ছুটিতে ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার কমলেও নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এবারের টানা ছুটিতে উল্টো চিত্র দেখছে অপারেটররা।
Published : 29 Mar 2020, 06:26 PM
ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, এই ছুটিতে বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ চাহিদা বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।
বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়েছে।
এই সময়ে সবাইকে বলা হয়েছে নিজের ঘরে থাকতে। বাইরে বের হতে না পারা মানুষদের এখন ঘরে সময়ের অনেকটাই কাটছে ইন্টারনেটে।
এই ছুটি শুরু হওয়ার পরপরই ইন্টারনেট চাহিদা বেড়ে যায় বলে জানান ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসা-বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহার প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।”
তবে চাহিদা বাড়লেও গ্রাহকদের তেমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ছুটিতে কর্পোরেট ব্যাবহারকারীদের ইন্টারনেট ব্যবহার এখন বন্ধ রয়েছে এবং সেই ক্যাপাসিটি বাসা বাড়িতে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান হাকিম।
“ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৮০০ বেশি সদস্য রয়েছে তাদের বেশিরভাগই এ তথ্য জানিয়েছে।”
বর্তমানে বাসা-বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়লেও ব্যবসায় কিছু ক্ষতির সম্ভবনার কথা জানেয় হাকিম বলেন, “বাসা-বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়লেও অনেক আইএসপি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, যারা মূলত কর্পোরেটে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন।”
বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট বিল নিয়ে সমস্যা না হলেও ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে তাদের সংযোগ এক মাসের জন্য বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে বলে জানান হাকিম।
এ ধরনের কত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখতে বলেছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পুরোপুরি তথ্য এখনও আমাদের কাছে আসেনি, এ তথ্য পেতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সংযোগ বন্ধ রাখতে বলছে।“
টেলিযোগোযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি নাগাদ দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সংখ্যা ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণত ছুটিতে ইন্টারনেট ব্যবহার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে যায়। তবে এবার ছুটিতে দেখা যাচ্ছে এর উল্টো চিত্র।”
এবারের ছুটিতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ চাহিদা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে সুমন বলেন, “বতর্মান সময়ে বাসাবাড়িতে ভিডিও স্টিমিং বেশি হচ্ছে, ইউটিউব বা ভিডিও কনফারেন্সে যাচ্ছে ব্যবহারকারীরা। এসব কারণেই এ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।”
দেশে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে সুমন জানান, চাহিদা বাড়লেও ব্যবহারীকারীদের কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না, কারণ দেশে দুটি সাবমেরিন কেবল সংযোগ ও ৬টি আইটিসি রয়েছে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল ‘সি-মি-উই-৪’ এ যুক্ত হয় ২০০৫ সালে। আর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে সি-মি-উই-৫ সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হয়।
সাবমেরিন কেবল ছাড়াও বাংলাদেশ এখন ছয়টি বিকল্প মাধ্যমে (আইটিসি বা ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবল) ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের সঙ্গে যুক্ত।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের ডাটার ব্যবহার বেড়েছে ২১ শতাংশ।
“কিন্তু ডাটা মূল্যে ভর্তুকি এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনামূল্যে এবং খরচের তুলনায় কম মূল্যে দেওয়ার কারণে রাজস্ব আয়ে এর কোনো প্রতিফলন পড়বে না।”
বাংলালিংকের সিনিয়র ম্যানেজার (কর্পোরেট কমিউনিকেশনস) আংকিত সুরেকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রাহকদের ডেটা ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে তা খুব উল্লেখযোগ্য নয়।
“তবে আমাদের গ্রাহকদের চাহিদা এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ও গ্রাহকদের সুবিধার্থে কিছু প্যাকেজের দাম আমরা প্রায় ৪০% কমিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও আমরা আমাদের দ্বিগুণ ডাটা বোনাস অফারের সময়ও বাড়িয়েছি।”
এছাড়াও বাংলালিংকের প্রিপেইড গ্রাহকদের জন্য ৭ দিন মেয়াদি সকল অননেট-এ এসএমএস ফ্রি অফার চালু করা হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসেবে, গত ফেব্রয়ারি নাগাদ দেশে ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে।