব। তবে দেখা যাক, টুর্নামেন্ট তো অনেক বড়। এটা ডিপেন্ড করে…।”

 আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির পর পাকিস্তান সুপার লিগে খেলতে চলে যাওয়ার কথা রিজওয়ানের। তখন আবার ওপেনিংয়ের সুযোগ আসতেও পারে ইমরুলের সামনে।