রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে দেওয়া উচিত: শাজাহান খান

“৫৩ বছর পরে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা যে কি কঠিন কাজ তা আমরা যারা এই কাজে যুক্ত তারা বুঝতেছি”, বলেন কমিটির প্রধান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2024, 03:52 PM
Updated : 25 March 2024, 03:52 PM

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করা রাজাকারদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করার মত অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তালিকা প্রণয়ন কমিটির প্রধান শাজাহান খান।

দেড় শতাধিক উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে করা হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মনে হয় আমরা যা হাতে পেয়েছি তা প্রকাশ করে দেওয়া উচিত। প্রকাশ করার মতো অবস্থায় আমি তৈরি করে রেখেছি।”

সোমবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেড বাঙালির বীরত্বের গৌরবগাঁথা’ শীর্ষক আলোচনায় সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ কথা বলেন।

আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড উদ্‌যাপন কমিটি’। তারা ৭ বছর ধরে এ আয়োজন করা আসছে।

শাজাহান খান বলেন, “৫৩ বছর পরে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা যে কি কঠিন কাজ তা আমরা যারা এই কাজে যুক্ত তারা বুঝতেছি।”

আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় ফিরে রাজাকারের তালিকা করার ঘোষণা দিয়েছিল। ২০১৯ সালের বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ তালিকা প্রকাশ করেন।

ওই তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য ওই তালিকা স্থগিত করা হয়।

পরে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরির সুযোগ রেখে ২০২২ সালের ২৯ অগাস্ট ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ সংসদে পাস হয়।

রাজাকার, আলবদর এবং আলশামসের তালিকা প্রণয়ন উপকমিটির সভাপতির পাশাপাশি এ বিষয়ে মন্ত্রিসভা কমিটিরও সভাপতি হন শাজাহান খান। পাশাপাশি তিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিরও সভাপতি।

আগের দিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রাজাকারের তালিকা প্রকাশ বিষয়ে এক প্রশ্নে বলেন, তার হাতে এটি এখনো এসে পৌঁছেনি।

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, “এটার (রাজাকারের তালিকা) জন্য আগের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী জনাব শাজাহান খান সাহেবের নেতৃত্বে একটা ক্যাবিনেট কমিটি করে দেওয়া হয়েছে এবং আরও অনেক আছেন। উনাকে আহ্বায়ক করে এটা করা হয়েছে যে… রাজাকারের সংজ্ঞা এবং তালিকা প্রণয়নের জন্য।

“আমি যতটুকু জানি, অদ্যাবধি আমাদের কাছে উনারা তালিকা হ্যান্ডওভার করেননি, হস্তান্তর করেনি… কোনো লিখিত তালিকা আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। সেজন্য তালিকার বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা বলতে পারছি না। আমি মনে করি, শাজাহান খানের কাছ থেকে এই বিষয়ে আপনারা শুনলে ভালো হয়।”

তবে শাজাহান খান বলেন, “আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, আমরা এই তালিকা আংশিক প্রকাশ করব নাকি সম্পূর্ণ প্রকাশ করব। এখন যদি সিদ্ধান্ত হয় এভাবেই প্রকাশ করার, তাহলে এভাবেই প্রকাশ করা যাবে। আমি সেভাবেই তৈরি করে রেখেছি।”

মন্ত্রীর সঙ্গে এই আলোচনা কবে হয়েছে, তা অবশ্য বলেননি তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতা প্রশ্ন তোলেন জিয়াউর রহমান, খালেদা ও এরশাদ আমলে কেন এই তালিকা করা হয়নি। পরে তিনি বলেন, “তারা করেনি, কারণ, এ তালিকায় তাদের অনেকের নাম চলে আসবে।”

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “১৯৭৫ সালের পর ২১ টি বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল। পরে বিএনপি আর তত্ত্বাবধায়ক আমলে ছিল আরও সাত বছর। এই সময়টাতে বাংলাদেশের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত একাত্তর নিয়ে বলে, এত পেছনে গিয়ে লাভ কী? তারা এই সমস্ত কত ভণ্ডামি করে।

“বিএনপির গয়েশ্বর রায় বলেছেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা আহাম্মক। তারা বাড়িতে ছিল কেন?’ আবার বললেন, ‘৩০ লক্ষ মানুষ নিহত হয় নাই। বঙ্গবন্ধু নাকি ভুল করে ৩ লক্ষের জায়গায় ৩০ লক্ষ বলে ফেলেছেন।’ এই সমস্ত কথা বলে ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।”

সভাপতির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রির স্মৃতিচারণ করে বলেন, “ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এই ফার্মগেট দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ভাবিনি এত বড় জান্তা বাহিনীকে ব্যারিকেড দিয়ে ২০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখতে পারব।”

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে বাধাগ্রস্ত করতে সড়কে ব্যারিকেড দেওয়া হয় ফার্মগেট এলাকায়। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে অসংখ্য নেতাকর্মী এতে অংশ নেয়।

চিত্রনায়ক মহিউদ্দিন আলমগীর বলেন, “সেখানে আমিও ছিলাম। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করেছিলাম সেই স্মৃতি এখনও মনে পড়ে”।

তিনি ও অন্যান্য বক্তারা ফার্মগেটে ২৫ মার্চ ব্যারিকেড বিষয়ক একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও আসাদুজ্জামান খানের নামে সড়কের নামকরণের দাবি জানান।

এ দাবির প্রেক্ষিতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব।”

আরও পড়ুন:

Also Read: রাজাকারের তালিকা কতদূর? যা বললেন মোজাম্মেল হক

Also Read: রাজাকারের তালিকা প্রকাশ আগামী বছরের মার্চে: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

Also Read: রাজাকারের তালিকা করবে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল: বিল পাস