বিজয়ের দিনে প্যারেড ময়দানে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ

এই কুচকাওয়াজে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন শাখা ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির তথ্য জানানো হয় অতিথিদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2022, 08:32 AM
Updated : 16 Dec 2022, 08:32 AM

স্বাধীনতাযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তিতে জাতীয় প্যারেড ময়দানে হল সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ; অভিবাদন মঞ্চ থেকে সালাম গ্রহণ করলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

শুক্রবার সকালে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড ময়দানে এই কুচকাওয়াজে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন শাখা ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির তথ্য জানানো হয় অতিথিদের।

সকাল সাড়ে ১০টার আগে আগে ঘোড়সওয়ার সজ্জিত মিলিটারি পুলিশের মোটর শোভাযাত্রায় প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তিন বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তাকে অভ্যর্থনা জানান।

এর আগে ১০টা ২৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারেড মাঠে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা। প্রধানমন্ত্রীর জন্য মিলিটারি পুলিশের মোটর শোভাযাত্রার সম্মুখভাগে ছিল কাতার সরকারের উপহার দেওয়া আরবী ঘোড়া।

প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে অভিবাদন মঞ্চে যান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন নেন ভিভিআইপি গ্যালারিতে। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ এবং নাতনি সামা হোসাইনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল হামিদকে সম্মান জানিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। পরে অভিবাদন মঞ্চে ফিরে তিনি বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের আয়োজনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা সুসজ্জিতভাবে এই কুচকাওয়াজে অংশ নেন।

নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক ছিলেন এবারের কুচকাওয়াজের অধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা অভিবাদন মঞ্চে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন।

বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে প্যারেডে গ্রাউন্ড সাজানো হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের মাঝে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল একটি প্রতিকৃতি দিয়ে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাড়াও জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবিও ছিল।

অভিভাদন মঞ্চ আর গ্যালারির সজ্জায় ছিল পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল আর কর্ণফুলী টানেলের প্রতীকী উপস্থাপন।

কুচকাওয়াজের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা হয়, সুসজ্জিত বাহনে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়।

আকাশ থেকে ফ্রিফল জাম্পে পতাকা নিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরণ করেন প্যারা কমান্ডোরা। আর্মি এভিয়েশন, নেভাল এভিয়েশন ও র‌্যাব ফোর্সেস এর ফ্লাইপাই, দুঃসাহসিক প্যারা কমান্ডো সদস্যদের ফ্রিফল জাম্প কুচকাওয়াজকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।

 বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের মার্চ পাস্টের পর যান্ত্রিক বহরে সুসজ্জিত সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সমরাস্ত্র প্রদর্শন করা হয় কুচকাওয়াজে। তার পরপরই শুরু হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট এবং অ্যারোবেটিক ডিসপ্লে। বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্টের নেতৃত্ব দেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার।

কুচকাওয়াজে বিভিন্ন বাহিনীর মোট ২৩টি কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানায়। মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা গ্যালারি থেকে কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটাতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতার জন্য যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা সফল পরিণতি পায় নয় মাস পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।

সেদিন ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন যুদ্ধে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী।

তাই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস; বিশ্বের হাতেগোনা যে ক’টি দেশের স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি বিজয় দিবসের মতো উৎসবের উপলক্ষ রয়েছে, তার একটি বাংলাদেশ।