কোভিডে মৃত্যু কমেছে আরও, সঙ্গে শনাক্তও

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ১১৪ জনর মৃত্যু হয়েছে, সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ৫ হাজার ২৪৯ জনের মধ্যে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2021, 11:52 AM
Updated : 24 August 2021, 01:40 PM

এক দিনে মৃত্যুর এই সংখ্যা গত ২৯ জুনের এর চেয়ে সবচেয়ে কম। সেদিন মোট ১১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পৌনে ৩৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ওই সোয়া পাঁচ হাজর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

তাতে এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ, যা আগের দিনের চেয়ে সামান্য কম।

সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫ হাজার ৭১৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং ১১৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই হিসেবে গত এক দিনে শনাক্ত ও মৃত্যু দুটোই কমেছে।

সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৪ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হল; তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মোট ২৫ হাজার ৫১৩ জনের।

করোনাভাইরাসে দেশে পুরুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি থাকলেও টানা দুইদিন ধরে এ তালিকায় নারীরা উপরে থাকছে। গত একদিনে যে ১১৪ জন মারা গেছেন তাদের ৫৮ জনই নারী। দেশে কোভিডে মৃতদের ৬৫ শতাংশই যেখানে পুরুষ, সেখানে এক দিনে পুরুষের চেয়ে বেশি নারীর মৃত্যুর ঘটনা বিরল। 

গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের ৪২ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শুধু ঢাকা বিভাগেই ২ হাজার ৯৬০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে, যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আগের দিন এ বিভাগে ৩ হাজার ৩৬৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন আরও ৮ হাজার ৯০৭ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠলেন ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৬৩ জন।                    

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে জুন মাস থেকে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল। মহামারীর দেড় বছরে গত জুলাই হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে বিপর্যস্ত মাস। মাঝ অগাস্টের পর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৮৮ জন। যা আগের দিন ৬৯ হাজার ৪৬০ জন ছিল। জুলাইয়ে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিল দেড় লাখও ছাড়িয়েছিল।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২০ অগাস্ট তা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২১ কোটি ২৪ লাখের বেশি রোগী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৩৪ হাজার ৭০৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮৭ লাখ ২১ হাজার ১৪টি নমুনা।

নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ২ হাজার ১৩৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে ১৩৪ জন, মুন্সিগঞ্জে ১২৮ এবং নারায়ণগঞ্জে ১২৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৩১৮ জন, কুমিল্লায় ১৫৭ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ১৪৯ জন এবং সিলেটে ১২৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।

 

ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ২৫ জন, অর্থাৎ, অর্ধেকের বেশিই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ২৯ জনের মধ্যে ১০ জন চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা ছিলেন।

এছাড়া খুলনা বিভাগে ১৩ জন, সিলেট বিভাগে ৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৫ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।

মৃত ১১৪ জনের মধ্যে ৬৭ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪ জন করে মোট ৮ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ ও ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে; ১ জন করে মোট ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ১০ বছরের কম ছিল।

তাদের মধ্যে ৮৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৩ জন বাসায় মারা যান।