কিন্তু গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার বেড়ে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে। ঈদের দিন মৃত্যু হয়েছে ১৮৭ জনের, যা আগের দিনের চেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৩ হাজার ৬৯৭ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
গত এক দিনে নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪০ হাজার ২০০ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৬৮৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস।
এর আগে এক দিনে এর চেয়ে কম রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল গত ১৮ জুন। সেদিন ৩ হাজার ৮৮৩ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত দুই বছরে আগের তিনটি ঈদের দিনও নমুনা পরীক্ষা তার আগের কয়েক দিনের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছিল। আর তাতে ঈদের পরের দিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল অনেকটা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৩৯টি ল্যাবে ১১ হাজার ৪৮৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৯৭৯টি, তাতে ৭ হাজার ৬১৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
আর ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৩৯ হাজার ৫১০টি, সেদিন ১১ হাজার ৫৭৯ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দুই দিনে দেশে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা কমে প্রায় এক চতুর্থাংশে নেমে এসছে ঈদের দিন বুধবার।
তারিখ |
| আগের ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা | শনাক্ত রোগীর সংখ্যা |
২৬ মে, ২০২০ | আগের দিন ছিল রোজার ঈদ | ৫৪০৭ | ১১৬৬ |
২ অগাস্ট, ২০২১ | আগের দিন ছিল কোরবানির ঈদ | ৩৬৮৪ | ৮৮৬ |
১৫ মে, ২১ | আগের দিন ছিল রোজার ঈদ | ৩৭৫৮ | ২৬১ |
২২ মে, ২১ | আগের দিন ছিল কোরবানির ঈদ | ১১৪৮৬ | ৩৬৯৭ |
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার বেড়ে হয়েছে ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ।
দেশে মহামারী শুরুর পর গত ষোল মাসে কেবল এক দিনই শনাকেরত হার এর চেয়ে বেশি ছিল। গতবছরের ১২ জুলাই শনাক্তের হার ছিল রেকর্ড ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।
দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
গত কিছুদিন ধরে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় ঢাকা বিভাগ সবার উপরে থাকলেও বৃহস্পতিবার সেই জায়গা নিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে ১ হাজার ৩৮৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর ঢাকা বিভাগে শংক্রমণ ধরা পড়েছে ১২৫৩ জনের মধ্যে। এই দুই বিভাগেই শনাক্ত হয়েছে সারা দেশে মোট শনাক্ত রোগীর প্রায় ৭২ শতাংশ।
আর যে ১৮৭ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৭৫ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে ৪৪ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি হিসাবে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ৮ হাজার ৫৬৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন; এ পর্যন্ত সুস্থ মোট হয়েছেন ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬১০ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ১১ লাখ পেরিয়ে যায় এ বছর ১৮ জুলাই। তার আগে ১২ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পরে।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ১৯ জুলাই তা ১৮ হাজার ছাড়ায়। সেদিনই এক দিনে রেকর্ড ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত রোগী ইতোমধ্যে ১৯ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৪১ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষের।
দিনের চিত্র
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৪৩৯ জন, গাজীপুরে ২১৮ জন, মুন্সিগঞ্জে ১৫১ জন, টাঙ্গাইলে ১০৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৪৮২ জন, কক্সবাজারে ১৮৬, চাঁদপুরে ১২৫ জন এবং কুমিল্লায় ৪৪১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেট জেলায় ১২৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৪৩ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৪৪ জনের মধ্যে কুষ্টিয়ার ১৪। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১০ জন, রংপুর বিভাগে ১৫ জন, সিলেট বিভাগে ৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
মৃত ১৭৩ জনের মধ্যে ৬৪ জনের বয়স ছিল ৬১ থেকে ৭০ বছরের কোঠায়। এছাড়া ৪৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৭ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে এবং ২০ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের ১১৭ জন ছিলেন পুরুষ, ৭০ জন ছিলেন নারী। ১৫৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৮ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ২ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।