বেড়েছে মুরগির দাম, সবজি বাজারও চড়া

রোজা শুরুর আগেই কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে ছোলার দাম। শুল্ক কমানোর পরও খেজুরের দাম কমেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2024, 01:04 PM
Updated : 8 March 2024, 01:04 PM

রোজার আগে শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মহাখালী কাঁচাবাজারে এসেছিলেন শাহরিয়ার হাসান; সবজির সব দোকান ঘুরে মুরগির দোকানে গিয়ে বেশ ‘হতাশাই’ প্রকাশ করলেন।

বেসরকারি চাকরিজীবী হাসানের ভাষ্য, “রোজা তো প্রায় চলে এসেছে। এই মাসে মানুষ চেষ্টা করে একটু ভালো-মন্দ খাইতে। কিন্তু ওই সুযোগ নিয়েই এ মাসে দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা।”

বাজারে জিনিসপত্রের চড়া দামের মধ্যে রোজায় দাম আরো বাড়লে তা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে বলে আক্ষেপ করলেন মহাখালীর এই বাসিন্দা।

চার দিন পরই শুরু হচ্ছে রোজা। তার আগে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মহাখালীর কাঁচাবাজারে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। রোজার মাসের কথা ভেবে কেউ কেউ বেশি করে মাছ-মাংস কিনছিলেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে তাদের দরকষাকষিও হচ্ছিল।

গেল সপ্তাহে এ বাজারে ১৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি শুক্রবার ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। তার মানে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়ে গেছে ৩০ টাকা।

সোনালি মুরগি এদিন ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা দরে। আর সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে দাম ছিল ৩০০ টাকা। দেশি মুরগির দাম ৬৫০ থেকে বেড়ে ৭০০ হয়েছে এ বাজারে।

ফলে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন।

মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আবদুল ওয়াদুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুরগির দাম তো ওঠানামা করে। দাম একটু বাড়তি, পাইকারি দর বেশি, এজন্য আমরাও বাধ্য হয়েই একটু বাড়তি দামেই বিক্রি করছি।”

এ বাজারে দোকান ভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার কেজি দরে। আর খাসির মাংসের কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। অর্থাৎ, গত কয়েক সপ্তাহে দাম বেড়ে যে পর্যায়ে উঠেছে, সেখান থেকে আর নড়চড় হয়নি খুব একটা।

চড়া সবজির দাম

কেজিতে ৬০ টাকার নিচে ‘মিলছে না’ গ্রীষ্মকালীন কোনো সবজি।

কচুমুখী কেজিতে ১০০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০, করলা ১০০, ঢেঁড়স ৮০, বরবটি ১৪০, শশা ৮০, পেঁপে ৫০, ধুন্দল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০, ঝিঙ্গা ৮০, পটল ১১০, সজনে ২৪০ এবং লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কম দেখা গেছে নিকেতন কাঁচাবাজারে। শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, পাকা টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা, মূলা ৪০, গাজর ৩০ থেকে ৪০, ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০, ব্রোকলি ৩০ টাকা, শীমের বিচি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ধনে পাতা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, লেবুর হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁয়াজকলি ৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

নিকেতন কাঁচা বাজারের বিক্রেতা রুস্তম আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রীষ্মকালীন সবজি এখনো বাজারে পুরোপুরি এসে পৌঁছেনি। অন্য বছরের তুলনায় সরবরাহও কম । তাই সবজির বাজার একটু চড়া।”

সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই বিক্রেতা।

‘আগের মতই’ মাছের বাজার

নিকেতন কাঁচা বাজারের মাছ বিক্রেতারা বললেন, গত এক সপ্তাহে মাছের দামে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।

এ বাজারে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ৭০০-৭৫০ টাকা কেজি, আকারভেদে শিং মাছ ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, রুই মাছ ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, মাগুর মাছ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০, পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০, বোয়াল ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি, কাতলা ৩৫০ থেকে ৬০০, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৮০, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৪০, মলা ৪০০ থেকে ৫০০, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০, কাঁচকি মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বিক্রেতা শরিফউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাছের দাম গত সপ্তাহের মতই আছে। দুয়েকটা মাছের হয়ত দাম বাড়ছে। তবে, রোজার আগের দিন বা প্রথম রোজায় দাম কিছুটা বাড়তে পারে। বাজারে তখন চাহিদা বেশি থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়বে।”

দাম বেশি খেজুর ও ছোলার

রোজা শুরুর আগেই বেড়েছে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ ছোলার দাম। মাস খানেক আগে প্রতি কেজি ছোলা ১০০ টাকায় মিললেও এখন গুনতে হচ্ছে ১২০ টাকা।

নিকেতন বাজারে শামসুল আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, “আরব-আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রোজায় পণ্যের দাম কমে। আর আমাদের এখানে রোজা এলেই বাড়ে। যে ছোলা এক মাস আগেও ৮০ থেকে ৯০ টাকা করে কিনলাম, আজ কিনেছি সেটা ১২০ টাকা করে। এখনো তো রোজা বাকি। আরো বাড়লেও অবাক হব না।”

অপরদিকে শুল্ক কমানোর পরও খেজুরের দাম কমেনি বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা।

বাজারে পুরোনো সি গ্রেডের খেজুরও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। আর ইরানি মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা, সৌদি মরিয়ম খেজুর ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, আজোয়া খেজুর ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় ও জাহিদী খেজুর ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।