ঔপনিবেশিক সন্দেহ-অবিশ্বাস ছাড়তে হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী

এম এ মান্নান বলছেন, ‘লাঠিসোঁটা নিয়ে হাইওয়েতে বিবাদ করে’ মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, জাপান, চীন বা কোরিয়ার মত উন্নয়ন করা যাবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 06:56 PM
Updated : 21 Nov 2022, 06:56 PM

 সবার জন্য উন্নত জীবন গড়তে সন্দেহ আর অবিশ্বাস কাটিয়ে সামাজিক ভ্রাতৃত্বের নীতিতে একসঙ্গে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

তিনি বলেছেন, “শুধু ব্যবসা নয়, রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও আমাদের একসঙ্গে চলতে হবে। ঔপনিবেশিক সময়ের মত সন্দেহপ্রবণতা আর অবিশ্বাস নিয়ে চলা উচিত নয়। সবার জন্য সম্পদ সৃষ্টি করে মানুষকে উন্নত জীবন দিতে আমাদের মতভেদ ভুলে মানুষের উন্নয়নে কাজ করা উচিত।”

সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় ‘ইন্ডিয়ান ওশান রিম বিজনেস ফোরাম (আইওআরবিএফ)’ আয়োজিত ‘লিডারশিপ সামিট’ এর দ্বিতীয় দিনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন এম এ মান্নান।

তিনি বলেন, “মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, জাপান, চায়না, কোরিয়াসহ যারাই উন্নতি করেছে, তারা সমাজে সহযোগিতা-সহমর্মিতার মাধ্যমেই করেছে। লাঠিসোঁটা নিয়ে বেরিয়ে হাইওয়েতে বিবাদ করে আমরা বোধয় সেটা অর্জন করতে পারব না।”

উন্নত জীবন নিশ্চিতে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “উত্তর আমেরিকা, জাপান ও ইউরোপ কীভাবে উন্নতি করেছে; সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের এ বিষয়ে অনেক কিছু করার আছে।

“কেবল ব্যবসা নয়, আমাদেরকে একসঙ্গে আসতে হবে এবং ঔপনিবেশিক…, সন্দেহপ্রবণতা ও অবিশ্বাস দূর করতে হবে। পাশাপাশি সমতার ভিত্তিতে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আমরা আমাদের সম্পদ বাড়াতে পারি এবং জনগণের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে পারি।”

২৩ দেশের জোট ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশেনের (আইওআরএ) আওতাধীন আইওআরবিএফ দুই দিনব্যাপী এই লিডারশিপ সামিট আয়োজন করেছে। বর্তমানে আইওআরএ এবং আইওআরবিএফ-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার একই হোটেলে আইওআরএর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে।

গেল দেড় দশকে শক্তিশালী নেতৃত্বে মাধ্যমে বাংলাদেশ ‘অনেকদূর’ এগিয়েছে মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “বর্তমানে এদেশে দেশি-বিদেশি সকলের জন্য বিনিয়োগের একটি উন্নত ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমান যাত্রী পরিষেবায় যে সমস্যা ছিল, সম্প্রতি তারও অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।

“শুধু তাই নয়, বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার হলে তাও নিশ্চিত করতে সরকার প্রস্তুত।”

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকা, মুম্বাই কিম্বা হংকংয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে যে দক্ষতা অর্জন দরকার, তা আমাদের প্রশাসন অর্জন করেছে।”

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন-জাপান এই তিনটি অঞ্চল বৈশ্বিক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে মন্তব্য করে মান্নান বলেন, “এই তিন ব্লকের সঙ্গে বিদ্যমান ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে আমাদের দরজা খোলা। এবং আমরা চাই, তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরদার করে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে।

“বিশেষ করে উত্তরের দেশ যেমন উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং জাপান-কোরিয়া যেভাবে উন্নয়নে শিখরে পৌঁছেছে; তারা কীভাবে উন্নয়ন করল, সেখান থেকে আমাদের শিখতে পারি।”

সাবেক রাষ্ট্রদুত আব্দুল হান্নানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেল বক্তা ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ মিশনের উপ প্রধান বার্ন্ড স্পেনিয়ার।

তিনি বলেন, “আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা এশিয়ার প্রায় সকল প্রান্তে এখন সরবরাহ ব্যবস্থা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে জ্বালানি এবং খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতির কারণে বাজারে সরবরাহে বিঘ্ন হচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক মানুষ খাদ্য সংকটে পড়ছে।”

কোভিড মহামারী থেকে উত্তরণের পর ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ সারা বিশ্বের সরবরাহ ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করেছে। তবে এই সংকটের মধ্যে সমাধানও রয়েছে বলে মনে করেন স্পেনিয়ার।

তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি সংকট নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করে। যেমন- বাংলাদেশের রানা প্লাজা সংকট এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এখন বিশ্ব নতুন সংকটেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”