কোভিড: একদিনে রেকর্ড ২৩০ মৃত্যু, সর্বোচ্চ শনাক্ত

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কঠোর লনডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে আবারও একই দিনে শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড দেখতে হল বাংলাদেশকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2021, 12:36 PM
Updated : 11 July 2021, 02:09 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায়, সারা দেশে মৃত্যু হয়েছে মোট ২৩০ জনের। আর এই এক দিনে আরও ১১ হাজার ৮৭৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। 

গতবছর মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের মহামারী শুরুর পর এক দিনে এত বেশি মৃত্যু আর এত বেশি রোগী শনাক্ত আর কখনও হয়নি।

ভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তারের কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরেই রেকর্ডের ভাঙাগড়া চলছে, পরিস্থিতি ক্রমশ আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

গত ৯ জুলাই দেশে রেকর্ড ২১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল। তার আগের দিন রেকর্ড ১১ হাজার ৬৫১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। তিন দিনের মাথায় সব রেকর্ড ভেঙে গেল।

সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৬ হাজার ৪১৯ জনের মৃত্যু হল করোনাভাইরাসে। বার শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখ ২১ হাজার ১৮৯ জনে।

ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে চলছে লকডাউনের বিধিনিষেধ চলছে। তার মধ্যেই গত ৬ জুলাই প্রথমবারের মত এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সেদিন ১১ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে।

এরপর ৯ জুলাই পর্যন্ত টানা চার দিন ধরে দৈনিক শনাক্ত ১১ হাজারের ওপরে ছিল। মাঝখানে শনিবার আট হাজারের বেশি শনাক্তের পরদিনই নতুন রেকর্ডের খবর এল।

গত ২৮ জুন থেকে টানা ১৪ দিন হল একশর বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনাভাইরাসে। এর মধ্যে রোববারসহ তিনদিন দৈনিক মৃত্যু হয়েছে ২০০ জনের বেশি।

গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪৯৬১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় ৪১ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম এবং খুলনা  বিভাগে শনাক্ত হয়েছে দেড় হাজারের বেশি রোগী।

আর যে ২৩০ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৬ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের।

সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ৬ হাজার ৩৬২ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৭৪ হাজার ১৬৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬১৩টি ল্যাবে ৪০ হাজার ১৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭টি নমুনা।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, আগের দিন যা ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ ছিল।

দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

 

ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ৬৯০ জন, ফরিদপুরে ১৪৫ জন, গাজীপুরে ১৮৪ জন, গোপালগঞ্জে ১৪৫ জন, মাদারীপুরে ১৬১ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৬৪ জন, রাজবাড়ীতে ১৩০ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ১৭৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৭০৯ জন, কুমিল্লায় ৩৫০ জন, কক্সবাজারে ১৩৮ জন এবং চাঁদপুরে ১১৬ মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৮৪ জন, নাটোরে ১৩৬ জন, পাবনায় ২১৩ জন, সিরাজগঞ্জে ২৪৪ জন এবং বগুড়ায় ১৮৩ জন নতুন রোগী মিলেছে।

খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে ১৪৪ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৪৩ জন, যশোরে ১৩৯ জন, ঝিনাইদহে ১৪৭ জন, খুলনায় ৪৩১ জন,কুষ্টিয়ায় ২৪৫ জন এবং  সাতক্ষীরায় ১৫৭ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ।

রংপুর বিভাগের রংপুরে ১০৬ জন, দিনাজপুরে ১০৯ জন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১৫১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৮৫ জন, মৌলভীবাজারে ১৪২ জন, বরিশাল জেলায় ২১১ জন, ময়মনসিংহ জেলায় ২৯২ জন এবং শেরপুরে ১১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।

গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৯ জন ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৬৬ জনের মধ্যে ১৩ জন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা ছিলেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন, রংপুর বিভাগে ২২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

মৃত ২৩০ জনের মধ্যে ১১১ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৫১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৭ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।

তাদের ১৩৩ জন ছিলেন পুরুষ, ৯৭ জন ছিলেন নারী। ১৬৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪২ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৯ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ৯ জুলাই দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ পেরিয়ে যায়, সেদিনই মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়ায়।

বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ৬৫ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৪০ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারীতে।