সরকার পতনের পর বিভিন্ন ব্যাংক নিয়ে গুজব ও গুঞ্জনে ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখা বন্ধ করে দেয় গ্রাহক। উল্টো অনেকে এসব ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে থাকেন।
Published : 15 Oct 2024, 12:43 AM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও সরকার পতনের ডামাডোলের মাসে ব্যাংকে গ্রাহকরা টাকা রেখেছেন কম; এক মাসের ব্যবধানে অগাস্টে আমানত কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
আগের বছর ২০২৩ সালের একই সময়ে অর্থাৎ জুলাই থেকে পরের মাস অগাস্টে আমানত বেড়েছিল ২৩ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত ব্যাংক খাতে আমানতের হালনাগাদ তথ্য বলছে, অগাস্ট শেষে ৬১টি ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। জুলাইয়ে যা ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ১০ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা, শতকরা হিসাবে কমেছে শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এর অর্থ ওই মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে। জুলাই শেষে ব্যাংকের বাইরে টাকা ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। অগাস্টে তা ১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্ষমতার পালাবদলের পর ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়ে। বিশেষ করে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট তৈরি হয়। সরকার পতনের পর এসব ব্যাংক নিয়ে গুজব ও গুঞ্জনে ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখা বন্ধ করে দেয় গ্রাহকরা। উল্টো অনেকে এসব ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে থাকেন। এর প্রভাব পড়েছে আমানত সংগ্রহে।
তার ভাষ্য, ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ওপর এ সময়ে মূলত ইসলামী ধারার ব্যাংক এবং এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকে গ্রাহকের টাকা জমা না রাখার প্রভাব পড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অগাস্টে সরকার পতনের পর ব্যাংকিং খাতের আমানতের ওপর প্রভাব পড়ে। সেসময় অনেক ইসলামী ধারার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ধারণা করে গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করেছেন। তাতে আমানত অনেক কমে যায়। তবে বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকগুলোর ওপর আস্থা বাড়ছে। ব্যাংকে আমানত ফিরছে।"
বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ওপর অনেকদিন ধরেই এক রকম অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। সরকার পতনের পর জনমনে ভীতি তৈরি হয়েছিল এসব ব্যাংকের টাকা পাওয়া যাবে কিনা। সে জন্যই গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করেছে।"
নানা অনিয়মের মাধ্যমে এসব ব্যাংকের অনেক বড় রকম ক্ষতি করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কারণ আগে যে গ্রুপ এ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করত তারা নামে বেনামে ঋণ নিয়েছে কিন্তু আর ফেরত দেয়নি। তাতে এসব ব্যাংকের আর্থিক খাতের অবস্থা অবনতি হয়েছে।"