করোনাভাইরাস: আম নিয়ে হতাশা চাঁপাইনবাবগঞ্জে

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 8 May 2020, 10:14 AM
Updated : 8 May 2020, 10:14 AM

আমের রাজধানী হিসাবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা করোনাভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমের বিকিকিনি নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীর প্রধান অর্থকরী কৃষিপণ্য। সারা বছর ব্যস্ত থাকেন বাগান পরিচর্যার কাজে আম ব্যবসায়ী ও মালিকরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

এখনো বাজারে আম আসতে ২০-২৫ দিন সময় লাগবে। এরই মধ্যে রোজার মাসও শেষ হয়ে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এখান থেকে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এসব আমের মধ্যে রয়েছে খিরসাপাত (হিমসাগর), খুদি খিরসা, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি, আশ্বিনা, বোম্বে খিরসা, মধু চুষকি, সাটিয়ার কেড়া, বৃন্দাবনী, টিক্কাফারাস, কালিভোগ, রানিভোগসহ নাবী জাতের আম রয়েছে। তবে খিরসাপাত, ল্যাংড়া ও ফজলি।

কানসাট বাজারের আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিক মো. রাসেল বলেন, "আমের ফলন মোটামুটি ভালোই রয়েছে । তবে আড়তদার ও ব্যাপারিদের (পাইকারি ক্রেতা) মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য নেই।

"প্রতি বছর এসময় এশিয়ার বৃহৎ আমের বাজার কানসাটে আমের আড়তে বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারিদের (পাইকারি ক্রেতা) আনাগোনা লক্ষ্য করা গেলেও, এবার চোখে পড়ার মতো নয়।"

অনলাইনে আম বিক্রি করা তরুণ উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন,  "আমার 'চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাজার' ও 'চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম' নামে দুটি ফেইসবুক পেজ এবং একটি ওয়েবসাইট রয়েছে আম ব্যবসার জন্য।

"অন্যান্য বছর আমের ভালো ব্যবসা হলেও এ বছর শঙ্কিত। কারণ, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে অনলাইনে আমের ব্যবসা কেমন‌ হবে তা বলা মুশকিল।"

অনেক আম ব্যবসায়ী বিদেশে আম রপ্তানির জন্য সারা বছর ধরে আম পরিচর্যা করে আসছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বিদেশে আম রপ্তানি করা না গেলে আম ব্যবসায়ীদের অনেকেই পুঁজি হারিয়ে পথে বসবে বলেই আশঙ্কা তাদের।

আম গবেষণায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারিভাবে গড়ে উঠেছে ' আম গবেষণা কেন্দ্র' ও হটিকালচার সেন্টার। বেসরকারিভাবে আম ব্যবসায়ী ও মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে। কিন্তু কেউ এই পরিস্থিতি নিয়ে আগাম কিছু বলতে পারছেন না। এতে আম ব্যবসায়ী ও মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও হতাশাগ্রস্ত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ক্ষেত্রে শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আয় করে থাকে। কেউ আম বাগানের যোগানদার, কেউ আম পরিচর্যায় নিয়োজিত থাকে, কেউ গাছ থেকে আম পাড়েন, কেউ বা আমের ঝুঁড়ি বা টুকরি ও কার্টুন তৈরি করেন, কেউ হোটেল ব্যবসা করে পর্যাপ্ত আয় করে থাকেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পাঠানো জনপ্রিয় মাধ্যম হওয়ায় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়।

এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানালেন আশার কথা।

তিনি বলেন,  "করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলের আম বাজারজাতকরণে যাতে কোনো রকম সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেজন্য ইতোমধ্যে পুর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।"

একাধিক আম চাষী ও ব্যবসায়ী বলেন, রোজার ঈদের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আম পাঠানো শুরু হবে।