৭ মার্চ ১৯৭১: ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’

এল ঐতিহাসিক সাতই মার্চ। শোষণমুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালির স্বাধীনতার ডাক এসেছিল ১৯৭১ সালের এই দিনে।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2021, 02:20 AM
Updated : 7 March 2021, 02:20 AM

বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে স্থবির ছিল ঢাকা। এদিনের কর্মসূচি ঘিরে শুরু থেকেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে- বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেন।

পূর্ব পাকিস্তান তখন কার্যত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে সকাল থেকেই লাখো জনতা সমবেত হতে থাকেন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। ঢাকার আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাঙালিরা এসেছিলেন তার ভাষণ শুনতে।

বেলা সোয়া ৩টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাস্থলে উপস্থিত হন। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও কালো কোট (মুজিব কোট) পরিহিত শেখ মুজিব মঞ্চে এসে দাঁড়ালে জনতা করতালি ও ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানের মধ্য দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানায়।

তৎকালীন রেসকোর্সের জনসমুদ্রে ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরে সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমরা যখন মরতে শিখেছি; কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।

“রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়- ‘তারপর থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের’।

বঙ্গবন্ধু আহ্বান জানালেন, “প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।”

তিনি ঘোষণা করেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।… আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, আমি যদি হুকুম দিতে নাও পারি- তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।”

জনতার কণ্ঠে তখন উচ্চারিত হচ্ছিল শ্লোগান, ‘জাগো জাগো- বাঙালি জাগো’, ‘পাঞ্জাব না বাংলা- বাংলা বাংলা’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো- বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার  দেশ আমার দেশ- বাংলাদেশ’।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ সম্প্রচার করা হবে, এমন ঘোষণায় সারা বাংলায় শ্রোতারা অধীর আগ্রহে রেডিও নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে বেতারে দেশাত্মবোধক গান প্রচার চলছিল।

‘ঢাকা বেতারে’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার না করার প্রতিবাদে বাঙালি কর্মচারীরা কাজ বর্জন করেন এবং ৭ মার্চ বিকেল থেকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সব অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।

গভীর রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রচারের অনুমতি দিলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিয়ে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার আবার চালু হয়।

সেই রাতেই আওয়ামী লীগ ১০ দফার ভিত্তিতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। টিক্কা খান ঢাকায় আসেন। বিভিন্ন স্থানে বাঙালি-অবাঙালি সংঘর্ষ ও সামরিক বাহিনীর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাপ্রবাহ এগোতে থাকে চূড়ান্ত লগ্নের দিকে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইট, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশমাস’।