অপরাজিত ১৯৫, দুর্ভাগাদের দলে খাওয়াজা

প্রকৃতির বৈরিতায় শেষ পর্যন্ত প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ আর পেলেন না অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2023, 05:05 AM
Updated : 7 Jan 2023, 05:05 AM

‘তাকে ১৯৫ রানে রেখেই ইনিংস ঘোষণা করা হবে কি না’, তৃতীয় দিন শেষে এই প্রশ্নে উসমান খাওয়াজা বলেছিলেন, “এটা হলে খুবই নির্মম ব্যাপার হবে। নিশ্চয়ই এমন কিছু হবে না!।” কিন্তু প্রকৃতির বৈরিতায় শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুর হতেই হলো প্যাট কামিন্সকে। চতুর্থ দিনেও একটি সেশন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর খাওয়াজাকে ১৯৫ রানে রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিডনি টেস্টের চতুর্থ দিনে ইনিংস ঘোষণা করলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। 

তাতে অম্ল-মধুর এক স্বাদ পেয়ে গেলেন খাওয়াজা। যেখানে ১৯৫ রান করার তৃপ্তির পাশাপাশি স্রেফ আর ৫টি রান করতে না পারার আক্ষেপও সঙ্গী। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারের জায়গা হয়ে গেল অনাকাঙ্ক্ষিত এক ক্লাবেও। 

কোনো ব্যাটসম্যান ১৯০ ছোঁয়ার পর ডাবল সেঞ্চুরির আগেই ইনিংস ঘোষণার নজির আছে টেস্ট ইতিহাসের স্রেফ আর দুটি। 

১৯৬০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রিজটাউনে ফ্র্যাঙ্ক ওরেলকে ১৯৭ রানে রেখে ইনিংস ঘোষণা করে দেন সেই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেরি আলেক্সান্ডার। যদিও সেই ম্যাচ তখন নিশ্চিতভাবেই ড্রয়ের পথে এগোচ্ছিল। 

আরেকটি ঘটনা এই দেড় যুগ আগের এবং বহুল আলোচিত। ২০০৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতানে শচিন টেন্ডুলকারকে ১৯৪ রানে রেখে ইনিংস ঘোষণা করে দেন ভারতীয় অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। সেটি ছিল ম্যাচের প্রথম ইনিংস এবং ম্যাচ জয়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় বোলারদের জন্য রাখতেই দলের ৬৭৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করেন দ্রাবিড়। 

টেন্ডুলকার যদিও তখন অবাক হয়েছিলেন ভীষণ এবং পরেও তা মেনে নিতে পারেননি। আরেকটু সময় তিনি পেতে পারতেন বলেই আকারে-ইঙ্গিতে বলেছেন নানা সময়ে। ভারত পরে ম্যাচ ম্যাচ পঞ্চম দিন সকালেই অনায়াসে জিতে নেয় ইনিংস ও ৫২ রানে। 

খাওয়াজার ক্ষেত্রে অবশ্য কামিন্স যথেষ্ট ধৈর্য ধরেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিন শেষে খাওয়াজা অপরাজিত ছিলেন ৫৪ রানে। দ্বিতীয় দিন শেষে মাঠ ছাড়েন তিনি ১৯৫ রান নিয়ে। খাওয়াজা দ্বিশতকের কাছাকাছি থাকাতেই হয়তো সেদিন আর ইনিংস ঘোষণা করেননি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। 

তৃতীয় দিন পুরো ভেসে যায় বৃষ্টিতে। শনিবার চতুর্থ দিনও অপেক্ষা করেন কামিন্স। কিন্তু আবারও প্রথম সেশনে একটি বলও হতে পারেনি। পরে দ্বিতীয় সেশনও একটু দেরিতে শুরু হলে আর সময় ক্ষেপণ করতে চাননি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। 

১৯০ ছুঁয়ে ২০০ করতে না পেরে অপরাজিত থাকার নজির খাওয়াজাকে দিয়ে হলো টেস্ট ইতিহাসে স্রেফ ৮টি। প্রথমটি ছিল ১৯২৬ সালে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ব্যাট ক্যারি করে ১৯৩ রানে অপরাজিত থাকেন ওয়ারেন বার্ডসলি, অল আউট হয়ে যায় দল।

১৯৪৮ সালে অস্ট্রেলিয়ারই লিন্ডসে হ্যাসেট ১৯৮ রানে অপরাজিত থাকেন অ্যাডিলেইডে ভারতের বিপক্ষে। এরপর দুইবার এই অভিজ্ঞতা হয় স্যার ফ্র্যাঙ্ক ওয়েলের। ১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ট্রেন্ট ব্রিজে ইনিংস শুরু করতে নেমে তিনি ১৯১ রানে আটকে যান দল অলআউট হওয়ায়। ১৯৬০ সালে তাকে ১৯৭ রানে রেখে ইনিংস ঘোষণার কথা তো উল্লেখ করা হলো আগেই। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই আরেক গ্রেট ভিভ রিচার্ডস ১৯২ রানে অপরাজিত থাকেন ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে ১৯৭৪ সালে। সেবার শেষ দুই ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি রবার্টস ও ল্যান্স গিবস হয়ে যান রান আউট। 

এরপর ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারারে টেস্টে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার অপরাজিত থাকেন ১৯৯ রানে। ডাবল সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরে অপরাজিত থাকার প্রথম নজির সেটি টেস্ট ইতিহাসে। শেষ জুটিতে ডগলাম হন্ডো অনেকক্ষণ সঙ্গ দিলেও শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে যান ফ্লাওয়ারের মাইলফলকের ঠিক আগে। 

এরপর টেন্ডুলকারের সেই ঘটনা ২০০৪ সালে। খাওয়াজার আগে সবশেষ এই অভিজ্ঞতা হয় কুমার সাঙ্গাকারার। ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে গল টেস্টে তিনি আটকে যান ফ্লাওয়ারের মতোই ১৯৯ রানে। 

সাঙ্গাকারার ব্যাপারটি আরও যন্ত্রণাদায়ক ছিল আরেকটি কারণে। ১৯৩ থেকে অফ স্পিনার সাঈদ আজমলকে ছক্কা মারার পর মাঠের স্কোরবোর্ডে ভুল করে দেখানো হয়, তার ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। সাঙ্গাকারা উদযাপন করেন।  মাঠের ও ড্রেসিং রুমের সবার অভিনন্দনের জবাব দেন সময় নিয়ে। একটু পরে জানা যায়, আরও একটি রান লাগবে তার। 

পরের ওভারেই শ্রীলঙ্কার শেষ ব্যাটসম্যান নুয়ান প্রদিপ বোল্ড হয়ে যান মোহাম্মদ হাফিজের বলে। ডাবল সেঞ্চুরির উদযাপন করেও সাঙ্গাকারা আটকে থাকেন ১৯৯ রানে।