চালের দাম: ব্যবসায়ীদের বক্তব্য শুনে ‘করপোরেটদের’ হুঁশিয়ারি প্রতিমন্ত্রী টিটুর

“দেশে মিল কারখানা যাতে বাড়ে তাই তাদের সুরক্ষা দেই। কিন্তু এখন তারাই আমাদের খাওয়া শুরু করছে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2024, 01:45 PM
Updated : 18 Jan 2024, 01:45 PM

চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় বড় মিল মালিক ও করপোরেট কোম্পানিকে দায়ী করে আমদানির সুযোগ চেয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। 

তাদের বক্তব্য শুনে নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, সরকার বড় কোম্পানিগুলোতে সুবিধা দিয়েছিল কম দামে চাল প্রাপ্তির আশায়। কিন্তু এর সুফল মেলেনি। তারা যদি ‘সত্যিকারের ব্যবসায়িক আচরণ’ না করলে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। 

বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর সরকারি কৃষি পণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাকক্ষে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর এই মত বিনিময়ের আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। 

গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরপর চালের দাম হঠাৎ করে লাফ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়োজন করা হয়। 

মোহাম্মদপুর সরকারি কৃষি পণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহিদুল্লাহ বলেন, “আপনারা করপোরেটওয়ালাদের ধরেন, তাদের গোডাউনে যান। কোটি কোটি বস্তা তাদের গোডাউনে আছে।” 

কৃষি মার্কেটের এশিয়ান রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মিশকাদুর রহমান বলেন, “করপোরেট কোম্পানিগুলো যেভাবে মজুত করে, গোটা বাজার তাদের হাতে। 

“আমরা মিলারদের থেকে মাল কিনতে বিকালে অর্ডার দিলে রাতে ছেড়ে দেয়। করপোরেট ব্যবসায়ীদের থেকে মাল কিনতে গেলে অগ্রিম ডিও কিনতে হয়। মাল আসে ১০-১৫ দিন পরে। এই যে আমার টাকা আটকে রাখে, সে টাকা দিয়েই সে চাল কিনে। আমি তার কাছে জিম্মি।” 

করপোরেট কোম্পানির মোড়কে চালের দাম বেশি দেওয়া হয় জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, “কোম্পানির প্যাকেট চাউলের দাম কেজিতে ৮৫ টাকা। আর আমি বেচি ৬২ টাকা দিয়া। ২৩ টাকা পার্থক্য এক কেজি চাউলের মধ্যে।” 

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মন্টু বলেন, “নির্বাচনের ঠিক দুই দিন আগে মিলারদের কাছে জানলাম চালের বাজার বেড়ে যাবে। নির্বাচনের ঠিক দুইদিন পরে প্রতি কেজির দাম ৫ টাকা, ৭ টাকা, ৮ টাকা বেড়ে গেছে।” 

দাম বাড়ার পর আগের অর্ডারও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মধ্যে আমাদের আগের চাল শেষ হয়ে গেছে। আমরা বিপাকে পড়ে গেছি। আমাদের দোষারোপ করা হয়েছে, আমরা চাল নাকি সংরক্ষণ করি। কিন্তু আমরা করি না।” 

আমদানির অনুমতি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, “এলসি উন্মুক্ত করতে হবে। তাহলে বাজার কমে যাবে। আমরা ছোট বড় সব পার্টি আমদানি করব।”  

‘তারাই আমাদের খাওয়া শুরু করছে’ 

ব্যবসায়ীদের কথা শোনার পর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দেশে মিল কারখানা যাতে বাড়ে তাই তাদের সুরক্ষা দেই। কিন্তু এখন তারাই আমাদের খাওয়া শুরু করছে। 

“তাদেরকে সুবিধা দিয়েছিলাম যাতে তারা সাশ্রয়ী মূল্যে আমাদের চাল দিতে পারে। এজন্য আমদানি বন্ধ করে রেখেছিলাম। যদি তারা যথাযথ ব্যবসায়িক আচরণ না করে, প্রয়োজনে আমরা আমদানির অনুমতি দিয়ে দেব। তারা তখন প্রতিযোগিতায় টিকতে পারলে টিকবে নাহলে নাই।” 

বাজারে নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, “আমাদের তো প্রতিযোগিতা কমিশন আছে। আমরা যদি দেখি দুই, চার, পাঁচজন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তাদেরকে আমরা কোটা করে দেব, তুমি একটা কোম্পানি হিসেবে এতটার বেশি পারবা না।” 

টাকা থাকলেই সব চাল কিনে নিয়ে বসে থাকার অধিকার আইনে নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মাল মজুদ থাকবে একমাত্র সরকারের গোডাউনে, ইমার্জেন্সির জন্যে। কোনো ব্যক্তির গোডাউনে মাল জমা করে রাখার লাইসেন্স আমরা কাউকে দেই নাই।” 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “গুদামে যে চালগুলো আছে তা যদি এক সপ্তাহ আগে ৬ টাকা কমে কেনা থাকে, আমরা আশা করব তা যেন ৬ টাকা কমেই বিক্রি হয়।” 

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূঁঞা, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হিলালি, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সলিম উল্লাহও এই মত বিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন। 

মতবিনিময় সভা শেষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে কৃষি মার্কেটের বিভিন্ন চালের আড়ত পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী।