দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রাচীন জয়সঙ্কর জমিদার বাড়িটি অযত্ন আর অবহেলায় বিলুপ্তির পথে রয়েছে। উপজেলার শেষ প্রান্তে জয়গঞ্জ বাজারের কাছে অবস্থিত এ জমিদার বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। যা বর্তমানে গরু, ছাগল রাখা এবং আবর্জনা ফেলার স্থানে পরিণত হয়েছে।
আনুমানিক ৮০ থেকে একশ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া এই জমিদার বাড়ির দুটি ভবনের মধ্যে একটি ভেঙে গেছে। অপরটিও নষ্টের পথে। বাড়ির দেয়ালের নকশা এবং ইটগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে অজানা দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয়রা জানায়, জমিদার বাড়ির চারপাশে গৃহহীনদের জন্য সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে 'আদর্শ গ্রাম'। জমিদার বাড়ির চারপাশের ভূমি এবং তিনটি পুকুর এসব আদর্শ গ্রামের লোকরাই ব্যবহার করেন। কিন্তু জমি ও পুকুর ব্যবহার করলেও মূল জমিদার বাড়িটির দিকে নজর নেই তাদের। তারা বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলা আর গৃহপালিত পশু রাখার কাজে ব্যবহার করেন বাড়িটি।
অভিযোগ আছে, জয়সঙ্কর জমিদার বাড়ির দালানের ইটগুলো গোপনে অনেকেই খুলে নিচ্ছে। ফলে বিলুপ্তির হুমকিতে পড়েছে জমিদার বাড়িটি। কিন্তু বাড়িটি রক্ষায় সরকার থেকে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, জমিদার বাড়িটি তিনটি নামে পরিচিত- 'খানসামা জমিদার বাড়ি', 'খানসামার জয়সঙ্কর জমিদার বাড়ি' ও 'জয়গঞ্জ জমিদার বাড়ি'। তবে ঠিক কোন সময়ে এটি প্রতিষ্ঠিত এবং এর প্রতিষ্ঠাতা কে তা ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়নি। স্থানীয়রা সর্বশেষ জমিদার জয়সঙ্করের নামানুসারে একে ডাকেন জয়সঙ্কর জমিদার বাড়ি নামে। এই জমিদারের নামানুসারেই পার্শ্ববর্তী জয়গঞ্জ বাজারটিও গড়ে ওঠে। এই জয়সঙ্কর জমিদার বাড়ি থেকেই শাসন করা হত পার্শ্ববর্তী জয়গঞ্জ, আলোকঝাড়ী, ধর্মপুর, সহজপুর, চুন্ডীপুর, শুশুলিসহ আশপাশের এলাকা।
আলোকঝাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শাহিনুর রহমান বলেন, "আমরা শুনেছি জয়সঙ্কর জমিদার হিসেবে তেমন একটা ভালো মানুষ ছিলেন না। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার-নিপীড়ন করতেন। দিনাজপুরের রাজা দেবত্তর তাই জয়সঙ্করকে পরাজিত করে এখান থেকে বিতাড়িত করেন।"
তবে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেননি।
ইতিহাসের বর্ণনা যাই হোক, এখানে একটা ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা আছে- এটাতো বাস্তবতা। তাই ইতিহাসের এসব প্রাচীন সাক্ষীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা দায়িত্ব সরকারের। তাই খানসামা উপজেলার জয়সঙ্কর জমিদার বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।