দুই সতীর্থের মধুর লড়াই

সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ফাইনালে তোলার পেছনে বড় অবদান তৌহিদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে দুজনের মধ্যে থাকছে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার প্রতিযোগিতাও।

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2023, 03:24 PM
Updated : 15 Feb 2023, 03:24 PM

২০২২ সালের বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১০ রান। ওই ওভারে জীবন পেয়েও জেতাতে পারেননি তৌহিদ হৃদয়। তার আগে সুযোগ পান নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু ৩৩ বলে ৩৫ রানের সমীকরণে উইকেটে গিয়ে ১৫ বলে ১২ রান করে দলকে বিপদে রেখে ড্রেসিংরুমে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। স্রেফ ১ রানে হেরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া হয়নি ফরচুন বরিশালের। ফাইনালের মতো পুরো আসরেই হতাশ করেন শান্ত ও হৃদয়। তবে গতবারের ব্যর্থতা ভুলে দুই তরুণ ব্যাটসম্যান এবারের বিপিএলে নিজেদের মেলে ধরেছেন পুরোপুরি ভিন্ন রূপে।

দেশি ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দিয়ে সাজানো সিলেট স্ট্রাইকার্স দলের এবারের আসরের ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন শান্ত ও হৃদয়। টপঅর্ডারে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে ফাইনালে তুলতে রেখেছেন দারুণ অবদান। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগে এই দুজনের মধ্যেই এখন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার দ্বৈরথ।

ফাইনালের আগপর্যন্ত খেলা ১৪ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে ৪৫২ রান করেছেন শান্ত। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৮৯ রানের। তিনিই আছেন সবার ওপরে। আঙুলের চোটে দুই ম্যাচ খেলতে না পারা হৃদয়ের সংগ্রহ ১২ ম্যাচে ৫ ফিফটিতে ৪০৩ রান। রান সংগ্রাহকের তালিকায় এই দুজনের মাঝে রংপুর রাইডার্সের ওপেনার রনি তালুকদার (৪২৫ রান)।

শুধু রান করাই নয়, জুটির হিসেবেও এবারের আসরের সেরাদের তালিকায় আছেন শান্ত ও হৃদয়। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে সিলেটের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি হৃদয়কে। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে পরের ম্যাচে শান্তর সঙ্গে তার দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ১০১ রান। যা ছিল এবারের আসরের প্রথম শতরানের জুটি।

পরের ম্যাচে জুটি গড়ে এ দুজন যোগ করেন ৮৮ রান। সবশেষ রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করার ম্যাচেও হৃদয় ও শান্তর ছিল ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেয়ে তা পুরোটাই কাজে লাগিয়েছেন এ দুই তরুণ।

চলতি বিপিএলের আগে এক আসরে শান্তর সর্বোচ্চ ছিল ৩০৮ রান। খুলনা টাইগার্সের হয়ে ২০২০ সালের আসরে একটি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরিতে এই রান করেন তিনি। এবার সেটি ছাপিয়ে প্রথমবার করেছেন সাড়ে ৪শর বেশি রান।

তার সামনে হাতছানি দিচ্ছে আরও বড় অর্জন। খুলনার হয়ে ২০২০ সালে ৪৯১ রান করেন মুশফিকুর রহিম। যা বিপিএলের এক আসরে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ফাইনালে ৪০ রান করতে পারলেই মুশফিককে ছাড়িয়ে এই রেকর্ড নিজের করে নেবেন শান্ত।

শান্তর মতো হৃদয়ও ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে নিজের অভিষেক আসরে স্রেফ এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পান তরুণ ব্যাটসম্যান। পরে গত আসরে শান্তর সঙ্গে একই দলে খেলে ১১ ম্যাচে তার সংগ্রহ ছিল ১৩৬ রান।

ব্যর্থতার অধ্যায় পেরিয়ে নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়েছেন হৃদয়, দেখিয়েছেন পাওয়ার হিটিংয়ের সামর্থ্য। ১১ ইনিংসে ৪০৩ রান করেছেন ১৪১.৪০ স্ট্রাইক রেটে। ৪৩টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১৩টি ছক্কা। আঙুলের চোটে ছিটকে যাওয়ার আগে তিনিই ছিলেন সবার ওপরে। পরে দুই ম্যাচ খেলতে না পারায় পিছিয়েছেন কিছুটা। তবু ফাইনালে তার সামনে সুযোগ থাকছে শান্তকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। যা সিলেট দলের মধ্যেই তৈরি করেছে ইতিবাচক এক প্রতিযোগিতা।

এটি নিয়ে ভাবতে রাজি নন শান্ত। ফাইনালের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অর্জনের চেয়ে দলীয় সাফল্যের কথাই বারবার বলেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

“দল যতক্ষণ পর্যন্ত ভালো করছে, ওইটাই আমার কাছে বড় তৃপ্তি। তৌহিদ ভালো করছে, এটা ভালো দিক। খুব ভালো একটা প্রতিযোগিতা আমাদের মধ্যে। তবে দুজনেরই লক্ষ্য হলো কালকের (বৃহস্পতিবার) ম্যাচটা কত ভালো ক্রিকেট খেলে জিততে পারি। ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্স নিয়ে আমরা ততটা চিন্তা করছি না।”

শেষ পর্যন্ত যে-ই হন এবারের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, তাতে নিশ্চিতভাবেই ঘুচবে একটি অপেক্ষা। বিপিএলের গত চার আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের মুকুট ছিল বিদেশিদের। এবার সেটি উঠবে বাংলাদেশেরই কোনো ব্যাটসম্যানের মাথায়।