কুলদিপ-অশ্বিনের স্পিনে ইংলিশ ব্যাটিং গুঁড়িয়ে ভারতের শক্ত ভিত

ধারামশালা টেস্টের প্রথম দিন ইংল্যান্ডকে অল্পে থামানোর পর রোহিত শার্মা ও ইয়াশাসভি জয়সওয়ালের ফিফটিতে ভালো শুরু পেল ভারত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2024, 12:06 PM
Updated : 7 March 2024, 12:06 PM

তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়েই রান হয়ে গেল পৌনে দুইশ। নিশ্চিতভাবে শক্ত ভিত। সেখান থেকে তিনশ-চারশ রান করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু সিরিজে আরও একবার নাটকীয় ব্যাটিং ধসে ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেল দুইশ পেরিয়েই। কুলদিপ ইয়াদাভ ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দারুণ বোলিংয়ে ইংলিশদের অল্পতে থামানোর পর রোহিত শার্মা ও ইয়াশাসভি জয়সওয়ালের ফিফটিতে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু পেল ভারত।

ধারামশালায় পঞ্চম ও শেষ টেস্টের প্রথম দিন ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেছে ২১৮ রানে। একটা পর্যায়ে তাদের রান ছিল ৩ উইকেটে ১৭৫। সেখান থেকে স্রেফ ৪৩ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারায় তারা।

ওপেনার জ্যাক ক্রলির ৭৯ রান ছাড়া সফরকারীদের আর কেউ ত্রিশও ছুঁতে পারেননি।

ভারতের তিন স্পিনার মিলে নেন সবগুলো উইকেট। কুলদিপ ও অশ্বিন মিলে ধরেন ৯ শিকার।

বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদিপ ৭২ রানে নেন ৫টি। ১২ টেস্টের ক্যারিয়ারে চতুর্থবার এই স্বাদ পেলেন তিনি। এ দিন ৫০ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করেন ২৯ বছর বয়সী ক্রিকেটার।

এজন্য কুলদিপের লাগল ১ হাজার ৮৭১ বল। ভারতের হয়ে যা দ্রুততম। আগের দ্রুততম ছিলেন আকসার প্যাটেল। এই স্পিনারের লেগেছিল ২ হাজার ২০৫ বল।

গোটা বিশ্বে কুলদিপের চেয়ে কম বলে এই সংস্করণে ৫০ উইকেট নিতে পারেন কেবল একজন স্পিনার। ইংলিশ বাঁহাতি স্পিনার জনি ব্রিগসের লেগেছিল ১ হাজার ৫১২ বল।

ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলতে নেমে অশ্বিনের প্রাপ্তি ৫১ রানে ৪টি।

দিন শেষে ভারতের রান ১ উইকেটে ১৩৫। আর কেবল ৮৩ রানে পিছিয়ে আছে তারা। ৫২ রানে খেলছেন অধিনায়ক রোহিত।

আরেক ওপেনার জয়সওয়াল আউট হন ৫৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৭ রান করে। এই ইনিংসের পথে সিরিজে সাতশ ও ক্যারিয়ারে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

প্রথম দিনে উইকেটে নতুন বলে মিলেছে সুইং ও সিম মুভমেন্ট। পুরোনো বলে কিছু তীক্ষ্ণ টার্নও দেখা গেছে। তবে ব্যাটিংয়ের জন্য খুব কঠিন ছিল না মোটেও।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা হয় আশা জাগানিয়া। প্রথম ঘণ্টায় বিনা উইকেটে ৪৭ রান তোলে তারা। দুই ওপেনারই অবশ্য অল্পের জন্য বেঁচে যান কয়েক দফা।

অষ্টাদশ ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসেই বেন ডাকেটকে ফিরিয়ে ৫৫ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন কুলদিপ। তার গুগলি বুঝতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, শট খেলার চেষ্টায় বল উঠে যায় আকাশে। কাভার থেকে বেশ খানিকটা পেছনে দৌড়ে দারুণ ক্যাচ নেন শুবমান গিল।

লাঞ্চের আগে কুলদিপের আরেকটি গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে স্টাম্পড হন অলিভার পোপ। ক্রলি ততক্ষণে তুলে নেন ফিফটি, ৬৪ বলে। দ্বিতীয় সেশনে ৭৮ রানে একবার তার ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন রবীন্দ্র জাদেজা। সেঞ্চুরির পথে থাকা ব্যাটসম্যানকে পরের ওভারেই অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন কুলদিপ।

১১ চার ও একটি ছক্কায় গড়া ক্রলির ১০৮ বলে ৭৯ রানের ইনিংস।

ক্যারিয়ারের শততম টেস্টে চারে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন জনি বেয়ারস্টো। কুলদিপকে দুটি ছক্কা মারেন তিনি। দ্বিতীয় ছক্কায় পা রাখেন ৬ হাজার রানের মাইলফলকে। ওই ওভারেই তাকে (১৮ বলে ২৯) কট বিহাইন্ড করে ফেরান কুলদিপ।

ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধসের শুরুও সেখানেই। পরের ওভারে জাদেজার বলে এলবিডব্লিউ হন জো রুট। কুলদিপ নিজের পরের ওভারে বেন স্টোকসকে এলবিডব্লিউ করে পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট।

স্কোর ১৭৫ রেখেই ৩ উইকেট হারায় ইংলিশরা।

শেষ চার ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেন অশ্বিন। একই ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন টম হার্টলি ও মার্ক উডকে। ১৮৩ রানে ৮ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড কোনোমতে দুইশ ছাড়াতে পারে বেন ফোকসের ২৪ রানের সৌজন্যে। চা-বিরতির পর নিজের আরেকটি ওভারে ফোকস ও জেমস অ্যান্ডারসনকে ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেন অশ্বিন।

জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে আগ্রাসী শুরু করেন রোহিত। অন্য প্রান্তে শুরুতে রয়েসয়ে খেলেন জয়সওয়াল। একটা পর্যায়ে রোহিতের রান ছিল ২৩ বলে ২০, জয়সওয়ালের ২৭ বলে ৬। এরপরই অফ স্পিনার শোয়েব বাশিরের চার বলের মধ্যে তিনটি ছক্কা মারেন তরুণ ব্যাটসম্যান।

এই সিরিজে ৯ ইনিংসে জয়সওয়ালের ছক্কা হয়ে গেল ২৬টি! এই সংস্করণে একটি দলের বিপক্ষে ভারতের কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি ছক্কার নজির এটি। জয়সওয়াল ছাড়িয়ে গেলেন সাচিন টেন্ডুলকারকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই কিংবদন্তি ২৫ ছক্কা মারেন ৭৪ ইনিংসে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ভিরাট কোহলির সবচেয়ে বেশি ৬৫৫ রানের (২০১৬ সালে) রেকর্ড আগের টেস্টেই ছুঁয়ে ফেলেন জয়সওয়াল। এবার তিনি কোহলিকে ছাড়িয়ে পৌঁছে গেলেন সাতশ রানের ঠিকানায়। ভারতের হয়ে এক সিরিজে সাতশ রান তার আগে করতে পারেন কেবল সুনিল গাভাস্কার, দুই দফায়।

বাশিরকে টানা দুই চারের পরের বলে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হয়ে থামেন জয়সওয়াল।

রোহিত ফিফটি করেন ৭৭ বলে। শুবমান গিলকে নিয়ে দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন তিনি। ভারত অধিনায়কের ৮৩ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ৬টি চারের পাশে ছক্কা ২টি। ২টি করে ছক্কা ও চারে ৩৯ বলে ২৬ রানে অপরাজিত গিল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৭.৪ ওভারে ২১৮ (ক্রলি ৭৯, ডাকেট ২৭, পোপ ১১, রুট ২৬, বেয়ারস্টো ২৯, স্টোকস ০, ফোকস ২৪, হার্টলি ৬, উড ০, বাশির ১১*, অ্যান্ডারসন ০; বুমরাহ ১৩-২-৫১-০, সিরাজ ৮-১-২৪-০, অশ্বিন ১১.৪-১-৫১-৪, কুলদিপ ১৫-১-৭২-৫, জাদেজা ১০-২-১৭-১)

ভারত ১ম ইনিংস: ৩০ ওভারে ১৩৫/১ (জয়সওয়াল ৫৭, রোহিত ৫২*, গিল ২৬*; অ্যান্ডারসন ৪-১-৪-০, উড ৩-০-২১-০, হার্টলি ১২-০-৪৬-০, বাশির ১১-২-৬৪-১)