স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনের চার্জ ‘সহনীয়’ করার আহ্বান আমদানিকারকদের

“শুধু ভারত থেকেই আমরা বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলের পণ্য আমদানি করে থাকি, যার সিংহভাগই আসে স্থল বাণিজ্যের মাধ্যমে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Feb 2024, 04:17 PM
Updated : 29 Feb 2024, 04:17 PM

দেশের স্থলবন্দর এবং শুল্ক স্টেশনগুলোতে আমদানি পণ্যের বিদ্যমান লেবার হ্যান্ডলিং চার্জ, পণ্য লোড-আনলোড চার্জ, ইকুইপমেন্ট চার্জ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা।

সেই সঙ্গে লজিস্টিকস সক্ষমতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ ও সড়ক পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়নসহ বন্দরে ব্যবসায়ীদের ‘হয়রানি’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে সিলেট বিভাগের ল্যান্ড পোর্ট, বর্ডার ট্রেড, ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রান্সশিপমেন্ট বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।

এফবিসিসিআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলোতে দ্রুত রাজস্ব প্রদান, শুল্কায়ন, পণ্য খালাস এবং ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের জন্য ব্যাংক বুথ স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেন ব্যবসায়ীরা।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম সভায় বলেন, “দেশে ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প সম্প্রসারণের সাথে সাথে স্থল বন্দর ও শুল্ক স্টেশনসমুহ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

“শুধু ভারত থেকেই আমরা বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলের পণ্য আমদানি করে থাকি, যার সিংহভাগই আসে স্থল বাণিজ্যের মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে স্থলবন্দর এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।”

স্থলবন্দর, শুল্ক স্টেশনসহ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লিখিত আকারে সুনির্দিষ্ট মতামত ও প্রস্তাব আহ্বান করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। যৌক্তিক প্রস্তাবগুলো নিয়ে এফবিসিসিআই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানান।


কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ এবং এফবিসিসিআই পরিচালক ফালাহ উদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, সিলেটের তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে পাথর, চুনাপাথর, কয়লা, ফলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয় সিমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য, ফার্নিচার, পাটসহ প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য।

“বন্দরগুলোতে কয়লা ও পাথর আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে লোড-আনলোড চার্জ অনেক বেশি। যা বাস্তবে বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার সাথে যুক্ত হয় ১৫ শতাংশ ভ্যাট। যা আমদানিকারকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।”


আমদানিকৃত কয়লা ও পাথর দীর্ঘদিন রেখে বিক্রি করতে হয় বলে আমদানিকারকদের এক বছর মেয়াদী ভাড়া বন্দোবস্ত দেওয়ার আহ্বান জানান ফালাহ উদ্দিন আলী আহমেদ। সেই সঙ্গে বন্দরে ডাম্পিং এরিয়া বৃদ্ধির প্রস্তাব জানান তিনি।

কমিটির চেয়ারম্যান আহমেদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী বলেন, “স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলোতে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। এতে করে পণ্য পরিবহনের ব্যয় কমবে, ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে।”

এফবিসিসিআই এর পরিচালক, কমিটির কো-চেয়ারম্যা ও সদস্যরা এবং ব্যবসায়ী নেতারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। 

পর্যটন খাতের উন্নয়ন

এফবিসিসিআইর বোর্ড রুমে এদিন হোটেল ও গেস্টহাউস বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটিরও বৈঠক হয়।

দেশের হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে অতিথিদের সর্বোত্তম সেবাদান নিশ্চিত করতে উন্নত হোটেল নির্মাণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সরকারের নীতি সহায়তার পাশাপাশি দক্ষ জনবল বৃদ্ধি জরুরি বলে সভায় মত দেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “পর্যটন আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আমাদের পর্যটন খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়িসহ দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রগুলোকেও কীভাবে আরও আধুনিক ও উন্নত করা যায় সে ব্যাপারে কাজ করা দরকার।”

এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, “পর্যটন শিল্পের জন্য দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।”

কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ ও এফবিসিসিআই পরিচালক ফখরুস সালেহীন নাহিয়ান বলেন, “পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বড় হোটেল মোটেল নির্মাণের সময়ে উচ্চ ডিউটি দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী আমদানি করতে হয়। যার ফলে হোটেলের খরচ অনেক বেড়ে যায়। হোটেল নির্মাণের ক্ষেত্রে শুল্ক মুক্ত ভাবে গ্লাস, ফার্নিচার ইত্যাদি আমদানি করা গেলে স্বল্প খরচে পর্যটকদের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও সায়মন বিচ রিসোর্ট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেদুর রহমান। তিনি বলেন, “প্রতিটি জেলার নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি আছে। হোটেলগুলোতে স্যুভেনির আকারে সেগুলো পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পারলে এ খাতের ব্যবসা আরও বাড়তে পারে।”

এছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে ভ্যাট ১৫% কমিয়ে ৮% করা হলে ভোক্তা বা পর্যটকরা উপকৃত হবে বলে মত দেন তিনি।  

কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সভাপতি শিবলুল আজম কোরাইশী বলেন, “দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে পর্যটন শিল্প। একজন বাদাম বিক্রেতার মত উদ্যোক্তাও ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারে এ খাতে। তাই এই খাত অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবিদার।”

কো-চেয়ারম্যান ইরাদ আলি বলেন, “হোটেলগুলোতে অ্যালকোহল আমদানির ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ৪০ ভাগ ও স্থানীয় পর্যায়ে ৬০ ভাগ সংগ্রহ করতে হয়, যা আমাদের জন্য কষ্টকর। বিদেশ থেকে আরও বেশি আমদানির অনুমতি দেওয়া উচিত।”

অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইর পরিচালক হাফেজ হাজী হারুন অর রশীদ, সেরনিয়াবাত মঈন উদ্দিন আব্দুলাহ, মহাসচিব মো. আলমগীর সভায় উপস্থিত ছিলেন।