রেন্টাল বিদ্যুৎ বাতিলের দাবি টিআইবির

দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ‘একটি বড় অংশ অব্যবহৃত থাকায়’ ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎ পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2020, 04:22 PM
Updated : 20 May 2020, 04:22 PM

বুধবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়ে টিআইবি বলেছে, “সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য এবং নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যম প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বিদ্যুৎ সক্ষমতার একটি বড় অংশ অব্যবহৃত থাকায় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া ও ভর্তুকি হিসেবে রাষ্ট্রের গগনচুম্বী অপচয়ের বোঝা জনগণের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে।”

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকনোমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) সোমবার বাংলাদেশের বিদ্যুৎ নিয়ে পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অর্ধেকের বেশি উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেনি সরকার, যার জন্য আবার জনগণের ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর যে পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে, তাতে দেশ উৎপাদন সক্ষমতার অপচয়ের বৃত্তে আটকা পড়ে ‘ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে’ বলে আইইইএফএ’র ভাষ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারীর আগে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৪৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ৫৭ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার হয়নি, অলস পড়ে ছিল।

টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী দেশের বিদ্যুৎ সক্ষমতার একটি বড় অংশ বর্তমানে অলস বসে থাকায় ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত এ খাতে মোট ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে।

আইইইএফএ’র প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি স্থাপন করায় সরকারকে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতি আরও দীর্ঘ হলে অব্যবহৃত বিদ্যুৎ সক্ষমতার অপচয় বাবদ এপ্রিল-ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ ৩৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। এমতাবস্থায় বিদ্যুৎ বিভাগ ইতোমধ্যে সরকারের কাছে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের পাওয়ার সেল জ্বালানি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার স্বার্থে সেচের জন্য কৃষককে প্রদেয় ভর্তুকির টাকা কৃষি মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রদানের যে সুপারিশ করেছে তাকে ‘অন্যায্য’ বলেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “অপ্রয়োজনীয় অলস বসে থাকা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখাকে কৃষকের জন্য নির্ধারিত ভর্তুকির চেয়ে প্রাধান্য দেওয়া চরম বৈষম্যমূলক।

“এর ফলে কৃষকরা যেমন বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি ধনাঢ্য বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের জন্য অযাচিত ভর্তুকির বোঝাও বাস্তবে কৃষকসহ সাধারণ মানুষকেই বইতে হবে।”

ইফতেখারুজ্জামান সরকারের পদক্ষেপকে ‘গণবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এখান থেকে সরে এসে বরং বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ভর্তুকি প্রদান বন্ধ করতে হবে, দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ আইন-২০১০ বাতিল করতে হবে এবং পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান-২০১৬ নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “দেশে ২১ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও সরকারের অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাত থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নেও বাস্তব প্রচেষ্টা লক্ষণীয় নয়।

“সঠিক পরিকল্পনার ঘাটতি এবং চাহিদা না থাকার পরও শুধু ব্যবসায়িক কারণে একের পর এক কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে জ্বালানি খাতে সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এমন স্ববিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তির আলোকে সরকার প্রতিশ্রুত ২০৫০ সাল নাগাদ পরিবেশবান্ধব এবং আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী ১০০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”