টেলিকম অপারেটরদের 'আরও স্বাধীনতা' চান রবির সিইও

“আপনারা এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। বাজার তার পথ নির্ধারণ করবে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2024, 07:27 PM
Updated : 22 Feb 2024, 07:27 PM

টেলিকম খাতে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মত কাজ তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি চান দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব শেঠি।

তিনি বলছেন, এখন অপারেটরদের এমন সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে তারা নিজেদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার ‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা’ পায়। তাতে সেবার মান বাড়বে এবং শেষ বিচারে ‘গ্রাহকই লাভবান হবে’।

একসঙ্গে রবি ও এয়ারটেল দুটি ব্র্যান্ডের নেতৃত্ব দেওয়া রাজীব এর আগে বাংলাদেশে গ্রামীণফোনের এমডি ও সিইও হিসেবে কাজ করেছেন। ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার দীর্ঘ দিনের। বাংলাদেশে আসার আগে কাজ করেছেন মিয়ানমারেও।

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সামগ্রিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট রাজীব কর ও নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিনিষেধকে এ খাতের সম্প্রসারণের বাধা হিসেবে দেখছেন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেভাবে সেবার দর নির্ধারণ করে দেয়, তার বদলে বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান রেখে রবির সিইও বলেছেন, “আপনারা এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। বাজার তার পথ নির্ধারণ করবে।”

সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন রাজীব শেঠি। সেখানে লাভ ক্ষতির হিসাব যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে কলড্রপের মত ভোগান্তির প্রসঙ্গও।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ২০২৩ সালে রবি ৯ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে, যা কোম্পানির ইতিহাসে রেকর্ড। সরকারকে কর পরিশোধের পর রবি মুনাফা দেখিয়েছে ৩২১ কোটি টাকা। রেকর্ড আয়ের পেছনের গল্পটা কী? কিন্তু মুনাফা এত কম কেন?

রাজীব শেঠি: এটা রবির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় সেটা সত্য। কিন্তু খুব দ্রুত বর্ধনশীল একটি কোম্পানি প্রতিবছরই আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করবে, এটাও স্বাভাবিক হওয়ার কথা। শুধু বাংলাদেশে নয়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে আমাদের যে আয় তাতে আমরা পুরো এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কোম্পানি। আর এখন এই ম্যাক্রো সিচুয়েশেনে চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই, তবে এটা কোম্পানির জন্য খুব রিমার্কেবল পারফরমেন্স। আমি খুবই খুশি।

মুনাফার যে বিষয়টা এসেছে ৩২১ কোটির মত, এটা অনেক কম, আমরাও সেটা বলছি। তবে গত বছরের চেয়ে এটা অনেক বেশি। আমি যদি ঠিক মনে করতে পারি, তাহলে এটা গত বছরের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বেশি। আমরা জানি, আমরা যেখানে আছি, সেখানে আমাদের থাকার কথা ছিল না। এটার পেছনেও অনেকগুলো কারণ আছে। এখানে খরচ অনেক বেশি। আর আয় ও মুনাফার মধ্যে যে ফারাক, তার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ট্যাক্স। এখানে আয়ের ওপর অন্তত দুই শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়, যদিও এটা কোম্পানি হিসেবে অনেক করের চেয়ে ছোট। এই বিষয়গুলো আমাদের লাভের সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যেখানে আমরা যেতে চাই।

এ বছর আমাদের গতি অনেক বেশি, লক্ষ্য অনেক উঁচুতে। তবে এ বিষয়ে আমরা কিছু বলব না, যেহেতু আমরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি।

গত বছর রবির ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কল ও ইন্টারনেট থেকে আয়ের অনুপাত এখন ৬০:৪০। এই উল্লম্ফনের কারণ কী?

রাজীব শেঠি: এটার পেছনেও একাধিক কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের টেলিকম মার্কেটের একটা খুবই অনন্য বিষয় আছে। এখানকার বেশিরভাগ গ্রাহক এখনো ভয়েস কল নির্ভর। তবে আপনি যদি আশপাশের দেশগুলো দেখেন, ভারত, থাইল্যান্ড কিংবা মিয়ানমার…। আমি সম্প্রতি মিয়ানমারে কাজ করে এখানে এসেছি। এসব দেশে টেলকোর আয়ের ক্ষেত্রে ভয়েস কলের অবদান অনেক কম। এর বড় কারণ হল বাংলাদেশে এখনো বেসিক ফোনের ব্যবহারকারী অনেক বেশি। আশপাশের দেশগুলোর চেয়ে এখানে পিওর ভয়েস হ্যান্ডসেট ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। সে কারণে এখানকার পরিস্থিতি আশপাশের দেশগুলোর মতো নয়, এখানে ডেটার চেয়ে ভয়েস কলের হার বেশি।  

হঠাৎ ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়ার কারণ কী? অন্য অপারেটর থেকে গ্রাহকরা রবিতে আসছে? না কি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে তারা স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করেছে?

রাজীব: এখন ডেটার ব্যবহার বৃদ্ধি একটা ন্যাশনাল ফেনোমেনা। আপনি স্মার্টফোনে ডেটা ব্যবহারকারী হলে সেখানে অনেক রকমের কন্টেন্ট পাবেন। মানুষ এখন ডেটানির্ভর জীবন কাটাচ্ছে। যেমন গতকালই আমি এক জায়গায় গিয়েছিলাম। তখন ভারত ও ইংল্যান্ডের ম্যাচ চলছিল, আমি সেটা ফোনেই দেখে নিতে পারি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে, যেখানে ফাইবার নেটওয়ার্কের সুবিধা খুবই অপ্রতুল, বড় শহরগুলোতে হয়ত পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে মানুষের বিনোদন, শিক্ষা এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত থাকার মাধ্যম হয়ে উঠেছে হাতের এই ফোনটি। সুতরাং কাঠামোগতভাবেই আরো বেশি বেশি মানুষ আরও বেশি বেশি ডেটা ব্যবহার করবে।

বাংলাদেশের বাজারের ভালো দিকটি হচ্ছে, ডেটা ব্যবহারকারী বাড়ছে, কিন্তু ভয়েস কল কমছে না। আর টেলকো অপারেটর হিসেবে আমাদের দুটোই বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা আমাদের ভয়েস কলের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। ভয়েস কল বাড়ছে সেটা বলা যাবে না, তবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেভাবে কমছে এখানে সেভাবে কমছে না- এটা আমাদের জন্য ভালো বিষয়।

অনেকদিন থেকেই ফাইভ জির কথা শোনা যাচ্ছে। সেটা এখনো সেভাবে সম্প্রসারিত হতে দেখা যাচ্ছে না। সেটা কেন এবং ফাইভ জি আসলে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে?

রাজীব: কারিগরিভাবে আমরা ফাইভ জি প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত। এটা এখন একটা খুব পরিচিত প্রযুক্তি। এমন না যে এটা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন, তবে ব্যবহারকারী পর্যন্ত যেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

কিন্তু আমরা যদি কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে দেখি, যে আমরা ওয়ান জি বা টু জি থেকে যখন থ্রি বা ফোর জিতে এলাম, এটা কিন্তু শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়। দিন শেষে কিন্তু লাখ লাখ গ্রাহক এর সুবিধা পাচ্ছেন। প্রযুক্তিগত এই উন্নয়নগুলো প্রচুর সংখ্যক গ্রাহককে সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এটাই আমাদের দেখার বিষয়, যে গ্রাহকরা এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে কতখানি সুবিধা পাচ্ছেন।

থ্রি জি থেকে ফোর জিতে উন্নয়নের পর গ্রাহকরা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। আমি যেটা বলছিলাম, ম্যাচ দেখার কথা। এ প্রযুক্তিতে গ্রাহক বাধাহীনভাবে যে কোনো ভিডিও উপভোগ করতে পারেন। যেমন আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সঙ্গে স্পন্সর হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষর করে ৩০ মিনিটের যাত্রাপথে বাসায় ফিরলাম, তখন আমি ম্যাচ দেখলাম। বাফারিং ছাড়াই সেটা দেখতে পেরেছি, সেটা এক সেকেন্ডের জন্যও থেমে যায়নি। এ বিষয়টা আবার থ্রি জিতে সম্ভব নয়। তাই আমরা বলছি থ্রি জি থেকে ফোর জিতে উত্তরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকদের জন্য।

কিন্তু ফোর জি থেকে ফাইভ জিতে উত্তরণের ফলে খুব অল্প সংখ্যক গ্রাহকই সুবিধাভোগী হবেন। ফাইভ জিতে আপনার ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের অভিজ্ঞতায় কোনো নাটকীয় পরিবর্তন আসবে না। আপনি এখন যেভাবে এইচডি ভিডিও বাফারিং ছাড়া দেখতে পারছেন, ফাইভ জিতেও সেটাই দেখবেন।

ফাইভ জিতে মূলত দুটি বিষয় ঘটে। প্রথমত, এটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আবার যখন ডেটা ভলিউম বেড়ে যায়, তখন টেলিকম অপারেটরকেও ফাইভ জি স্পেক্ট্রাম ডেপ্লয় করতে হয় তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, কারণ ডেটার চাহিদা তখন অনেক বেড়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, এটা লেটেন্সি কমিয়ে দেয়। লেটেন্সি হচ্ছে আপনার ক্লিক করা আর চাহিদামত সাড়া পাওয়ার মধ্যবর্তী যে সময় সেটা। সুনির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক এরকম সর্বনিম্ন লেটেন্সি চান, তারা বিশেষায়িত কিছু কাজ করেন। যেমন যারা গেইমার, আমাদের অনেক তরুণ বন্ধু আছেন, তারা এরকম চাইতে পারেন। এছাড়া সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফোর জি যথেষ্ট। আবার কেউ যদি তার কারখানাকে অটোমেটেড করতে চান, সেক্ষেত্রে ফাইভ জি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা শিল্পে ব্যবহার খাতে চলে যাবে।

সুতরাং ছোট করে বললে, (অধিকাংশ) গ্রাহকের দিক থেকে ফোর জি যথেষ্ট। আবার যখন অ্যাপল প্রোর মত নতুন ডিভাইসগুলো, যারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে আসছে, সেগুলো গ্রাহকদের হাতে হাতে গেলে তখন ফাইভ জির চাহিদা বাড়বে। বাংলাদেশের গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোর জন্য বর্তমানের ফোর জি যথেষ্ট এবং সেটা দারুণভাবে কাজ করছে।

আমি বিভিন্ন দেশে যাই, যেখানে ফাইভ জি আছে। আমি দেশগুলোর নাম বলছি না, কিন্তু সেসব দেশে ডেটা ব্যবহারের অভিজ্ঞতা একেবারে বাংলাদেশের মতই। বাংলাদেশে শুধু রবিই নয়, পুরো টেলকো ইন্ডাস্ট্রি গ্রাহকদের এই সুযোগ তৈরি করছে। আমি মনে করি এজন্য আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত।

আপনি ভারতে কাজ করেছেন, মিয়ানমারে কাজ করেছেন। এর আগে বাংলাদেশে গ্রামীণফোনে কাজ করে গেছেন, এখন বাংলাদেশের টেলিকম খাতের পরিবেশ কী রকম দেখছেন।

রাজীব: বাংলাদেশের এই টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির বড় ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এটার কাঠামো খুব ভালো। এখানে মাত্র তিনটি বড় প্লেয়ার রয়েছে। আমি মনে করি এটা ভালো একটি সংখ্যা। আমরা ভারতের বাজারে অনেক প্লেয়ার দেখেছি, একই সময়ে ১০, ১১, ১২ জন একই বাজারে প্রতিযোগিতা করছে। তাতে কেউই ব্যবসা করতে পারছে না এবং এর সর্বশেষ ফলাফল হচ্ছে গ্রাহকদের ভোগান্তি। সুতরাং মার্কেটে সঠিক সংখ্যক প্লেয়ার থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এটা প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি করে। বাংলাদেশে এই তিন কোম্পানিই আমরা একে অপরের ভালো প্রতিযোগী। এবং আমরা সবাই মিলে এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি যে, আমাদের গ্রাহকরা যেন দাম এবং সেবার মানের দিক থেকে ভালো সব সুবিধা পায়।

মার্কেট স্ট্রাকচার খুব ভালো। এখন বিটিআরসিসহ নিয়ন্ত্রকদের যা করা উচিত তা হচ্ছে, এই প্রতিযোগিতাটাকে সুযোগ করে দেওয়া। আপনারা এর আগে দেখেছেন, বিটিআরসি দামের মত বিষয়গুলো বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি মনে করি এ বিষয়গুলো প্রতিযোগিতামূলক বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। এখানে যদি আরও কম প্রতিযোগী থাকত, তাহলে এখানে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন উঠত। যেখানে বাজার প্রতিযোগিতামূলক, সেখানে আসলে এরকম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন কমে যায়।

আমাদের দিক থেকে বিষয়গুলো আরও জটিল হয়ে যায়। এখানে মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যেখানে অনেক কিছুর দাম সব-সময় ওঠানামা করে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমাদের পণ্যগুলো বাজারে ছাড়তে হয়। দাম বেঁধে দেওয়া থেকে দূরে থাকাই ভালো বলে মনে করি।

আরেকটা ভালো বিষয় হচ্ছে, বিটিআরসি এখন বলে যে তারা আর রেগুলেটর নয়, তারা ফেসিলিটেটর। আমি মনে করি এটা খুব ভালো অবস্থান। আমরা সবাই এখানে এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি যে বাংলাদেশ সেরা টেলিকম সেবাটা পাক। এটা সবারই জানা যে টেলিকম খাতের পেনিট্রেশন প্রতি শতাংশের বিস্তারের জন্য বাংলাদেশের জিডিপি আধা শতাংশ পয়েন্ট করে বাড়ে। এটা একটা বেঞ্চমার্ক।

দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য টেলিকম খাতের উন্নতি এখন অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য এই খাত এত গুরুত্বপূর্ণ। বিটিআরসিও এ বিষয়টা স্বীকার করে। এগুলো হচ্ছে ভালো দিক।

আবার এ দেশের টেলিকম ইকোসিস্টেম অনেকগুলো ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত, যেটা অন্য দেশে দেখা যায় না। এখানে অনেক ধরনের লাইসেন্সের বিষয় আছে। উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, আমরা যদি দুটো পৃথক জায়গার মধ্যে আমাদের ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি বাড়াতে চাই, তাহলে সেটা আমরা আমাদের নিজস্ব ফাইবার দিয়ে করতে পারব না। আমি আমার গ্রাহক পর্যন্ত ফাইবারের কথা বলছি না। এটা যদি আমাদের নিজেদের স্ট্রাকচারের মধ্যেও হয়, আমরা যদি আমাদের দুটো টাওয়ারকে সংযুক্ত করতে চাই, তাহলে আমাদের তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভর করতে হয়। এবং এই তৃতীয় পক্ষগুলো বাংলাদেশে ততটা সুগঠিত নয়। সেই বাজারটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ নয়। এটা আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সক্ষমতার ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা।

আপনারা এখন এ অবস্থার পরিবর্তন চাইছেন?

রাজীব: অবশ্যই। মনে করুন যে আমি গ্রামীণফোনের সঙ্গেই কানেক্টিভিটি চাই। এর জন্য আমাকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যুক্ত হতে হবে। এরকম ব্যবস্থা কেবল বাংলাদেশেই রয়েছে। এরকম নিয়ম রাখার কোনো কারণ নেই। এর মাধ্যমে গ্রাহক উপকৃত হচ্ছে না। আমাদের গ্রাহক সেবা দেওয়ার সক্ষমতাও এর মধ্য দিয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা মনে করি, এখন অপারেটরদের আরও একীভূত (ইউনিফায়েড) লাইসেন্স দেওয়া উচিত, যার মাধ্যমে অপারেটররা নিজেদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা পাবে। গ্রাহক ও কারিগরি ব্যবস্থার পুরো চেইনের মধ্যে অপারেটরদের এমন অবস্থান থাকতে হবে, যাতে সে পুরোটার ওপর নিয়ন্ত্রণ পায়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সবাই নিশ্চয় মানসম্মত সেবার বিষয়ে আগ্রহী হবেন।

আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, সেবার মান শুধু টাওয়ারে কী ধরনের যন্ত্রপাতি বসাচ্ছি, তার ওপর নির্ভর করে না। টাওয়ার থেকে সব রকমের ডেটা আমাদের ডেটা সেন্টারে পাঠাতে হয়, সেখান থেকে ইন্টারনেটে। আর সমস্যা যে কোনো জায়গায় হতে পারে। আমি আমার রেডিও ইকুইপমেন্টগুলো যেন অত্যাধুনিক ও সবচেয়ে ভালো সক্ষমতার হয়, সেটা নিশ্চিত করতে পারি। কিন্তু আমি যদি ট্রান্সমিশনের বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তাহলে আমি ভালো মানের নিশ্চয়তা দিতে পারব না। আমি এখন এ বিষয়গুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি, যেগুলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা নিশ্চয় আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব, কিন্তু সময় লাগবে বেশি।

তাহলে কী আপনি এসব ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের অংশীদারত্ব চাইছেন না?

রাজীব: আমি চাইছি অন্য বাজারগুলোর মত এ বাজারটাও উন্মুক্ত হোক। আমি বলছি না তৃতীয় পক্ষের অংশীদারত্ব বন্ধ করে দেওয়া হোক। অবশ্যই তারা থাকবেন। কিন্তু আমরা যদি নিজেরাই আরও দক্ষতার সঙ্গে ফাইবার স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি, তাহলে আমাদের সেটা করতে দেওয়া উচিত। আপনাকে উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি টাওয়ার ব্যবসার কথা। টাওয়ার ব্যবসা পৃথকীকরণের নিয়ম আসার আগেই আমরা ব্যবসায়িক কারণে আমাদের টাওয়ারগুলো তৃতীয় পক্ষের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। কারণ আমরা জানি আমরা টাওয়ারগুলোকে সেভাবে সামলে রাখতে পারব না। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের গ্রাহক কী চায়, টেলকো অপারেটর হিসেবে আমরা খুব ভালোভাবে সেটা বুঝি। আমরা বিশ্লেষণও খুব ভালো করতে পারি। প্রোডাক্ট ডিজাইনেও আমরা ভালো, ব্রান্ডিং এবং পরিবেশনেও (ডিস্ট্রিবিউশন) আমরা ভালো। কিন্তু একটি টাওয়ার কোম্পানি চালানোর জন্য আমরা ভালো নাও হতে পারি। ওটা একটা বিশেষায়িত কাজ, যেখানে শত শত কর্মীকে মাঠে থাকতে হয়- জেনারেটরগুলো ঠিকভাবে চলছে কি না, ব্যাটারিগুলো ঠিক আছে কী না এসব নিশ্চিত করার জন্য। ওটা একটা ভিন্ন মাইন্ডসেট। তাই আমরা আমাদের টাওয়ারগুলোকে ছেড়ে দিয়েছিলাম, কেউ এর জন্য আমাদের চাপ দেয়নি।

এই নমনীয়তা থাকলে আমি সেরা মানের সেবার নিশ্চয়তা দিতে পারি। আমরা যদি দেখি তৃতীয় পক্ষ আমাদের সেরা সেবাটা যথাযথ মূল্যে দিচ্ছে, তাহলে আমরা অবশ্যই সেটা গ্রহণ করব। আবার যদি মনে হয়, সেটা আমরাই তাদের চেয়ে ভালো পারি, তাহলে সেটা আমরা নিজেরা করব। এই নমনীয়তার জায়গাটা আমরা চাই।

গত নভেম্বরে এক মাসে দুইবার ডেটার দাম নির্ধারণ করতে হয়েছিল অপারেটরগুলোকে। এটা কী গ্রাহক সংখ্যা বা আয়ে কোন প্রভাব ফেলেছিল?

রাজীব: আমি যদি গ্রাহকের দিক থেকে দেখি, তারা এটা পছন্দ করেননি। আমাদের অনেকেই আছেন ৫০ বা ১০০ টাকা বেশি দিয়ে সেবাটি নিতে পারেন। কিন্তু আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে রিকশাচালক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ রয়েছেন। এখন রিকশাচালকরাও একটি স্মার্টফোন রাখতে পারছেন। আর আমরা মনে করি, স্মার্টফোনের ওপর অন্যদের চেয়ে তাদের নির্ভরতা অনেক বেশি। কারণ আমাদের অনেকের বাসায় টিভি আছে, কম্পিউটার আছে বা আমাদের ব্যস্ত থাকার ও বিনোদনের অনেকগুলো উপায় আছে। কিন্তু ওই ব্যক্তির কাছে তার ফোনটিই হল দুনিয়া দেখার একমাত্র জানালা। বারবার দাম নির্ধারণে তিনি বিরক্ত হতে পারেন। বলতে পারেন, ‘ওহ আমি যে ডেটা প্যাক গতকাল কিনেছিলাম, সেটা আজ আর নেই।’ তারপর তিনি হয়ত নতুন প্যাকেজে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করলেন। দুই সপ্তাহের মাথায় আবারও পরিবর্তন ভালো নয়।

আমি মনে করি এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক বাজার। এখানে তিনজন প্লেয়ার সার্বক্ষণিক সেরা দাম ও সেরা সেবা দিতে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। আপনারা এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। বাজার তার পথ নির্ধারণ করবে।

সম্প্রতি একটি মোবাইল অপারেটর ৮৫০ মেগাহার্জ স্পেক্ট্রাম বরাদ্দ চাওয়ার পর তা নিয়ে টেলিকম খাতে আলোচনা চলছে। আপনারা কী ভাবছেন।

রাজীব: যেহেতু ডেটার চাহিদা বাড়ছে, তাই আরও বেশি বেশি স্পেক্ট্রাম সবারই লাগবে। এখন ৮৫০ ব্যান্ডে স্পেক্ট্রাম বরাদ্দ চাওয়ার যে বিষয়টা, মানে যেভাবে বিষয়টা এসেছে… এখন যদি ৮৫০ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তবে সেটা আমাদের বর্তমান ব্যান্ডে বড় ইন্টারফেয়ারেন্স তৈরি করবে। আমাদের যে গ্রাহকরা আছেন, তাদের ভয়েস কলের অভিজ্ঞতাও খারাপ হয়ে যাবে। ভয়েস কলের মান পড়ে যাবে, কল ড্রপ বেড়ে যাবে, কারণ কেউ একজন ৮৫০ ব্যান্ডের মেগাহার্জ ব্যবহার করছে। আমি মনে করি এটা কারো জন্যই ভালো হবে না। আমার মাথায় এই সমস্যার একটা ভালো সমাধান রয়েছে। যেহেতু কেউ একজন ৮৫০ ব্যান্ড চাচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে স্পেক্ট্রাম বরাদ্দ আবারও নতুন করে সাজানো যেতে পারে। আমাদের বর্তমান স্পেক্ট্রাম আমরা তাদেরকে দিয়ে দেব যারা ৮৫০ ব্যান্ড চাচ্ছে, আমরা আরও ওপরের ধাপে যেতে পারি যাতে আমাদের কারো গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কেউ যদি এই সমস্যাগুলো নিয়ে ৮৫০ এ যেতে চায়, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত, আমি এতে মন্তব্য করছি না। আমি মনে করি বিটিআরসি সকলকে নিয়েই সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ এটা কোনো অপারেটরের একার বিষয় নয়। এতে লাখ লাখ গ্রাহকের ওপর প্রভাব পড়বে, সেটা কেউ চায় না।

কলড্রপসহ ভয়েস কলের বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রাহকের একটি সাধারণ অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আপনারা কী করছেন?

রাজীব: হ্যাঁ, কল ড্রপ হয়, এটা রেডিও সিগন্যালের চরিত্রের কারণে। আমরা রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করি। এটা ফিক্সড লাইন না। এই সিগন্যাল শতভাগ নির্ভরযোগ্য নয়। এই প্রযুক্তির ধরনটাই এরকম। তবে কলড্রপের একটা গ্রহণযোগ্য সীমা আছে, যেটা বৈশ্বিকভাবেই স্বীকৃত। আপনি যদি সেই গ্রহণযোগ্য সীমার নিচে থাকেন, তাহলে আপনি বলতে পারবেন যে গ্রাহকদের আপনি ভালো সেবা দিচ্ছেন। তারপরও কোথাও কোনো গ্রাহক কলড্রপের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারেন।

আমাদের কলড্রপের হার এখন শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম। তার মানে প্রতি দুইশ কলে একটা কল ড্রপড হতে পারে। এটা আমাদের টেলকো খাতের সেরা। কয়েক মাস আগে যখন আমরা বিটিআরসিকে কলড্রপের বিষয়টি জানালাম, তারা আমাদের সেটা আবারও চেক করতে বলেছিল। কলড্রপের এত ভালো একটা সংখ্যা দেখে তারা ‘শকড’। আমরা এটার জন্য খুবই খুশি।

এরপরেও আমরা কাজ করছি। নিকট অতীতে আমরা ভোল্টি (ভয়েস ওভার এলটিই) প্রযুক্তি এনেছি। এটা গ্রাহকদের উন্নততর কলের অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। এটা এইচডির মত ভয়েস কোয়ালিটি নিশ্চিত করে। কলড্রপও কমেছে।

রবি নতুন নতুন সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলছে। আরও খোলার চিন্তা আছে?

রাজীব: আমি মনে করি না আমাদের আর সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খোলার প্রয়োজন আছে। আপনাকে নতুন নতুন কোম্পানি খোলার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে পারি। দেখুন, আমি যদি শুধু টেলিকম কানেক্টিভিটি ব্যবসার কথা বলি, তাহলে আপনি কিংবা আমি হলাম এর প্রান্তিক গ্রাহক, যারা তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ফোন ব্যবহার করে থাকে। এর বাইরে আমাদের বিভিন্ন উদ্যোক্তা গ্রাহকও রয়েছে। যেমন: ওয়ালটন, প্রাণ বা কোনো ব্যাংক, যাদের প্রয়োজনটা একটু ভিন্ন রকম। তাদেরও কানেক্টিভিটি প্রয়োজন, কিন্তু আরও বিভিন্ন রকম সলিউশন প্রয়োজন হয় তাদের। তাদের চাহিদাটা গণমানুষের চাহিদার চেয়ে একটু ভিন্ন। তাই তাদের জন্য ভিন্ন রকমের মন, ভিন্ন রকমের সংগঠন ও দক্ষতার প্রয়োজন হচ্ছে, যা কোর টেলিকম ব্যবসার চেয়ে আলাদা।

তাই আমাদের মনে হল, এরকম গ্রাহকদের জন্য আমাদের নতুন কোম্পানি খোলা উচিত যা শুধু ওই গ্রাহকদেরই সেবা দেবে। তাদের জন্য আমরা ডেটা সেন্টার, ক্লাউড সার্ভিসসহ বিভিন্ন সেবা দিচ্ছি। কোর টেলকো ব্যবসার মধ্যে ওই গ্রাহকদের বিষয়টা ততোটা মনোযোগ পায় না। আমি মনে করি আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশে এন্টারপ্রাইজ গ্রাহকদের ব্যবসায় প্রচুর সুযোগ তৈরি হবে। আমি যদি ভারতের কথা বলি, সেখানে আমাদের শেয়ার হোল্ডার এয়ারটেলের এন্টারপ্রাইজ বিজনেস আছে। গত পাঁচ বছরে তাদের এন্টারপ্রাইজ ব্যবসা তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে।

সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছে। আপনারা কীভাবে এতে ভূমিকা রাখতে চান?

রাজীব: আমাদের এখানে যে মেধা আছে, তা অনন্য। তাদের বিকাশের সুযোগ আমাদের করে দিতে হবে। এর সঙ্গে আমি বলব স্মার্ট রেগুলেশন্স এর কথা। এগুলো একসঙ্গে হলে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনের পথে কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

আমাদের দিক থেকে আমাদের যেটা করার, আমরা করছি- সেটা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ। এ বছরই আমাদের নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বাড়ানো জন্য প্রচুর বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। গত বছর আমরা গ্রাহকদের ডেটা ব্যবহারে সেরা অভিজ্ঞতাটা দিতে পেরেছি। আমি আপনাকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছি, রবি এখন ডেটার সেরা অভিজ্ঞতাটা গ্রাহককে দিচ্ছে। আমরা এই খাতে আরও বিনিয়োগ করে যাব।

আমরা বিশ্বাস করি, কোম্পানি হিসেবে আমাদের একটা লক্ষ্য হচ্ছে অর্থ উপার্জন। সেজন্য আমরা ব্যবসায় আছি, সেটা একটা বিষয়। কিন্তু টেলিকম খাতের মূল লক্ষ্য কিন্তু সমাজে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা।

আমি সাবান, শ্যাম্পু, সিগারেট যে কোনো কিছুই বেচতে পারি। আমি কাউকে খাটো করছি না। কিন্তু টেলিকম খাত সব সময় মানুষকে ছুঁয়ে থাকে। আর আমরা সে সমস্ত মানুষের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিতে চাই, যারা সুযোগবঞ্চিত।

আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারি মাদ্রাসার ছাত্রীদের কথা। তাদের জন্য একটা প্ল্যাটফরম করতে পেরে আমরা খুবই খুশি। আমি বলব, আমাদের আরো কিছু করা উচিত তাদের জন্য। আমরা সবার জন্য একটা ভালো প্ল্যাটফরম করেছি। তোমার যদি ভালো আইডিয়া থাকে, তাহলে তুমি বগুড়া কিংবা সিঙ্গাপুর যেখানেই থাকো না কেন, সেটার সুযোগ নিতে পারো।