খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যের ঘটনায় সমালোচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে নীল দলে ‘ফেরানোর’ প্রস্তাব উঠেছে; যা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ফের শুরু হয়েছে সমালোচনা ও প্রতিবাদ।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভায় আইন অনুষদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক এই সভাপতিকে ‘সিনিয়র ফ্যাকাল্টি’ হিসেবে সংগঠনে রাখার প্রস্তাব করা হয়।
এসময় নীল দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রতিবাদ জানান।
পরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে নীল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা ছিল। সভায় বিভিন্ন অনুষদের প্রতিনিধিদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আইন অনুষদের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি হিসেবে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর নাম আসলে সবাই এটি প্রত্যাখান করে।
“বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাককে নিয়ে একই অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধুর সমমর্যাদায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন রহমত উল্লাহ। তাই মুশতাকের প্রেতাত্মা রহমতকে নীল দলের এই কমিটি থেকে বর্জন করা প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, “শিক্ষকতা করতে পারবেন বলে হাই কোর্ট থেকে রায় পেয়েছেন তিনি (অধ্যাপক রহমত উল্লাহ)। কেউ যদি শিক্ষকতা করতে পারে, তিনি নীল দল করতে তো কোনো বাধা থাকার কথা নেই।
“অনুষদ থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, আমরা সেটা গ্রহণ করেছি। কেউ প্রতিবাদ করলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।”
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল টিএসসি মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনাসভা ছিল। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমত তার বক্তব্যে মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক পর্যায়ে খন্দকার মোশতাকের প্রতিও ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ওই সময় এর প্রতিবাদ জানালে উপাচার্য আখতারুজ্জামান ওই বক্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’ করেন।
পরে অধ্যাপক রহমতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়; গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।
এর মধ্যেই অধ্যাপক রহমত উল্লাহ হাই কোর্টের রায়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম করার সুযোগ ফিরে পান। তবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এখনও এ নিয়ে কাজ করছে। ফলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়ার আগে অধ্যাপক রহমতকে নীল দলে আনার চেষ্টা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চলছে সমালোচনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি একজন বিতর্কিত শিক্ষক। আমাদের জাতির পিতার খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত খন্দকার মোশতাকের প্রশংসা করেছেন।
“খন্দকার মোশতাক যে চিহ্নিত খুনি, আওয়ামী লীগের এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। নীল দল আওয়ামী লীগ আদর্শের সমর্থিত একটি রাজনৈকি প্ল্যাটফর্ম। সেজন্য নীল দলের আহ্বায়ক কমিটিতে তা রাখতে হলে বিষয়টির সুরাহা প্রয়োজন।”
এই বিষয়ে উপ উপাচার্য অধ্যাপক সামাদ বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমমর্যাদায় খুনি মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ফোরাম সিন্ডিকেট কর্তৃক ড. রহমত শাস্তিপ্রাপ্ত, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্তাধীন এবং তার মামলা হাই কোর্টে বিচারাধীন।
“এমন একজন ব্যক্তিকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে পরিচালিত নীল দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা অগ্রহণযোগ্য ও জাতির পিতার রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। এছাড়া মামলা-মকদ্দমার বাইরেও নৈতিকতা ও আদর্শের বিষয় হওয়ায় ড. রহমত উল্লাহর এই অন্তর্ভুক্তি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।”
পুরনো খবর