ছিটের ভেতরে ছিট: তাতেই অনিশ্চয়তা

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বাস্তবায়ন চূড়ান্ত রূপ পেতে শুরু করায় ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভেতরে আনন্দের ঢেউ বয়ে গেলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত নন ছিট চন্দ্রখানার বাসিন্দারা।

সুলাইমান নিলয় কুড়িগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2015, 03:11 PM
Updated : 11 May 2015, 05:30 AM

বাংলাদেশের মালিকানায় থাকা ব্যতিক্রমী এই ছিটমহলটির অবস্থান দাসিয়ার ছড়া নামে একটি ভারতীয় ছিটমহলের ভেতরে।

কুড়িগ্রাম সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে ফুলবাড়ী থানায়  ১ হাজার ৬৪৩ একর আয়তনের ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার লোকসংখ্যা প্রায় ৯ হাজার।

এরই মধ্যে শূন্য দশমিক ১৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চন্দ্রখানায় এখানে ৬৬ ঘর বাংলাদেশির বসবাস।

এ ছিটমহলের বাসিন্দা মো. রফিকুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের চারদিকে দাসিয়ার ছড়া আর দাসিয়ার ছড়ার চারদিকে বাংলাদেশ। চুক্তিতে বলেছে, বাংলাদেশের ছিটমহল ভারত পাবে আর ভারতের ছিটমহল বাংলাদেশ পাবে। তাহলে আমাদের কী হবে?”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি ও এর প্রটোকল বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ভেতর ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে। একইভাবে ভারতের ভেতর থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল হয়ে যাবে ভারতের ভূমি।

এই প্রক্রিয়ায় ছিটমহলবাসীরা তাদের জমিতে তাদের ভিটামাটিতে বসবাসের সুযোগ পাবেন। কাউকে স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে না। তবে তাদের জাতীয়তা বদলে যাবে।

তবে কেউ আগের জাতীয়তা বজায় রাখতে চাইলে তিনি আগের দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

২০১১ সালে ওই চুক্তির সময় করা এক জরিপে দেখা যায়, ছিটমহলগুলোর বাসিন্দাদের বেশিরভাগই তাদের ভিটামাটিতে থেকে যেতে চান। 

রফিকুল আলম

রফিকুল আলম জানান, তার ছিটমহলে ৩৩৩ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। ‘সীমান্তের চক্করে’ পড়ে সরকারি সুবিধা বলতে কেবল জাতীয় পরিচয়পত্রই তারা পেয়েছেন।

“আমাদের ছিটমহলটি যেহেতু ভারতের ছিটমহলের মধ্যে, তাই নাগরিক সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো দাসিয়ার ছড়ার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। আমরা তাই ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বাস্তবায়নের আন্দোলনে ছিলাম, এখনো আছি। কিন্তু আমাদের কী হবে-সে প্রশ্নটা আবার সামনে চলে আসছে।”

একই ছিটমহলের বাসিন্দা আক্কেল আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার নাতি খুব অসুস্থ হইল একবার। ছিটের বাসিন্দা হওয়ার কারণে কত যে ঝামেলা পোহাইতে হইল... আমরা এইটা চাই না।”

দাসিয়ার ছড়া আর চন্দ্রখানা, দুটি ছিটমহলই ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে হওয়ায় চুক্তি অনুযায়ী তা বাংলাদেশেই থেকে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ বিষয়টি কোথাও স্পষ্ট করে না বলা থাকায় চন্দ্রখানবাসীর দুশ্চিন্তা কাটছে না।

আক্কেল আলী বলেন, “এখন চারদিকে ভারতীয় ছিটমহল আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ভবিষ্যতে ভারত হয়ে আমরা বাংলাদেশের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে থাকতে চাই না। আমরা বাংলাদেশেই থাকতে চাই।”