পুলিশ সুপার ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। তবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে নেত্রকোণার কেন্দোয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা দুটি মামলায়।
Published : 09 Sep 2024, 11:23 PM
গাজীপুর ও সাভারে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের মধ্যে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার মধ্যে ছাত্রলীগের এক নেতাকে নেত্রকোণা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ইসতিয়াক আহম্মেদ হৃদয় নামে সেই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে পোশাক কারখানায় ‘নাশকতার মাধ্যমে’ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ‘উসকানি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বিস্ফোরক আইনে করা দুটি মামলায়।
হৃদয় ছাত্রলীগের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির অন্তর্গত নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা কমিটির শিক্ষা ও পাঠ্যক্রম বিষয়ক সম্পাদক বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারবাড়ী এলাকার বাসিন্দা।
হৃদয়কে রোববার রাতে কেন্দুয়া থেকে গ্রেপ্তার করার পর সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেত্রকোণার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উদ্দেশে উসনিমূলক বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল হন ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ হৃদয়।
“তাকে কেন্দুয়া থানায় বিস্ফোরক আইনে দুইটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ নেত্রকোণা বিচারিক আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।”
তুমুল গণআন্দোলনের মধ্যে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠীর নানা দাবি নিয়ে রাজপথে নামার পর এবার পোশাক ও ওষুধ শিল্পেও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গাজীপুর ও সাভারে শিল্প এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে প্রতিদিনই বিভিন্ন কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে হচ্ছে।
হঠাৎ করেই তৈরি শিল্প শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এমন কিছু দাবি উঠছে, যা এর আগে কখনও শোনা যায়নি।
দাবি উঠেছে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা সমান হতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্প বড় হয়ে ওঠার পর থেকেই নারী শ্রমিকের প্রাধান্য ছিল, কখনো এ নিয়ে আপত্তি ওঠেনি। হঠাৎ এমন দাবি নিয়ে বিস্মিত এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
গত জানুয়ারি থেকে নতুন মজুরি কাঠামো মেনে নিয়েই কাজ চলছে, সাত মাস যেতে না যেতেই বেতন বাড়ানোর দাবি উঠছে, মজুরি কাঠামোতে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির কথা উল্লেখ আছে, এবার সেই বেতন বৃদ্ধি ১৫ শতাংশ করার কথা বলা হচ্ছে, এমন কথাও কেউ কখনো শোনেনি।
বিক্ষোভ ও আন্দোলনের সুযোগে কারখানা ভাঙচুর ও লুটের চেষ্টাও হচ্ছে।
গত ৫ অগাস্ট গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হামলার কারণে পুলিশের সক্ষমতা এমনিতেই অনেক কমে গেছে।
আন্দোলনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ ওঠার পর নতুন পরিস্থিতিতে পুলিশও কোনো রকম সংঘাতে যাচ্ছে না। এমন সময়ে শ্রমিক বিক্ষোভ অনেকটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরাও অনেকটা বিভ্রান্ত। কিন্তু তারা পথে নামছে, একেকটি কারখানায় যাচ্ছে, শ্রমিকদের বের করে আনছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ও শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা হিল রাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে আমরা কাজ করছি। তাদের তেমন কোনো যৌক্তিক ও সুনির্দিষ্ট দাবি নেই। শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসেছি, তারাও বলছে সুনির্দিষ্ট দাবি নেই। তারপরও কিছু আন্দোলনের চেষ্টা হচ্ছে। শুক্রবার তো কারখানা বন্ধ। এবার দেখি শনিবার কী হয়।”
এই পরিস্থিতিতে শিল্প মালিকরা দেখা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। সচিবালয়ে পাঁচ উপদেষ্টার বৈঠকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথাও জানানো হয়েছে। তবে শনিবার থেকে পোশাক কারখানা খোলার পর থেকে আবার শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
হঠাৎ শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্যে কী?
শ্রমিক আন্দোলনে 'ভাড়াটে টোকাই': উপদেষ্টাদের 'বল প্রয়োগের' বার্তা
কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও অসন্তোষ, আশুলিয়ায় ৭৯ কারখানায় ছুটি