চার দিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরবে চালের দাম: খাদ্যমন্ত্রী

তিনি বলেন, “ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নেই, এমন খাদ্য ব্যবসায়ীদের গুদাম সিলগালা করা হবে। এসব ধান সরকার নির্ধারিত মূল্যে কিনে বিক্রি করে দেওয়া হবে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2024, 02:09 PM
Updated : 17 Jan 2024, 02:09 PM

ভোটের পর হঠাৎ করে অস্থির হয়ে ওঠা চালের বাজার আগামী চার দিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে করণীয় ঠিক করতে মিল মালিক, আড়ৎদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বুধবার আলোচনার পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই বলে এ সময় স্পষ্ট জানান মন্ত্রী।

মাসখানেক আগে বাজারে আমন ধান এলেও গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। অন্যদিকে দাম বাড়ায় বেচাকেনা কমে যাওয়ার কথা বলছেন খুচরা দোকানিরা।

Also Read: চালের বাজার তদারকে নামছে ৪ ‘গোপন’ দল

Also Read: ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে কেন?

তারা অসময়ে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য চালকল মালিকদের দুষছেন। অন্যদিকে চালকল মালিকরা বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন।
চালের দাম বাড়তে থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে চারটি ‘গোপন তদারকি দল’  নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার মিল মালিক, আড়ৎদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেন মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

বৈঠক শেষে খাদ্য মন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘদিন চালের বাজার স্থিতিশীল ছিল। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের দুইদিন আগ থেকে হঠাৎ করে কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৬ টাকা করে চালের বাজার বাড়ল কেন এটাই ছিল তাদের কাছে আমার প্রশ্ন। তারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছে সব ব্যাখ্যা আমার ভালো লাগেনি। কারণ এখন আমনের ভরা মৌসুম, এখন আমন ধানের চালের দাম বাড়বে তা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনা।”
আলোচনায় কী পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনেকেই ধান স্টক করেছেন বলে কথা এসেছে। অব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা স্টক করে, মিল মালিকরা স্টক করে, এভাবে স্টক চলছে। মিল গেইটেই যদি প্রতিদিন ১০০ টাকা করে বাড়ে তাহলে পাইকাররা কী করবে? যারা ছোট ছোট প্যাকেট করে বিক্রি করেন তারাও কেজিতে ৮/১০ টাকা বেশি এমআরপি লেখেন। এগুলো চিন্তা করার ব্যাপার। টাকা বিনিয়োগ করেছেন যেহেতু ব্যবসা তো করবেন। কিন্তু ব্যবসার তো একটা লিমিট আছে। কিন্তু চার দিনের মধ্যে কেজিতে ৬ টাকা করে বেড়ে যাবে এটা হয়না। এটা লোভে পরিণত হয়েছে। এই লোভ সংবরণ করতে হবে।”

চালের দাম বাড়ার পেছনে কী কারণ পেয়েছেন, জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তারা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। নির্বাচন শেষে এসে দেখেন বাজারে ধানের দাম বেড়ে গেছে।
“ধান-চালের দাম যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে সেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে কমবে। আগামী চার দিনের মধ্যে চালের দাম পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। আজকের বৈঠকে ব্যবসায়ীরা আমাকে এ বিষয়ে কথা দিয়েছেন।”

পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার অভিযান শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নেই, এমন খাদ্য ব্যবসায়ীদের গুদাম সিলগালা করা হবে। এসব ধান সরকার নির্ধারিত মূল্যে কিনে বিক্রি করে দেওয়া হবে।”

বাংলাদেশ অটো মেজর হাস্কিং মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, নির্বাচনী প্রচারের সময়ে বেশ কিছুদিন বাজারে ধানের সরবরাহ কম ছিল। সরবরাহ কমে যাওয়ার ওই সময়ে ধানের দাম মণে ১০০/২০০ টাকা বেড়ে যায়। এখন আবার ধানের দাম কমতে শুরু করায় চালের দামও আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।”

লাইসেন্স নিয়ে কড়াকড়ি

এখন থেকে লাইসেন্সবিহীন খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করতে গেলে আইনি জটিলতায় পড়ার কথা ব্যবসায়ীদের স্মরণ করিয়ে দেন খাদ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “যারা বিনা লাইসেন্সে ধান স্টক করে রেখেছেন, সেখানে ছাড় দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আমার বাড়ি (নওগাঁ) থেকে আমি অভিযান শুরু করেছি। মিটিং চলাকালীন সময়ে এক আড়তে চার হাজার মণ ধান পেয়েছে, যেখানে কোনো লাইসেন্স নেই। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলেছি সিলগালা করেন। নির্ধারিত সীমার বেশি চাল স্টক রাখলেও একই পরিণতি হবে। চাল রেডি করলে সেটা মার্কেটে ছাড়তে হবে। যদি খরিদ্দার না পান তাহলে দাম তো কমে যাওয়ার কথা। বাজার বাড়ে কেন?

“কয়েক বছর ধরে আমি নির্দেশনা দিয়েই যাচ্ছি। এটা আমার চূড়ান্ত নির্দেশনা। আড়ৎদার, ফড়িয়া, মিল মালিক সবাইকে ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা আবেদন করলে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে তাদের ঠিকানায় লাইসেন্স দিয়ে আসতে হবে। লাইসেন্সধারীদের সাত দিন পর পর বেচাবিক্রির রিটার্ন জমা দিতে হবে। আড়ৎদাররা কতখানি ধান কিনেছে, কোন কোন মিলে বিক্রি করেছে এর হিসাব দাখিল করতে হবে।”

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশ অটো মেজর রাইস মিল মালিক সমিতি, বাবু বাজার বাদামতলী বণিক সমিতি, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, চাল আমদানিকারক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি।