কোভিড: শনাক্তের হার ফের ৩১% ছাড়াল, মৃত্যু ১৪ জনের

করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হারকে তুলে দিল ডেল্টার চূড়ার কাছাকাছি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2022, 11:07 AM
Updated : 23 Jan 2022, 01:13 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ হাজারের কম নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৯০৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে আরও ১৪ জনের।

তাতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়াচ্ছে ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা গত ২২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।

শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি ছিল সর্বশেষ গত বছরের ২২ জুলাই, সেদিন প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩২ দশমিক ১৮টিতে কোভিড পজিটিভ আসে।

সে সময় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের মধ্যে দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজারও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর সংক্রমণ কমে এলে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ডিসেম্বরে ২ শতাংশের নিচে নেমেছিল। জানুয়ারির শুরু থেকেই সংক্রমণের হার আবার হু হু করে বাড়ছে।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৬ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ২২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ৭৮২ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬১ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।

এই হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫২ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে।

আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার। ১৬ জানুয়ারি ছিল ৩৬ হাজার ৬৭৪ জন। অর্থাৎ, মাত্র এক সপ্তাহে সক্রিয় রোগী বেড়েছে প্রায় তিনগুন।

শনিবার নয় হাজার ৬১৪ জন নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসাবে গত একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ২৯২ জন, বা ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

জানুয়ারির প্রথম দিনও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চারশর নিচে, ৬ জানুয়ারি তা হাজার ছাড়ায়, ১৬ জানুয়ারি পেরিয়ে যায় ৫ হাজারের ঘর, এরপর মাত্র চারদিন পর ২০ জানুয়ারি তা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

 

গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৭ হাজার ২৯২ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৬ শতাংশের বেশি।

গত কয়েক মাস ধরেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর একটি বড় অংশ থাকে ঢাকার। তবে গত কয়েক দিন ধরে দেশের অন্যান্য জেলায়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

গত এক দিনে ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৬৫৮১ জন, গাজীপুরে ১৫৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৩৬ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১০২৬ জন, কক্সবাজারে ১৪০ জন; রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলায় ১৪৯ জন, বগুড়ায় ১৪১ জন; খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় ১৫৩ জন, যাশোরে ১৯৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এছাড়া সিলেট জেলায় ৩৯৭ জন এবং ময়মনসিংহে ৯৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে। 

যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ছয়জন পুরুষ, আট জন নারী। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগের দুইজন, খুলনা বিভাগের একজন, বরিশাল বিভাগের একজন, সিলেট বিভাগের দুইজন, রংপুর বিভাগের এক জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে আটজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, চারজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর ১২ জানুয়ারি তা ১৬ লাখ পেরিয়ে যায়। তার আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছর ৫ ডিসেম্বর কোভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫৫ লাখ ৯২ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ৩৪ কোটি ৯৩ লাখের বেশি রোগী।